সম্পাদকীয়

বিষাদের মাস

২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে মাত্র ৯ মাসেরও কম সময়ের এক যুদ্ধে পাল্টে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের নাম, পরিচয় ও সত্তা। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে একদল মানুষ ভারতের অঙ্গচ্ছেদ করে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান’ নামে একটি নতুন ‘স্বাধীন’ দেশ আদায় করেছিল। রাজনৈতিক পরিচয়ে একটি দেশ হলেও তার অবস্থান ছিল বিশাল স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের দুই প্রান্তে। নতুন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশগুলি এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে আকাশ পথেও দূরত্ব ছিল দেড় হাজার মাইলের মতো। কিন্তু ভৌগোলিক দূরত্বটা বড় ছিল না, দূরত্বটা আসল ছিল মন মানসিকতার। কারণ গোটা দেশে বাংলাভাষী জনগণই ছিল সংখ্যাগুরু এবং পূর্ব পাকিস্তানই ছিল নানা সম্পদের অমূল্য ভাণ্ডার। তবু করাচির মাতব্বরদের কাছে বাংলা, বাঙালি এবং বঙ্গদেশ ছিল দুয়োরানি। পূর্ব পাকিস্তানকে সবরকমে শোষণের একটা ক্ষেত্রের বেশি তারা মর্যাদা দেয়নি। ফলে বাহান্নর রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলন দিয়েই সেখানে শুরু হয় বাঙালির মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রয়াস। তার মধুর পরিসমাপ্তির নাম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার আন্দোলন। পাকিস্তানের সেনাশাহির বিরুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু ২৬ মার্চ, ১৯৭১। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লা নিয়াজি তাঁর ৯৩ হাজার পরাজিত সৈনিকসমেত ভারতীয় সেনা এবং মুক্তি বাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। যুদ্ধটার ভিত্তি ছিল করাচির পাঞ্জাবি শাসক গোষ্ঠীর হাতে নির্বিচারে বাঙালি নিধনের প্রতিবাদ এবং বাংলা ভাষা ও বাঙালির সংস্কৃতির স্বতন্ত্র স্বীকৃতি। যুদ্ধটা পূর্ববঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের হলেও বৃহৎ বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে তাঁদের আর্জিতে আন্তরিকভাবেই সাড়া দিয়েছিল দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক ভারত। তবে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাননি ইন্দিরা গান্ধী, কূটনৈতিক সমর্থন দানেই নিজেকে সীমিত রাখতে চেয়েছিল ভারত। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ভারতের এগারোটি বিমান ঘাঁটিতে আচমকা আক্রমণ শানাবার দুঃসাহস দেখায় জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক প্রশাসন। চুপ থাকা সম্ভব হয়নি ইন্দিরার পক্ষে, তিনি পাল্টা জবাব দেওয়ারই নির্দেশ দেন। মাত্র ১৩ দিনে খতম হয়ে যায় করাচির কেরামতি! সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশ ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে।
কিন্তু আমরা জানি, মুজিবুর রহমানের লড়াইটা শুধু পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিল না, তার চেয়েও মারাত্মক যুদ্ধ করতে হয়েছিল তাঁকে বিভীষণদের বিরুদ্ধে, মানে বাংলার জল হাওয়ায় নধর হয়ে ওঠা পাক-দরদিদের বিরুদ্ধে। শেষোক্ত লোকগুলি বাংলাদেশকে কোনোদিনই ‘স্বাধীন’ বলে মনে করেনি। তাদের ব্যাখ্যায়, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, আসলে পাকিস্তান দু’টুকরো হয়েছে!’ তাই এই শক্তি একাত্তর থেকেই খোয়াব দেখে বাংলাদেশকে পাকিস্তানেই ফেরাবার, নিদেন পক্ষে ঢাকায় পাকিস্তানের একটা ‘ভাই’ সরকার বসাবার। এজন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল তারা। খেয়াল করুন, দিনটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এর মধ্যে, নিঃসন্দেহে, মুজিবের ভারত-প্রীতির ‘জবাবটাও’ সমান প্রকট ছিল। বরাত জোরে সে-যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এক প্রাণঘাতী গ্রেনেড হামলা হয় তাঁর উপর। সেবারও সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান হাসিনা। দু’দশক পরে চলতি আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশান্তরি করা হল তাঁকে। ক্ষমতা আপাতত কুক্ষিগত হল সেদেশের সেনা বাহিনীর। এই ঘোলাজলে দাঁড়িয়ে ভারত-বিরোধী শক্তিই সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার দখলে মরিয়া। বৈষম্য এবং দুর্নীতি দূর করার ডাক দিয়েছিলেন একদল দামাল ছাত্র। সেটা ক্রমে জঙ্গি রূপ নিতে থাকে। বেনজির সংঘর্ষ বেধে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। ছাত্র, সাধারণ মানুষ এবং পুলিস মিলিয়ে তিন শতাধিক প্রাণ বলি গিয়েছে এই দফায়।
অতঃপর সোমবার হাসিনার পতনের সঙ্গেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চরম অরাজকতা। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক হিংসার যে পরম্পরা সেখানে গড়ে উঠেছে তাতে ‘আগস্ট’ চিহ্নিত হয়েছে ‘বিষাদের মাস’ হিসেবে। সোমবারের হামলায় সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতার ঐতিহ্য ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি। এতে ভারতের উদ্বেগ বাড়ল বইকি। প্রথম চিন্তা, ফের বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীর স্রোত এদেশেই আছড়ে পড়বে না তো? এছাড়া বাড়তে পারে সীমান্ত জেলাগুলিতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের তৎপরতাও। ভারত সরকার অবশ্যই সজাগ, কূটনৈতিক আলোচনার রাস্তাও খোলা রেখেছে। বাংলাদেশ জুড়ে যে নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া কাম্য। এটা যেন নিতান্তই সাময়িক হয়। এজন্য সে-দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা দেখতে চাই আমরা। ছাত্র আন্দোলনের ‘ফল’ যেন ‘শয়তানের ভোগ্য’ হয়ে না ওঠে, সেটা শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা