সম্পাদকীয়

পেশাদারিত্ব তলানিতে!

একদা যে সংস্থার তদন্তের নামে অপরাধীদের বুকে কাঁপন ধরত, জনমানসে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, উঠতে বসতে আদালতে ভর্ৎসিত হওয়াটাই প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে সিবিআই! রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এই মামলায় ভূরি ভূরি তথ্য পেয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। অথচ তদন্ত চলছে তো চলছেই দেখে কয়েকমাস আগে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারপতি তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে বলেন, আপনারা বলছেন যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। তাহলে এত দেরি হচ্ছে কেন? স্পিডটা বন্দে ভারতের মতো করুন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রাথমিকে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। চার্জশিট পেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। আদালতের কথা না শুনে এমন অসম্পূর্ণ চার্জশিট পেশ করে আদালতকে অপমান করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারক। শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির মামলা মাত্র দশ সেকেন্ডে খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সরাসরি ভর্ৎসনা না করলেও শীর্ষ আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলে, সুপ্রিম কোর্টে আসতে ১৮১ দিন লেগে গেল! বস্তুত এই ভর্ৎসনা, ক্ষোভ প্রকাশের ইতিহাস বেশ লম্বা। 
কিন্তু এবার সর্বোচ্চ আদালতে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থাকে কালিমালিপ্ত করার কথাও শোনা গেল। ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা চলছে জেলা আদালতগুলিতে। মূল অভিযোগকারী বিজেপি। এই মামলাগুলি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই অভিযোগ করে, রাজ্যের আদালতগুলিতে শুনানির উপযুক্ত পরিবেশ নেই। পশ্চিমবঙ্গের সব আদালত বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ তোলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। অতএব উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মামলা গুয়াহাটিতে এবং দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মামলা ভুবনেশ্বরে সরানোর আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে। সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতি সিবিআইয়ের আইনজীবীকে তুলোধোনা করে বলেন, সিবিআই তো পশ্চিমবঙ্গের বিচার ব্যবস্থাকেই কলুষিত করতে চাইছে। সিবিআইয়ের হয়ে যিনি এই আবেদনের খসড়া তৈরি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তো আদালত অবমাননার নোটিস পাঠানো উচিত। তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই অভিযোগ খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে অনেকেরই ধারণা, পশ্চিমবঙ্গের আদালত প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের এই অভিযোগের পিছনে কেন্দ্রীয় শাসকদলের কারও কারও রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করেছে। 
এমনিতেই সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে ফের ‘খাঁচার তোতা’ বলে কটাক্ষ করেছে। রীতিমতো ক্লেশ মিশিয়ে বিচারপতি বলেছিলেন, ‘আপনাদের প্রমাণ করতে হবে আপনারা খাঁচার পাখি নন। খাঁচা থেকে মুক্ত।’ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন মামলায় সিবিআইকে খাঁচামুক্ত হয়ে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন বিচারপতি। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি জমানায় দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি যে বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে তার অজস্র প্রমাণ গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। ভোটের আগে সিবিআই-ইডির অতি সক্রিয়তা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে দেশের মানুষ। দেখা যাচ্ছে, সিবিআইয়ের দক্ষতা, পেশাদারিত্বেও যেন টান পড়েছে। এ রাজ্যে ঝড় তোলা আর জি কর মামলায় ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু তাঁরা এই খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় কীভাবে যুক্ত— তা এখনও নাকি জানতে পারেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা! এমনকী এই মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ঘটনার পরের দিনই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তার থেকেও নাকি গত ৪৩ দিনে কোনও পরিষ্কার স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি সিবিআই! অথচ সকলেই চাইছেন দ্রুত বিচার হোক। ফলে সাড়া ফেলে দেওয়া এই সিবিআই মামলা শেষ পর্যন্ত একটা ফ্লপ শো হতে চলেছে কি না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ শুধু এই রাজ্যে ২০ বছর আগের নোবেল চুরির ঘটনা থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে সারদা, নারদ, নিয়োগ কেলেঙ্কারি, খাদ্য দপ্তরে দুর্নীতি, কয়লা পাচার সহ একাধিক তদন্তের এখনও কিনারা হয়নি। বরং কালের গর্ভে তা বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাই সাধারণের চোখে সিবিআই কি এখন তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তে রাজনৈতিক হাতিয়ার, ভর্ৎসিত ও ব্যর্থ এক সংস্থা হতে চলেছে? 
20d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা