সম্পাদকীয়

কর্মসংস্থানের নয়া ভাঁওতা

আরও একটা বাজেট পেশ, আরও একবার ভাঁওতাবাজি! নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস-এ বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে একাধিক সমীক্ষা রিপোর্টে বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মোদ্দা কথা ছিল, মোদি জমানায় দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। লোকসভা ভোটের প্রচারে এই নিয়ে প্রায় সব বিরোধী দল সোচ্চার হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এই জ্বলন্ত ইস্যুকে পাত্তাই দেয়নি। এর ফল হাতে-নাতে পায় শাসকগোষ্ঠী। বিজেপির আসন সংখ্যা এক ধাক্কায় ৩০৩ থেকে ২৪০-এ নেমে আসে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় মোদির দল। এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে তৃতীয় সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের প্রাক্কা঩লে মনে করা হচ্ছিল, এবার বুঝি কর্মসংস্থান নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাবে সরকার। বিশেষত বাজেটের আগের দিন আর্থিক সমীক্ষা পেশ করে অর্থমন্ত্রক জানায়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বছরে ৮০ লক্ষ করে কর্মসংস্থান প্রয়োজন। তাহলেই হয়তো বেকার সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে। বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান শব্দগুলি অন্তত পঁচিশবার উচ্চারণ করায় প্রত্যাশার পারদও যথারীতি চড়তে থাকে। কিন্তু বাজেট পেশের পর দেখা গেল, কর্মসংস্থান নিয়ে সবটাই আসলে অশ্বডিম্ব প্রসব করা হয়েছে! ভয়াবহ বেকারত্বের মোকাবিলায় বাজেটে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যে আসলে কিছু শিক্ষিত যুবক-যুবতীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা (ইন্টার্নশিপ), চাকরি নয়— সেই সত্যটা জানিয়ে দিয়েছেন নির্মলার মন্ত্রকের সচিব। তার মানে, বাজেটে নাকের বদলে নরুন দেখানো হল! সেটাও লক্ষ্যপূরণ করবে কি না নির্ভর করছে বেসরকারি সংস্থাগুলির দয়ার উপর। ধরে নেওয়া যায়, এটাকেই হয়তো ‘নতুন চাকরি’র ব্যবস্থা হল বলে বক্তৃতায় গলার শিরা ফোলাবেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পারিষদরা। কিন্তু বছর শেষে ফের উঠে আসবে বেকারত্বের ভয়াবহ আরও এক ছবি।
বাজেটে কর্মসংস্থানের কথা বলে তিন দফা দাওয়াই বাতলেছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন, যাঁরা নতুন চাকরিতে ঢুকবেন তাঁদের এক মাসের বেতন দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। পিএফ-এ নাম ওঠা প্রথম চাকরি পাওয়া কর্মীদের বেতনে তিন কিস্তিতে ১৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। অর্থমন্ত্রীর শাস্ত্রে, এসবই নাকি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়া! বাজেটে সবচেয়ে বড় ঘোষণা ছিল, আগামী পাঁচ বছর দেশের সেরা ৫০০টি বেসরকারি সংস্থায় এক কোটি যুবক-যুবতীকে এক বছরের জন্য শিক্ষানবিশ হিসাবে নিয়োগ করা হবে। এজন্য প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেবে সরকার। এছাড়া এককালীন ৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এও একটা ‘জুমলা’। কেন? প্রথমত, পাঁচ বছরে এক কোটি শিক্ষানবিশ নিয়োগ করতে হলে বছরে ২০ লক্ষ শিক্ষানবিশ নিয়োগ করতে হবে। এজন্য ৫০০টি সংস্থার প্রতিটিকে চার হাজার কর্মী নিয়োগ করতে হবে। ক’টা সংস্থা সরকারের এই আবদার মেনে নেবে, তা নিয়ে শুরুতেই সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকার চায়, প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ভাতার খরচের ১০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করুক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। কিন্তু এটা ‘বাধ্যতামূলক’ নয় বলে অনেকেই নানা কারণ দেখিয়ে পিঠটান দিতে পারে। আশঙ্কা আরও উস্কে দিয়ে অর্থমন্ত্রকের সচিব জানিয়েছেন, এটা ‘স্বেচ্ছাকৃত’ প্রকল্প। কাউকে বাধ্য করা যাবে না। সরকার চায় সংস্থাগুলি তাদের ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’ খাতের টাকা প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে ব্যয় করুক। সরকার মনে করে, প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শিল্পমহলই করতে পারে। কারণ সরকারের একার পক্ষে এই দক্ষতাবৃদ্ধির কাজ করা সম্ভব নয়। তার মানে, কর্মসংস্থান তৈরির নামে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটিও বেসরকারি সংস্থাগুলির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। এরও মোদ্দা কথা হল, শিক্ষার সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরির কথা সরকার বলছে, কিন্তু তাদের স্থায়ী চাকরির বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না!
কিন্তু এক বছর প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির পর একটা কাজ শেষের শংসাপত্র হাতে পাওয়া আর কর্মসংস্থানের সুযোগ কি এক হল? এই প্রশিক্ষণ শেষে হাতে-কলমে কাজ শেখা ছেলেমেয়েগুলোর বায়োডাটায় হয়তো একটা পয়েন্ট যোগ হবে। কিন্তু তাদের কাজের কী হবে? কে দেবে তাদের চাকরি? প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অর্থসচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যেসব সংস্থা শিক্ষানবিশ নেবে তাদের নিয়োগ করতে বলা হচ্ছে না। শুধু প্রশিক্ষণ দিতে বলা হচ্ছে। তাহলে আর্থিক সমীক্ষায় দেখানো বছরে ৮০ লক্ষ কর্মসংস্থানের কী হবে? অর্থসচিব জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে কর্ম সংস্থান তৈরি হবে। অর্থসচিব যে সাফাই-ই দিন, আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, দেশে কর্মরত মানুষের সংখ্যা ৫৬ কোটি। এর মধ্যে স্থায়ী আয় ও নিয়মিত বেতন পান মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ। সবচেয়ে কম কর্মসংস্থান উৎপাদনক্ষেত্রে। উৎপাদন কম মানে কাজের সুযোগ কম। তাই আর্থিক বৃদ্ধির হার দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা আরও একটা ভাঁওতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা