সম্পাদকীয়

ধারাবাহিক বঞ্চনা

বাংলার প্রতি মোদি সরকারের বঞ্চনা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এই রোগের জন্ম অবশ্য কংগ্রেস আমলে। মোদি জমানায় বঞ্চনার ইতিহাস যেন অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যে সরকারি প্রকল্পগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রায় সব ক্ষেত্রেই তুচ্ছ অজুহাতে বছরের পর বছর টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে দিল্লি। এমনই এক প্রকল্প ১০০ দিনের কাজ। যেক্ষেত্রে গত তিন বছর ধরে কোনও টাকা দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। একইভাবে আবাস যোজনাতেও তিন বছর ধরে টাকা দেওয়া বন্ধ। এখন জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পর গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পতেও কোনও রাস্তা তৈরির অনুমোদন পায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। খবরে প্রকাশ, ২০২২ সালের নভেম্বরে গ্রামীণ সড়ক যোজনায় ৮৫৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল দিল্লি। ৫৪৮ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের মুখে। নিয়মমেনে এই খরচের একটি অংশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। ’২২-এর পরের দুটি অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রের কাছে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির অনুমোদন চায় রাজ্য। সরকারের অভিযোগ, গত দু’বছরে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরিরও অনুমোদন পায়নি বাংলা! অথচ নিয়মমেনে আগের সব কাজ শেষের শংসাপত্র (ইউসি সার্টিফিকেট) সহ অডিট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রের কাছে জমা করেছে রাজ্য। বাংলায় সড়ক যোজনার কাজ যাচাই করে দেখতে কেন্দ্র যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল, তারা কোনও গলদ তো খুঁজে পায়ইনি, উল্টে দিল্লি ফিরে গিয়ে রাজ্যকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে। তাহলে কোন গূঢ় কারণে সড়ক যোজনার অনুমোদন আটকে রাখা হয়েছে— তা খোলসা করছে না কেন্দ্র। আশ্চর্যের বিষয় হল, চলতি বছরের বাজেটে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-৪ প্রকল্পটি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য বাজেটে ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা খরচও ধরা হয়েছে। সড়ক যোজনা-৩ শেষ হওয়ার আগেই সড়ক যোজনা-৪ ঘোষণার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর সস্তা গিমিক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 
গ্রামীণ সড়ক যোজনার অন্তত এক বছর আগে থেকে ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকাও আটকে রেখেছে কেন্দ্র। টাকা না দেওয়ার কারণ হিসেবে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কেন্দ্রের দাবি মেনে দুটি প্রকল্পেই সংশোধিত তালিকা তৈরি করে তা পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। তবু বরফ গলেনি। কেন্দ্রের এই অনমনীয় মনোভাবে ১০০ দিনের প্রকল্পে ২৪ লক্ষ শ্রমিক এবং আবাস যোজনা প্রকল্পে ১১ লক্ষ উপভোক্তা চরম বিপদে পড়েন। এই দুটি প্রকল্প মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে বাংলার পাওনা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পাওনা আদায় নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার পর এখন শোনা যাচ্ছে, প্রকল্প দুটি নিয়ে জট কাটাতে নাকি উদ্যোগী হচ্ছে কেন্দ্র! কিন্তু কেন্দ্রের টাকা কবে আসবে সেই অপেক্ষায় বসে না থেকে গত মার্চ মাস থেকে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া অর্থ রাজ্যের তহবিল থেকে মেটাতে শুরু করেছে মমতা সরকার। আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির জন্য ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। দু’টি পর্যায়ে এই টাকা দেওয়া শুরু হবে ডিসেম্বর থেকে। এছাড়া আরও অনেক প্রকল্প আছে যার আর্থিক অনুদান থেকে রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করে রেখেছে কেন্দ্র। প্রকল্পের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেও সাহায্যের ব্যাপারে নীরব থাকছে কেন্দ্র— অভিযোগ রাজ্য প্রশাসনের। 
পরিবর্তন নয়, বরং বাংলার প্রতি বঞ্চনার ট্র্যাডিশনই যেন রক্ষা করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেসের শাসন ছিল, তখন রাজ্যে বাম সরকার বারবার দিল্লির বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সরব হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে সরকার পরিবর্তন হলেও রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার ধারাবাহিকতায় কোনও বিরাম ঘটেনি। বরং মোদি জমানায় তা আরও প্রকট হয়েছে। অথচ এই কেন্দ্রীয় সামাজিক প্রকল্পগুলি আইন মোতাবেক তৈরি। কোনও কারণ দেখিয়ে এই শর্তহীন অধিকার খর্ব করা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ম-বেনিয়মের জন্য টাকা দেব না—এমন দাবি বেআইনি ও অনৈতিক। এ রাজ্যের নাগরিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা দেওয়াটাও কেন্দ্রের আবশ্যিক কর্তব্য। এই দায় থেকে মুক্ত হতে পারে না কেন্দ্র। দায় অস্বীকার করাটা অধিকার ভঙ্গের শামিল। অথচ দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে চলেছে মোদি সরকার। আসলে এই বঞ্চনা যতটা না অন্যান্য কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। হয়তো মোদি-শাহরা চেয়েছেন, প্রকল্প নিয়ে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ করে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, প্রকল্পের উপভোক্তারা কেন্দ্রের বঞ্চনাকেই হাতিয়ার করে তাঁদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন। একবার নয়, বারবার। এই চরম সত্য থেকে তাঁরা যদি কোনও শিক্ষা নেন তাহলে মঙ্গল সকলেরই।
 
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

লাগাতার প্রচেষ্টার পর কর্মে অগ্রগতি। বিশেষ কোনও ক্ষেত্র থেকে বড় বরাত প্রাপ্তির যোগ আছে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৬১ টাকা৮৪.৭০ টাকা
পাউন্ড১০৭.৫২ টাকা১১০.৪৫ টাকা
ইউরো৮৯.৯৯ টাকা৯২.৬৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
1st     November,   2024
দিন পঞ্জিকা