সম্পাদকীয়

দুয়োরানি

রিস ওলিম্পিকস শেষের পথে। তারপর হয়তো কোনও একদিন সেই অনিবার্য ছবিটা সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে। পদকজয়ীদের সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে ‘পোজ’ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। হয়তো সেদিন তিনি দাবি করবেন, এই সাফল্যের পিছনে তাঁর সরকারের অবদানের কথা। তুলে ধরতে পারেন ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর সরকারের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা। ওলিম্পিকসে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য কত টাকা ব্যয় করেছে সরকার, গর্বের সঙ্গে সে কথাও জানাতে পারেন। কিন্তু ১৪২ কোটির দেশ ভারত কেন একটিও সোনা পায় না (শনিবার পর্যন্ত), কেন কয়েকটা ব্রোঞ্জ আর দু’একটি রৌপ্য পদকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দেশকে, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কেন ওলিম্পিকসের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফ্রিকার হতদরিদ্র দেশগুলি অনায়াসে ভারতকে পিছনে ফেলে দেয়, কেন চীন-জাপানের মতো এই উপমহাদেশেরই দুই দেশ পদক প্রাপ্তিতে ভারতকে দশ গোল দেয়, নিশ্চিতভাবেই তার উত্তর পাওয়া যাবে না ‘অমৃতকালের’ ঢাক পেটানো প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু দেশের মানুষ জানেন, এই পরিণতি আসলে ক্রীড়াক্ষেত্রকে ‘দুয়োরানি’ করে রাখার ফল। কারণ ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। এর মধ্যেই যে কয়েকটি সাফল্য আসছে, তা একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। বাকি প্রায় সবটাই ব্যর্থতার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী বা দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী চুপ করে থাকলেও এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার দায় সরকার ধামাচাপা দিতে পারে না। খেলাধূলার উন্নতিতে খাতায়-কলমে দেশে তিনটি ক্রীড়াসংস্থা রয়েছে। স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল এবং খেলো ইন্ডিয়া। এই শেষেরটি মোদির সাধের প্রকল্প। ওলিম্পিকসের মতো আসরেও এই সংস্থার ভূমিকা বুঝিয়ে দিয়েছে খেলোয়াড়দের সাহায্য করা নয়, বরং বৈষম্যের রাজনীতিই তাদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর বিবৃতিতেই বৈষম্যের এই নগ্ন চেহারা উঠে এসেছে। ওলিম্পিকসে ভারতের প্রতিযোগীর সংখ্যা ১১৭। এর মধ্যে হরিয়ানার ২৪ জন এবং পাঞ্জাবের ১৯ জন রয়েছেন। পদক প্রাপ্তির তালিকাতেও এই দুই রাজ্যের প্রাধান্য বেশি। এই দুই রাজ্যকে অনুদান দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৬৬.৫৯ কোটি এবং ৭৮.২ কোটি টাকা। অথচ উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাত থেকে যথাক্রমে ৬ এবং ২ জন প্রতিযোগী থাকলেও ওই দুই রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হয়েছে যথাক্রমে ৪৩৮.২৭ কোটি এবং ৪২৬.১৩ কোটি টাকা! এই বৈষম্যের পরও প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো পদকজয়ীদের সঙ্গে হাসিমুখে ‘সেলফি’ তুলতে দেখা যাবে।
এই একটা উদাহরণই বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্র ও ক্রীড়াবিদদের কী চোখে দেখে সরকার। এ অবশ্য মোদি সরকারের নিজস্ব ‘রোগ’ নয়। বলা যায়, উপেক্ষার এই রোগে সংক্রমিত মোদি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। অথচ ওলিম্পিকসে ভারতের অভিযান শুরু সেই ১৯০০ সালে। সেবার দুটি পদকও পেয়েছিলেন ভারতের একজন প্রতিযোগী। স্বাধীনতার পর পদক জয়ের তালিকায় ২০২০ সালের টোকিও ওলিম্পিকস আপাতত ভারতের সেরা বিজ্ঞাপন। গতবার একটি সোনা সহ ৭টি পদক জিতেছিল দেশ। কিন্তু স্বাধীনতার পর ওলিম্পিকসে এ পর্যন্ত ভারত যতগুলি সোনা জিতেছে (৭টি), তা বিশ্বখ্যাত সাঁতারু মাইকেল ফেলপস-এর একার জেতা পদকের (২৩টি) ধারেকাছেও নয়। এবার ভারত এ পর্যন্ত ৬টি পদক পেলেও একটিও সোনা নেই। অথচ ৫৩টি দেশ ইতিমধ্যে সোনা জিতে নিয়েছে। পদক তালিকায় ভারতের স্থান এখন ৬৪তম।
আসলে গোড়ায় গলদ। এদেশে সরকারের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ক্রীড়ানীতিই নেই। যাঁরা খেলাটা জানেন, বোঝেন, প্রশাসনে তাঁদেরই দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে প্রায়শই রাজত্ব করেন ব্রিজভূষণের মতো অভিযুক্ত বা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকরা। আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় সাফল্য পেতে হলে তৃণমূল স্তর থেকে খেলার উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন। গোটা দেশজুড়ে প্রতিভাদের তুলে আনার পরিকল্পনা থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে কোনও বিশেষ ধরনের খেলায় সহজাত প্রতিভা মেলে। যেমন উত্তর ভারতে কুস্তি, জ্যাভলিন থ্রো, ডিসকাস থ্রো, শর্টপাট। উত্তরপূর্ব ভারত, মধ্যপ্রদেশের বনাঞ্চলে তিরন্দাজি, দক্ষিণ ভারতে স্বল্প দূরত্বের দৌড়, রাজস্থান সহ পশ্চিম ভারতে অথবা মহারাষ্ট্র-গুজরাতে দূরপাল্লার দৌড় ইত্যাদি। এই সহজাত প্রতিভার সন্ধান করে তাদের কৈশোর থেকেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে গড়েপিটে নিতে পারলে সাফল্যের মুখ অবশ্যই দেখা যাবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাই নেই এ দেশে। উল্টে দেখা যায়, ব্যক্তি সাফল্যকে নিজেদের প্রচারের কাজে লাগাচ্ছেন নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁর সঙ্গে সফল খেলোয়াড়দের ফোনালাপের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী! দেখা যায়, ওলিম্পিকসে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে যে ওয়েবসাইট চালু করেছে কেন্দ্র তাতে কোনও খেলোয়াড়ের ছবি নেই, আছেন শুধু মোদি। এ সবেরই নিট ফল আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার পিছনের সারিতে থেকে দৌড় শেষ করা। ১৪২ কোটির তাতেই আহ্লাদ!
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা