সম্পাদকীয়

নিকৃষ্ট ও বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত

শনিবার নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর সব কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ভাষণের মাঝেই মাইক বন্ধ করে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় একাধিকবার। সরকারি অনুষ্ঠানে এই সৌজন্যের অভাব নিঃসন্দেহে অপমান এবং গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী। অনুষ্ঠানটি ছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বয়ং। আর সেখানেই শিষ্টাচারের নিম্নতম সীমাও লঙ্ঘিত হল অবলীলায়। যাঁকে অপমান করা হল তিনি দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এবার কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ ছিল সব বিরোধী রাজ্যের। এবং, ওই ইস্যুতে বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র সাতজন মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ছিলেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও! এহেন পরিস্থিতিতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালেই পৌঁছন রাইসিনায়। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, বিরোধীদের কোনও বক্তব্য ও বার্তা এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে একেবারে না পৌঁছনো ভুলই হবে। তিনি বাংলার কথা তো বলবেনই, ওইসঙ্গে তুলে ধরবেন সম্মিলিত বিরোধী পক্ষের বক্তব্য। বিশেষ করে বাংলার মানুষের অভাব, অভিযোগ, দাবি ও ভাবনাচিন্তার কথা বিজেপির কোনও নেতা-মন্ত্রী দিল্লির দরবারে পৌঁছে দেবেন না। এক দশকের অভিজ্ঞতা অন্তত তা’ই। বিজেপিওয়ালারা বরং বাংলার সঙ্গে লাগাতার বঞ্চনার ছবি দেখে উল্লাসই করেন। বঙ্গ বিজেপি মনে করেছে—তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকার এবং পার্টি জনসমক্ষে হেয় হবে ও জনপ্রিয়তা খোয়াবে। তার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবেন পদ্মের কারবারিরা। 
এহেন ‘অভব্যতা’ মেনে না-নিয়ে ওই বৈঠক থেকে ‘ওয়াক আউট’ করেন মমতা। বাইরে বেরিয়ে এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কয়েক জনকে ২০ মিনিটেরও বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কথা শেষ হওয়ার অনেক আগেই। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’ মমতা জানান, চন্দ্রবাবু নাইডুকে বলার সুযোগ দেওয়া হয় ২০ মিনিট। অসম, গোয়া ও ছত্তিশড়ের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বক্তব্য পেশের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে অশিষ্ট আচরণটিকে সরাসরি অপমান বলেই মনে করেন মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর অবস্থান ছিল স্পষ্ট। তিনি সোজা-সাপ্টা বলে এসেছেন, কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বৈষম্য করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁকে সে-কথা বিস্তারিত বলতে বাধা দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগ ঘিরে ক’দিন ধরেই উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি। কলকাতায় এবং বাংলার জেলাগুলিতেও ধ্বনিত হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ। আন্দোলিত হয়েছে জাতীয় রাজনীতিও। তবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের এ কোনও বিচ্ছিন্ন কাহিনি নয়। লোকসভায় রাহুল গান্ধীও এমন অবাঞ্ছিত ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন বারবার। 
এবার মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও একই কায়দায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ উঠল। দিল্লির আচরণের নেপথ্যে একাধিক ভয় কাজ করেছে নিশ্চয়—দেশজুড়ে বিভাজন ও বৈষম্যের রাজনীতির রমরমা; মণিপুর এবং আরও একাধিক সমগোত্রীয় ইস্যুতে মোদির বিস্ময়কর নীরবতা; তীব্র বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকারের ব্যর্থতা প্রভৃতি। ‘টকের জ্বালায় পালিয়ে এসে তেঁতুলতলায় বাস’ চাননি মোদিরা। তাই বাংলার বাঘিনীকে কৌশলেই বৈঠক থেকে বের করে দেওয়া হল। দিল্লির আগুনের আঁচ সোমবার পৌঁছয় রাজ্য বিধানসভাতেও। অধিবেশনের শুরুতেই মোদি সরকারের পরিকল্পিত কারবারের প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব আনে শাসক পক্ষ। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেতেই তাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে শাসক ও বিরোধীর তরজা। একদিকে, তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়করা বাংলাকে অপমানের প্রতিবাদে মোদি সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দলকে তুলোধোনা করেন। অন্যদিকে, বিজেপি সদস্যরা এটাকে তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘নাটক’ বলে উড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ওই অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিল্লি একদিকে বঞ্চনা করছে, আর অন্যদিকে আমাদের কথাটা শুনছে না। বাংলার স্বার্থে আমি আমার ভয়েস রেকর্ড করাতে গিয়েছিলাম। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, গতবছর ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি’ হিসেবে নীতি আয়োগের বৈঠকে যান তিনি, কিন্তু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি! কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, কমিটির সদস্য হিসেবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীরাই বৈঠকে থাকতে পারেন। অথচ এবার বিহারের দুই উপমুখ্যমন্ত্রী একই বৈঠকে স্বাগত ছিলেন! নবান্নের তরফে এই বৈষম্যেরও লিখিত জবাব দাবি করা উচিত। আর দেখা দরকার বিধানসভায় গৃহীত নিন্দা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দিল্লির মাতব্বরা কী পদক্ষেপ করেন। ব্যাপারটি নিছক রাজনৈতিক কুস্তি নয়, এর সঙ্গে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার আয়ুর দৈর্ঘ্যও জড়িয়ে রয়েছে।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা