সম্পাদকীয়

মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য দুঃসংবাদ

মূল্যবৃদ্ধির আঁচে আম জনতার হাঁড়ির হাল। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা এতই কমেছে যে, তিন দশকের মধ্যে তা সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। জানুয়ারি, ২০২৩-এ প্রকাশিত বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার পার্সোনাল কনসাম্পশন এক্সপেন্ডিচার সমীক্ষায় এই ভাষায় সতর্ক করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে দেশে সঞ্চয়ের সামগ্রিক হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। সেটা ২০২২-২৩-এর প্রথমার্ধে কমে হয় জিডিপির ৪ শতাংশ। সাধারণ মানুষের ব্যয়বৃদ্ধির পাশে সঞ্চয় হার এই পরিমাণ হ্রাসের ছবিটাকে অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক বলেই চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্ট পণ্ডিতরা। কিন্তু হঠাৎ এই দুর্দশা কেন? অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে যে, নিত্যব্যবহার্য পণ্য কিনতেই গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ট্যাঁক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, গ্রামীণ ভারতের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ বিশেষ থাকছে না। স্বভাবতই ব্যাঙ্ক অথবা অন্য আর্থিক সংস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সঞ্চয় করার অভ্যাস থেকে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। উল্লেখ্য, উপর্যুক্ত রিপোর্ট তৈরি হয় উৎসব মরশুমের পরপরই। তাই তাতে ধরা পড়ে উৎসবকালীন আর্থিক প্রবণতাটিও। রিপোর্টে প্রকাশ, সাধারণের সঞ্চয়ের সামর্থ্য উৎসবের পর আরও নিম্নগামী। বিশেষ করে রেপো রেট বৃদ্ধির ধাক্কায় দামি ইএমআই নিয়েও নাজেহাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। উদ্বৃত্ত অর্থ বাজারজাত করার সুযোগ একপ্রকার বন্ধই  হয়ে গিয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকে বেসরকারি সমীক্ষা। গত ২৩ জুলাই, বাজেট পেশের আগে সর্বত্রই প্রকট হয়েছিল অন্ধকারে ডুবে থাকা এক দেশেরই অর্থনৈতিক চিত্র। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত বার্ষিক সমীক্ষায় বেআব্রু হয়ে পড়ে কর্মসংস্থান থেকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার করুণ দশা। সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে। এমনকী অসংগঠিত ক্ষেত্রটিও ফেরেনি লকডাউন-পূর্বকালে। গত বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের উপর নির্ভরশীল অসংগঠিত ক্ষেত্রের অবস্থা উদ্বেগজনক। আবার ফর্মাল সেক্টরেও কর্মসংস্থান নিম্নমুখী। এমনকী, বেসরকারি একাধিক সমীক্ষা বলছে, গত একবছরে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, যে-গ্রাম এখনও ভারতের অর্থনীতির ভিত্তিভূমি, সেই গ্রামীণ আম আদমির ক্রয়ক্ষমতাই তলানিতে। কমেছে সার এবং ট্রাক্টর বিক্রয়। কৃষিক্ষেত্রে লগ্নিবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। কৃষিজাত তথা ক্ষুদ্র শিল্পপণ্যের উৎপাদন, রপ্তানি—কমে গিয়েছে দুটোই। অর্থাৎ গ্রামীণ অর্থনীতির চারটি মানদণ্ডেই হতাশ করেছে মোদি-নির্মলার আর্থিক নীতি। এই মডেলের নিয়মমতোই ভুগছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। গ্রামের মানুষের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকাকড়ি বাড়ন্ত বলেই গ্রামীণ ভারত কেনাকাটায় সামর্থ্য, উৎসাহ দুটোই হারিয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অসংগঠিত সংস্থায় কর্মহীনতা গত সাতবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ লক্ষ। মতিলাল অসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের আর্থিক সমীক্ষায় প্রকাশ, সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে গ্রামীণ ভারতের ক্রয়হার গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই হার একবছরে কমেছে ৩ শতাংশ। গত অর্থবর্ষের মার্চ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কে সঞ্চয় প্রবণতায় যে ধাক্কা লেগেছে, তা উদ্বগজনক। সেভিংস এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডিপোজিট একপ্রকার তলানিতে। স্থায়ী আমানতেও চরম সঙ্কট লক্ষণীয়। ব্যাঙ্কের এই সঙ্কট—রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই। কারণ? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামবৃদ্ধির পাশে আয় থমকে রয়েছে অথবা কমে গিয়েছে। অন্যদিকে, বহু মানুষ যাঁদের হাতে সামান্য উদ্বৃত্তও আছে তাঁরা অভ্যাস বদলে ঝুঁকেছেন ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। 
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাগাতার হুঁশিয়ারিতেও সরকার হয় সতর্ক হয়নি অথবা সুবৃহৎ অর্থনীতি পরিচালনায় তারা ব্যর্থ। না-হলে শেষেমশ ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও এমন নাকানিচোবানি খাবে কেন ভারতের অর্থনীতি? আমরা জানি, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সবচেয়ে বেশি জোরের জায়গা হল ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি। সেখানেও আমানতের পরিমাণ নিম্নমুখী। ভাবগতিক বুঝে এবছর সেখানে সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিয়েছে  সরকার নিজেই! প্রবণতার শুরু অবশ্য গত অর্থবর্ষেই। পূর্ববর্তী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তাই অন্তর্বর্তী বাজেটেও এই খাতের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ছবিটা হতাশাজনক। কোনও সংশয় নেই, এজন্যই অর্থমন্ত্রক এবছরের লক্ষ্যমাত্রা হঠাৎ ১৭ হাজার কোটি কমিয়ে দিয়ে, করেছে ৪ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের সংগৃহীত অর্থ সঞ্চিত থাকে ন্যাশনাল স্মল সেভিংস ফান্ডে। এই তহবিলের গুরুত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপয়াণ অথবা পরিকাঠামো উন্নয়নে ঋণগ্রহণের বড় ভরসা এই জন তহবিল। স্বভাবতই দেশগঠনের জন্য অর্থসংস্থানে মোদি সরকারকে এবার নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু করতে হবে। তাতে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোই ট্যাক্সবৃদ্ধির মূল কোপটি পড়বে মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের সরকারের এই মনোভাব মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়, বরং সর্বার্থে জনবিরোধী।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা