সম্পাদকীয়

মোদি সরকারের বোঝা

১৭ জুন, ২০২৪। দার্জিলিং জেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে মালগাড়ির ধাক্কা। মৃত ১১। ২ জুলাই, ২০২৪। হরিয়ানায় তারাওরি স্টেশনে লাইনচ্যুত মালগাড়ির আটটি ওয়াগন। ১৮ জুলাই, ২০২৪। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় বেলাইন চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। মৃত্যু চারজনের। রাত পোহাতেই, অর্থাৎ ১৯ জুলাই, ২০২৪। গুজরাতের ভালসাত ও সুরাত স্টেশনের মাঝে লাইনচ্যুত মালগাড়ি। ঠিক তার পরদিন, ২০ জুলাই, ২০২৪। ইউপির আমরোহা স্টেশনের কাছে মালগাড়ি বেলাইন। হ্যাটট্রিকের পরদিন, ২১ জুলাইও ফের বেলাইন হল মালগাড়ি। ঘটনাস্থল নদীয়ার রানাঘাট। চারদিন বিরাম দিয়েই ‘ছন্দে’ ফেরে মোদি সরকারের ‘নামী’ মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের রেল। ২৬ জুলাই, ২০২৪-এ আরও একটি মালগাড়ি বেলাইন হল ওড়িশায় ভুবনেশ্বর স্টেশনের অদূরে। পরদিন আবার লাইন ছেড়ে ছুটল আরও একটি মালগাড়ি। ২৭  জুলাই, ২০২৪ কীর্তি স্থাপিত হল মহারাষ্ট্রে পালঘর জেলার বোইসার স্টেশনের কাছে। জুলাই মাস সেখানেই ক্ষান্ত দিল না। শেষের আগের দিন, ৩০ জুলাই, ২০২৪ বেলাইন হল একটি দূরপাল্লার নামী যাত্রীবাহী ট্রেন। ছিটকে গেল হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেসের ১৮টি কামরা। ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২২ জন। জুলাই মাসের শেষদিনেও মিলল না রেহাই। দুর্ঘটনা ফের সেই ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানিতে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার দেড় মাসের মধ্যে, ৩১ জুলাই, ২০২৪ লাইনচ্যুত হল একটি মালগাড়ি। তাতে হতাহতের খবর নেই বটে, বুধবার দুপুরের খবর, ট্রেন পরিষেবা তখনও বন্ধ ওই লাইনে। 
দেড় মাসে দশ দশটি রেল দুর্ঘটনা এবং তাতে অন্তত ১৭ জনের বেঘোরে মৃত্যুর ধাক্কা! ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণসহ, এই ঘটনায় বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খারাপ স্মৃতি মানুষ ভুলে যেতেই চায়। তাই অতীতের দুর্ভাগ্যের স্মৃতি আমরা মনে করতে চাই না। কিন্তু ওড়িশায় বালেশ্বরের ভয়াবহ স্মৃতি যে এখনও টাটকা! ওই ঘটনার পর এই রেলমন্ত্রী, অশ্বিনী বৈষ্ণবই দেশবাসীকে নিরাপদ রেলযাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় কী? রেল দুর্ঘটনা উল্টে পাল্লা দিয়েই বেড়ে চলেছে। রেল দুর্ঘটনারই কবলে এখন দেশ—হাড় হিম করা দুঃসংবাদ মিলছে প্রায় প্রতিদিনই। ক্রমে ভারী হয়ে আসছে পরিসংখ্যান। আর মনে রাখা যাচ্ছে না দুর্ঘটনার খবর, তথ্যাদি। মানুষ আর নিতে পারছে না, এত এত মর্মান্তিক সংবাদ। রেলের টিকিটে এখনও হিন্দিতে এবং আঞ্চলিক ভাষায় লেখা থাকে ‘শুভযাত্রা’ এবং ইংরেজিতে ‘হ্যাপি জার্নি’। সত্যিই, ভারতে রেলযাত্রা একসময় ছিল সকলের কাছেই বড় আকাঙ্ক্ষার জিনিস। শুধু ভারতবাসীরাই-বা কেন, বিদেশিরাও এদেশের রেলগাড়িতে চড়ে দারুণ সুখানুভব করতেন। রেলযাত্রার স্মৃতি নিয়ে ভারতীয় সমস্ত ভাষায় অজস্র গল্প কাহিনি রচিত হয়েছে এবং নির্মিত হয়েছে বহু কাহিনি চিত্রও। ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিদেশি ভাষাতেও তা বিরল নয়। 
কিন্তু মোদি সরকারের রেল নীতির কারণে সেসব উল্টেই গিয়েছে। ইদানীং ভারতীয় রেল এক আতঙ্কের নাম। কিছুদিন আগেও বিমানযাত্রার নামে অনেকের আতঙ্ক ছিল—যদি বিমান ভেঙে পড়ে প্রাণ চলে যায়! বিমানযাত্রার সেই ছবি এখন অতীতই বলা চলে। ভারতে রেল দুর্ঘটনার পাশে এখন সড়ক দুর্ঘটনারই কম্পিটিশন চলতে পারে মাত্র। তাও কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় যে লাগাম পড়েছে, তাতে মোটামুটিভাবে মেলে আশ্বস্ত হওয়ারই অবকাশ। অন্যদিকে, হতাশা বাড়িয়ে চলেছে রেল। এখন দেশে কোনও রেল দুর্ঘটনাই দুর্ভাগ্যজনক ব্যতিক্রম নয়। মোদিযুগের নিউ নর্মাল। ‘নিউ নর্মাল’ টার্মটি চালু হয়েছিল করোনাকালে। করোনা বিদায় নিতেই কথাটি আর শোনা যায় না, নজরে পড়ে না লেখাপত্রেও। কিন্তু রেল যে ভয়াবহ কারবারে দেশবাসীকে অভ্যস্ত করে তুলতে প্রয়াসী হয়েছে সেখানে ‘নিউ নর্মাল’ কথাটি বেশ লাগসই! একদিকে বাড়ছে রেলযাত্রার খরচ, অন্যদিকে কমছে বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতে সংগত আর্থিক ছাড়, রেল পরিষেবার মান এবং অবশ্যই যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। রেলযাত্রা মানেই ভাগ্যপরীক্ষা। ভাগ্য ভালো থাকলেই একজন যাত্রী নির্বিঘ্নে তাঁর রেলযাত্রা সাঙ্গ করতে পারবেন, নচেৎ নয়! এই অনাসৃষ্টি আর কতদিন বরদাস্ত করা যায়? কোনও জবাব মেলে না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তরফে। দৃষ্টি ঘোরাতে অবশেষে রেল বোর্ডের চেয়ারপার্সন জয়া ভার্মা সিনহাকে সরানো হয়েছে। কিন্তু মানুষের প্রশ্ন, এই রেলমন্ত্রীকে কবে বিদায় জানাবে সরকার? এজন্য তাঁর ব্যর্থতা ও অপদার্থতার আর কত দীর্ঘ খতিয়ান চান প্রধানমন্ত্রী? নাকি তাঁর এমপিদের মধ্যে কেউই এই ‘অভিশপ্ত’ দপ্তরের দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেন না? বেহাল রেলমন্ত্রকের দায়িত্বগ্রহণে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কি পরাঙ্মুখ? 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা