সম্পাদকীয়

প্রয়োজন বুঝেই ঐতিহাসিক রায়

প্রশ্নটা উঠছিল। একটা নয়, দুটো প্রশ্ন। আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের সামনের সারিতে তুলে আনার জন্য যে ‘সংরক্ষণ’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে দেশজুড়ে, তার সুফল সব প্রান্তিক মানুষ পাচ্ছেন তো? যাঁরা ‘সংরক্ষণ’-এর সুবিধা নিয়ে ইতিমধ্যে সমাজে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম কেন আজও এই ‘বিশেষ’ সুবিধা ভোগ করবে? বৃহস্পতিবার এমন যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে নতুন পথ দেখাল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছে, তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত সব সম্প্রদায় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে সমমান ও সমচরিত্রের নয়। বরং তাঁদের মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই, এই পিছিয়ে পড়া প্রান্তিকদের ‘উপশ্রেণি’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাঁদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে রাজ্যগুলি। অর্থাৎ, সংরক্ষণের মধ্যেই ‘উপশ্রেণির’ জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ হল, এসসি-এসটিদের মধ্যে যাঁরা ইতিমধ্যে সামনের সারিতে উঠে এসেছেন, সেই ‘ক্রিমি লেয়ার’ অংশকে চিহ্নিত করে সংরক্ষণের আওতা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি, সংরক্ষণ পাওয়া উচিত একটি প্রজন্মের। সেইসঙ্গে একটি প্রজন্ম সংরক্ষণের সুবাদে সমাজের সামনের সারিতে উঠে এলে তার পরবর্তী প্রজন্মের আর এই বিশেষ সুবিধা পাওয়া উচিত নয়। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় যে সাম্যের অধিকারের কথা বলা আছে উপশ্রেণি তৈরি করে তাঁদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় কোনও বাধা নেই। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ২০০৪ সালে এই সংক্রান্ত আগের রায় বাতিল করে দিয়েছে এই সাংবিধানিক বেঞ্চ। তবে এই রায়ে একজন বিচারপতি ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। বাকি ছ’জন ছিলেন একমত।
এই রায়ের তাৎপর্য বোঝাতে একাধিক উদাহরণ দিয়েছেন বিচারপতিরা। যার অন্যতম হল, পদ্ধতিগত ও পরিকাঠামোগত বৈষম্যের কারণে এসসি-এসটিদের মধ্যে সবাই মই বেয়ে উপরে উঠতে পারেনি। অথবা যে ছেলে বা মেয়েটি সেন্ট পল’স স্কুল বা সেন্ট স্টিফেন’স কলেজে পড়ছে তার সঙ্গে দেশের কোনও প্রান্তিক এলাকার অখ্যাত গ্রামের পড়াশোনা করা পড়ুয়াকে এক বন্ধনীতে ফেলা যাবে না। বিচারপতিরা সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, এসটি-এসসি অন্তর্ভুক্ত কোনও আইএএস, আইপিএস, আইআরএস-এর মতো সার্ভিসের অফিসারদের সন্তান আর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় স্কুলে পড়া কোনও পড়ুয়া কি একই সুযোগ পেতে পারে? আসলে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে এসব বাস্তব চিত্র সেই নীতির প্রতিফলন নয়। তাই ‘উপশ্রেণি’ তৈরি করে এই পিছিয়ে পড়া অংশকে তুলে আনতে হবে সামনের সারিতে। বলা বাহুল্য, সুপ্রিম কোর্টই সব দিক থেকে প্রিভিলেজড যারা তাদের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ কেন থাকবে সেই যুক্তিগ্রাহ্য সঙ্গত প্রশ্নটি তুলে দিয়েছে।
এই রায়কে ঐতিহাসিক বলার কারণ, দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি যে স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও সংরক্ষণের সুবিধা সকল জনজাতির মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয়নি। বরং দেখা গিয়েছে, আর্থিকভাবে যারা সচ্ছল তারাই বেশি সুবিধা পেয়ে আসছে। তাই ‘উপশ্রেণি’ তৈরি করে ‘সাব কোটা’ বা সংরক্ষণের মধ্যে আলাদা সংরক্ষণ চালু করার রায় অত্যন্ত জরুরি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এসব কারণেই কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো একাধিক দল বহুদিন ধরে সংসদ ও সংসদের বাইরে জনজাতি গণনার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু শাসক বিজেপি তাতে কর্ণপাত করেনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর গেরুয়াবাহিনীর উপর জাতি গণনার চাপ নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। এবং তাদের তা এড়িয়ে যাওয়া এবার কঠিন হবে। কেন্দ্রে এখন সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় এসসির জন্য ১৫ শতাংশ, এসটির জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ কোটা আছে। রাজ্যগুলিতে অবশ্য এই হার ভিন্ন। সংরক্ষণের এই হার বজায় রেখেই প্রান্তিকদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি বিচার করে উপশ্রেণি চিহ্নিত করাটা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। তবে সুপ্রিম কোর্টকে মান্যতা দিতে এই কাজে প্রয়োজন রাজনৈতিক সততা ও সদিচ্ছা। সন্দেহ নেই উপশ্রেণির কোটায় নাম তুলে সংরক্ষণের সুবিধা পেতে হয়তো ‘ক্রিমি লেয়ার’দের একাংশের তরফেও নানারকম চেষ্টা হবে। বিভিন্ন রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলি হয়তো এই খেলায় নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করবে। তাহলে আরও একবার সাম্যের অধিকার মুখ থুবড়ে পড়বে। এটাই আমাদের ভবিতব্য কি না তা ভেবে দেখুক শাসক ও বিরোধী সব পক্ষ।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা