সম্পাদকীয়

কুম্ভকর্ণের ঘুম

সমস্ত নাগরিকের সার্বিক মঙ্গলই হল কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্য। এই আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রথমেই দূর হয়ে যাওয়ার কথা মানুষের বুনিয়াদি চাহিদাগুলি। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করবে। অতঃপর দেবে সকলের মাথার উপর ছাদ। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই রাষ্ট্রের কর্তব্য নাগরিককে উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রদান। তার মধ্যে অবশ্যই থাকবে সুচিকিৎসা এবং আশঙ্কিত অনিশ্চিতকালের জন্য আগাম সুরাহার ব্যবস্থা। কিন্তু গলদ গোড়াতেই। কারণ সকলের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। তার কুফল কর্মজগৎ এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্র জুড়ে থাকে। কাজের জগৎ মান্ধাতার ব্যবস্থা ছেড়ে বেরতে পারে না, বৈচিত্র্য আসে না উৎপাদন ব্যবস্থায়। তৈরি হয় না যুগোপযোগী কাজের সুযোগ, বাড়ে না চাহিদা মতো চাকরি। ‘শ্রীবৃদ্ধি’ হয় কেবল বেকার বাহিনী এবং দুর্বল অর্থনীতির। স্বভাবতই চীনের মতো প্রতিবেশীর আগ্রাসী বাজার ব্যবস্থার সামনে অসহায় বোধ করে ভারত। দেশবাসীর বেশিরভাগের মধ্যে অপুষ্টি ও ভগ্নস্বাস্থ্য আধুনিক শিক্ষা এবং চেতনার দীনতাই প্রকট করে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার আসরগুলিতে ১৪০ কোটি মানুষের ভারতের জন্য ধারাবাহিকভাবে যে ব্যর্থতার অধ্যায় লেখা হচ্ছে, তা এই সমস্যারই এক অনিবার্য অংশ। বস্তুত অশিক্ষা-দুর্বল স্বাস্থ্য-বেকারত্ব-দারিদ্র্য-অনুন্নত অর্থনীতি—এ হল একটা দুষ্টচক্র। কোনও ব্যক্তি নাগরিকের পক্ষে এই চক্র ভাঙা সম্ভব নয়। দেশকে এর থেকে বের করে আনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। 
এতক্ষণ যা বলা হল, তা চর্বিতচর্বণই। তবু কি সরকারের ঘুম ভাঙে? সচেতন হলে নাগরিকের সামাজিক সুরক্ষার দিকটিতেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিত সে। সরকার যখন নির্লজ্জের মতোই হাত গুটিয়ে থাকে, তখন নাগরিকরাই বাধ্য হন তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু সুরাহার ব্যবস্থা নিতে। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু বিমা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, মোদি সরকারের দিশাহীন কর ব্যবস্থার কালো হাত প্রসারিত সেদিকেও। জীবনের অনিশ্চয়তার উপরেও বিপুল ট্যাক্স চাপিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী! সোজা কথায়, সরকার নিজেও মানুষকে সুরক্ষা দেবে না, আবার কিছু নাগরিক যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বাঁচার চেষ্টা করেন তাতেও সরাসরি বাধা দেবে! নরেন্দ্র মোদির সরকার কি কল্যাণকামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধারণায় বিশ্বাসী নয়? নির্মলা দেবীর আয়কর ব্যবস্থা চাকরিজীবীসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে একটি আতঙ্কের নাম। তার সঙ্গেই সমানে সংগত করে চলেছে অস্বাভাবিক হারে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে কায়েম হয়েছে কর-সন্ত্রাস। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য মোদি সরকার বন্দুকটা রেখেছে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঘাড়েই। অন্যদিকে, সবরকমে রেহাই দেওয়া হচ্ছে হাতে গোনা কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তিকে। যেমন গত এক দশকে মকুব করে দেওয়া হয়েছে ১৫.৫৭ লক্ষ কোটি টাকার অনাদায়ী ব্যাঙ্কঋণ! উল্লেখ্য, এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যেখানে সাধারণ নাগরিকরাই তাঁদের যথাসর্বস্ব জমা রাখেন। ব্যাঙ্কে সাধারণের সঞ্চয়ের উপর সুদের হার অতিনিম্ন। তার কারণ লোকসানের বহর কমাতেই কম সুদ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। অথচ, ব্যাঙ্কের দুর্বল স্বাস্থ্যের বড় কারণ কিছু অসাধু ধনাঢ্য ব্যক্তির ঋণখেলাপ। সোজা হিসেব এটাই পাওয়া যাচ্ছে যে, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পুষতেই লাগাতার খাঁড়ার ঘা পড়ছে কেবল গরিব ও মধ্যবিত্তের উপর। 
এই ধারাবাহিক অন্যায় এখন কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠীরও একাংশের কাছে অসহ্য ঠেকছে। তাই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তাঁরাও। লোকসভায় মোদির পার্টি দুর্বল হতেই বেড়েছে প্রতিবাদের বহর। যেমন সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাদকারি চিঠি লিখে অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের উপর বলবৎ ১৮ শতাংশ জিএসটি তুলে নিতে হবে। নাগপুরের ক্ষুব্ধ বিমাকর্মীদের বক্তব্য শুনেই মন্ত্রিসভার সহকর্মীকে তাঁর এই চিঠি লেখা। গাদকারি মনে করেন, জীবন বিমা ও চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়ামের উপর উচ্চ হারে কর সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটা জীবনের অনিশ্চয়তার উপর ট্যাক্স চাপানোরই শামিল। পরিবারকে কিছুটা সুরক্ষা দিতেই জীবন বিমা করা হয়। তার উপর বিপুল পরিমাণ করের আঘাত, তাই তিনি সমর্থন করেন না। সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টি থেকে চিকিৎসা বিমাতেও জিএসটি মানতে পারেন না তিনি। সোজা কথায়, গাদকারির এই চিঠিতে সাধারণ মানুষ এবং বিরোধীদের কণ্ঠস্বরই ধ্বনিত হয়েছে। প্রশ্ন, এবারও কি ঘুম ভাঙবে কুম্ভকর্ণের?
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা