সম্পাদকীয়

শুদ্ধিকরণের ফল

লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্যের (২৯টি আসনে জয়) পর থেকেই দলের মন্ত্রী-নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে লাগাতার বার্তা দিয়ে এসেছিলেন মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ ‘দাদাগিরি’ বা ‘দুর্নীতি’তে জড়িয়ে পড়লে দল যে তার পাশে থাকবে না— নেতৃত্বের হুঁশিয়ারিতে সেই স্পষ্ট বার্তা ছিল। এই ঘোষণা যে শুধু কথার কথা নয়, রাজ্যের কারামন্ত্রীর পদ থেকে অখিল গিরির ইস্তফা (বকলমে অপসারণ) তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পূর্ব মেদিনীপুরে দলের ভিত শক্ত করার জন্য তিন বছর আগে যাঁকে মন্ত্রী করেছিলেন মমতা, রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির অঙ্ক পাশে সরিয়ে রেখে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে ছেঁটে ফেলতে চব্বিশ ঘণ্টাও সময় নিলেন না। তৃণমূলের তেরো বছরের শাসনকালে তো বটেই, গোটা দেশে এমন নজির আছে বলে মনে হয় না। রামনগরের প্রবীণ বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য এই নতুন নয়। দেশের মহিলা রাষ্ট্রপতির প্রসঙ্গে তাঁর কুৎসিত মন্তব্যের জেরে এর আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছিলেন। কারামন্ত্রীর কুকথার শিকার হতে হয়েছে রাজ্যপালকে। কিন্তু এক মহিলা বন আধিকারিককে যে ভাষায় হুমকি দেন কারামন্ত্রী, তা কেবল ভর্ৎসনা করে ছেড়ে দিলে ভুল বার্তা যেত। সদা সর্বদা ওত পেতে থাকা বিরোধীরা এর সুযোগ ষোলোআনা কাজে লাগাত। বিচক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী এক চালেই তা মাত করে দিয়েছেন। কারামন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাতারাতি ব্যবস্থা নিয়ে অন্যায় বরদাস্ত না করার জোরালো বার্তা দিলেন মমতা। পাশাপাশি সরকারি আধিকারিকদের বলতে চাইলেন, কোনও রং দেখার দরকার নেই, যে কোনও অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়ান। বেআইনি হলে ব্যবস্থা নিন, সরকার আপনাদের পাশে আছে। 
অখিল গিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। পর্যটন কেন্দ্র তাজপুরে বন দপ্তরের জমিতে বেআইনিভাবে তৈরি অস্থায়ী দোকান তোলাকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। শনিবারের ওই ঘটনার সময়ে বন দপ্তরের মহিলা রেঞ্জ অফিসারের সঙ্গে অভব্য আচরণ এবং আপত্তিকর ভাষায় তাঁকে সম্বোধন করেন কারামন্ত্রী। তাঁকে সাত-দশ দিনের মধ্যে বদলি করে দেওয়া, এমনকী ডাং (লাঠি) দিয়ে মারারও হুমকি দেন! রাতারাতি এই ভিডিও ভাইরাল হতেই আসরে নামে তৃণমূল নেতৃত্ব। এখানেই না থেমে রবিবার মমতার নির্দেশে কারামন্ত্রীর কাছে ইস্তফা দেওয়ার বার্তা যায়। সেইমতো মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দেন অখিল। একইসঙ্গে এও জানান, ওই মহিলা আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এই ঘটনায় সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে অভব্য আচরণ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যেটা স্পষ্ট তা হল, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নজির তৈরি করে বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত চাপা পড়েছে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষিত হল। আর অখিল গিরির রাজনৈতিক প্রতিপত্তি প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গেল। 
ক্ষমতায় থাকলে দু’কথা বলা, মহিলাদের অসম্মান করা, বিদ্বেষভাষণ, দাদাগিরি ভারতীয় রাজনীতিতে কোনও নতুন ঘটনাই নয়। বিশেষত মোদি জমানায় বিজেপি নেতামন্ত্রীদের একাংশের কুকথা ও বিদ্বেষভাষণ প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নিয়েছে। দুর্ভাগ্যের হল, বিদ্বেষভাষণ বা কুকথায় রাশ টানতে বিভিন্ন সময়ে আদালতকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে! পিছিয়ে নেই এ রাজ্যও। বাংলায় কুকথার পথিকৃত বামেরা। চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনে প্রয়াত সিপিএম নেতা ও তৎকালীন সাংসদ অনিল বসু সহ অনেক নেতার মধ্যে এই একই সিন্ড্রোম দেখা গিয়েছিল, যাতে আঁতকে উঠেছিল নাগরিক সমাজ। কিন্তু কোথাও কোনও একজন পঞ্চায়েত স্তরের সদস্যের বিরুদ্ধেও এই কারণে ব্যবস্থা নিয়েছে দল, এমন উদাহরণ বোধহয় দেখাতে পারবে না বাম-বিজেপির নেতারা। সেই অর্থে মমতা ‘দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করলেন। তিনি রাজধর্ম পালন করলেন। এটাও স্পষ্ট হল, দলের নেতা-কর্মীরা সংযত না হলে মমতা-অভিষেকের এই ‘শুদ্ধিকরণ’ অভিযানে আরও উইকেট পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা