শেয়ার মেয়াদি সঞ্চয়সহ একাধিক ক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। ব্যবসায় কেনাবেচা বাড়বে। ... বিশদ
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের থেকে জায়গীর পাওয়ার পর লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় ১৬১০ সালে দুর্গাপুজো শুরু করেন বড়িশা গ্রামে। সেই শুরু সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের পুজো। এখন মোট আট জায়গায় এই পরিবার দুর্গাপুজো করে। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানান, তাঁদের পরিবারের পুজোগুলিতে শাক্ত, শৈব্য ও বৈষ্ণব মতে মিলেমিশে ত্রিধারা সঙ্গম পুজো হয়। ১৬৬০ সালে বিদ্যাধর রায় চৌধুরী একটি কষ্টিপাথর থেকে শ্যামরাই, বুড়ো শিব এবং সিদ্ধেশ্বরী কালী গড়েছিলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় ত্রিধারা সঙ্গম পুজো। যেমন বড়বাড়ি, মেজবাড়ি ও নিমতায় ঘোড়ামুখো সিংহ থাকে। নিমতায় শুধু নিরামিষ ভোগ হয়। বাকি সব বাড়িতে আমিষ ভোগ। তিন চালার প্রতিমার চালচিত্রে দশমহাবিদ্যা ও রাধাকৃষ্ণ থাকে। অষ্টমী ও নবমীতে উপদেবতা ও অপদেবতাদের জন্য মাসকলাই, ঘি আর দই দিয়ে বিশেষ ‘মাসভক্তবলি’ ভোগ দেওয়া হয়।
রাজা নবকৃষ্ণ দেবের শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় পায়ের ধুলো পড়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেনের মতো ব্যক্তিত্বের। আসতেন ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড ক্লাইভও। পরিবারের সদস্য তাপস বসুর কথায়, ‘আমাদের কাঠামো পুজো হয় রথযাত্রার দিন। প্রতিমার মুখের আদলের কোনও পরিবর্তন নেই। বোধন শুরু হয় পুজোর ১৪ দিন আগে। এখানে মা দুর্গাকে ব্রাহ্মণী রূপে পুজো করা হয়। ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় আতপ চাল, কাঁচা দুধ এবং ফলমূল। রাতে হয় সাত-আট রকমের মিঠাই ভোগ। থাকে নিমকি, গজা সহ একাধিক শুকনো মিষ্টি। ঘট নাড়িয়ে দেওয়ার আগে বাড়ির কেউই প্রতিমা ছুঁতে পারেন না। নবমীতে ছাঁচি কুমড়ো, আখ এবং দুটো মাগুর মাছ বলি হয়। বিসর্জনের পর বাড়ির সদস্যরা সিদ্ধি এবং মিষ্টি খান।’
বাগবাজার হালদার বাড়ির পুজোর বিষয়ে কথিত আছে, ১৫৬০ সালে তৎকালীন চন্দননগর নিবাসী জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ হালদার এক স্বপ্নাদেশ পান, ওড়িশার সাহেবপুরে প্রায় ১৪ ফুট মাটির নীচে অধিষ্ঠান করছেন মহিষমর্দিনী দুর্গা। সঠিক স্থানে মাটি খুঁড়ে কষ্টি পাথরের মূর্তির সন্ধান মেলে। বিগ্রহটি ছিল খুঁতহীন। পাথরের এই মূর্তিটির উচ্চতা ২ ফুট। ওজন ২৫ কিলো। পরে ব্যবসায়িক কারণে চন্দননগর ছেড়ে বাগবাজারে চলে আসেন হালদাররা। পুজো শুরু হয় এখানে। পরিবারের কর্তা দেবাশিস হালদারের কথায়, ‘আমাদের বাড়িতে মা আসেন পুজো নিতে ও আশীর্বাদ দিতে। পুজোর ষষ্ঠী এবং দশমী এই বাড়ির সকলে আমিষ খান। বাড়ির মেয়েরা ষষ্ঠীর দিন মৎস্যমুখ করে দেবী বরণ করেন। নিত্য ভোগে মাকে প্রথমে দেওয়া হয় লেবুর শরবত। ষষ্ঠীর দিন হয় পোলাও। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে হয় খিচুড়ি ভোগ। প্রতিদিন সকালে মায়ের ভোগের সঙ্গে থাকে পাঁচরকম ভাজা, পায়েস মিষ্টি। রাতে নানারকম ব্যাঞ্জন, সাথে ঘিয়ে ভাজা লুচি। মহাষ্টমীর দিন থাকে বড় বড় চন্দ্রপুলী, গোটা ফল, শুকনো মিষ্টির পদ।
জানবাজারে রানি রাসমণির পুজোকে ঘিরে প্রতি বছরই থাকে উন্মাদনা। রানিমার শ্বশুরমশাই বাবু প্রীতিরাম দাস ১৭৯০ সালে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। ১৮৬৪ সালে পুজোর সময় এখানে অবস্থানকালে সখী বেশে শ্রীরামকৃষ্ণ মা’কে চামরব্যঞ্জন করেছিলেন। সেইসময় মথুরবাবুও তাঁকে চিনতে পারেননি। এই পুজোর দায়িত্বে থাকা প্রসূন হাজরা বলেন, এখানে প্রতিমার মুখ ছাঁচে নয়, হাতে তৈরি হয়। বীরভূমের আমোদপুরের চিত্রকর পরিবার বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করেন। পুজোর তিনদিনই এখানে কুমারীপুজো হয়।