সম্পাদকীয়

নৈরাজ্য মুক্তির প্রতীক্ষা

স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন রাষ্ট্রের শত্রুদের হাতে। ১৯৭৫-এ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তাঁকে হত্যার মধ্যে পরিষ্কার বার্তা এটাই ছিল যে, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সখ্য’ তারা কোনোমতেই বরদাস্ত করবে না। মুজিব হত্যার পর এই পড়শি দেশে একাধিকবার পাকপন্থী সরকারই তৈরি হয়। কিন্তু তাদের দুঃশাসনে দেশটি ক্রমেই জায়গা করে নিচ্ছিল সর্বনাশের অতলে। ফলে মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনাকেই জনগণ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে। তিনি সরকার গড়ার পর উল্লেখযোগ্য দুটি কাজ সেখানে শুরু হয়। এক, সার্বিক উন্নয়ন এবং দুই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা। উন্নয়ন এতটাই গতি পেয়েছিল যে, মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও পিছনে ফেলে দিয়েছিল তারা! এছাড়া পদ্মা সেতুসহ পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে একটা অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। ভারতে হিন্দু অনুপ্রবেশও কমে গিয়েছিল। কারণ হিন্দুরা নিজ নিজ ধর্মসংস্কৃতি পালনের অধিকার ফিরে পেয়েছিলেন অনেকাংশেই। চোদ্দো পুরুষের ভিটেতেই থেকে যাওয়ার মতো মনের জোরও নতুন করে তৈরি হচ্ছিল অনেকের মধ্যে। ব্যাপারটা পাকপন্থী পার্টিগুলির হজম হয়নি। একইসঙ্গে একাধিক ভুল করতে থাকে হাসিনা সরকার এবং তৎকালীন শাসক দল অওয়ামি লিগও। একাধিক দফায় ‘প্রহসনের নির্বাচন’ সূত্রে সরকার তৈরি হয়। তার থেকেই কায়েম হয় শাসন ক্ষেত্রে স্বৈরতন্ত্র এবং নানা ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ ও ব্যাপক দুর্নীতি। ‘গণতন্ত্র হত্যা এবং স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি’কেই হাতিয়ার করে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাবার প্ল্যান করে বিএনপি, জামাতসহ উগ্র ইসলামিক দলগুলি। কিন্তু তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বলে যে বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই!
তাহলে এই অসম্ভব সম্ভব হবে কী করে? শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু বৈষম্যের দিকটিতে আঙুল তুলেই উসকে দেওয়া হয় তরলমতি ছাত্র সমাজকে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তৃতীয় প্রজন্মের জন্যও মোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল তারা। শুরু হল দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন। তার উপর পুলিসি নিপীড়ন, একের পর তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই খেপে ওঠেনি, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল এপার বাংলারও। আন্দোলনকারীরা আন্তরিক সমর্থন পাচ্ছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকেও। তার জেরে শীর্ষ আদালতকে মাঝখানে রেখে সরকার পুরনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিলও করে। পরিস্থিতি তাতে সাময়িক শান্ত হলেও অশান্তির আগুন পুরো নেভেনি। তুষের আগুনের মতোই ধিকিধিকি জ্বলছিল। সেটাই লেলিহান শিখার রূপ পেল ‘এক দফা’ দাবি আদায়ের নয়া আন্দোলন থেকে। ওই এক দফার একটাই মানে—‘হাসিনা তুমি গদি ছাড়ো’! শুরু হল সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি। এই দফায় বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল—শাসক দলের লোকজন, থানা, সরকারি দপ্তর এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপর যারা আক্রমণ শানাচ্ছে তারা কেউই ছাত্র নয়, প্রশিক্ষিত পেশাদার দুর্বৃত্ত। এর পিছনে পরিষ্কার প্রত্যক্ষ বিদেশি মদতেরই গন্ধ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অতঃপর চলে এল, ৫ আগস্ট, সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশান্তরি হলেন। দেশের সেনা প্রধান সাময়িক দায়িত্ব গ্রহণের কথা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তৈরির কথাই ঘোষণা করলেন। ওয়াকার-উজ-জামান দেশবাসীর উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা আমার উপর আস্থা এবং দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন। দয়া করে সাহায্য করুন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। আসুন, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি, সুন্দর দেশ গড়ি।’ অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার ব্যাপারে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত প্রভৃতি বিরোধী দলের সঙ্গে সেনা প্রধান সোমবারই বৈঠক করেন। ইতিমধ্যেই কারামুক্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চলেছেন কট্টর হাসিনা-বিরোধী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে আপাত সেনারই নিয়ন্ত্রণে দেশ। ভালো কথা। কিন্তু সেনার অস্তিত্ব কি টের পাওয়া যাচ্ছে? কোথায় তাদের সক্রিয়তা? কোথায় সেনা প্রধানের বড় বড় কথা? গোটা বাংলাদেশ জ্বলছে! প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে লাশ আর ধ্বংসস্তূপের সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং আতঙ্কিত হিন্দুরা। তাদের উপর শুরু হয়েছে প্রতিহিংসার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি! কিন্তু কেন এই বিদ্বেষ তাদের উপর? একটাই জবাব হতে পারে, পাকপন্থীদের দৃঢ়মূল সন্দেহ, হিন্দুরা হাসিনার সমর্থক। কিন্তু নিছক সন্দেহের বশে কাউকে চরম সাজা দেওয়া যায় কি? বহু দলীয় গণতন্ত্রে কোনও স্বীকৃত পার্টির প্রতি নীরব সমর্থন কি অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে? তাহলে সেই সমাজকে ‘সভ্য’ বলে ধরা হবে কোন বিচারে? সেনা প্রধান এবং দায়িত্বশীল দলগুলি ও  সমাজের মাথাদের এই নিন্দনীয় নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিরই প্রমাণ দিচ্ছে। একমাত্র প্রকৃত গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিই বাংলাদেশকে এই নৈরাজ্য থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে পারে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তারই প্রতীক্ষায়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা