আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
তবে পরিস্থিতি এতটাও সহজ নয়। শহরের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে মিষ্টির দোকানে বাঙালির আনাগোনা কমেছে। একথা বলাই বাহুল্য, ২০১৯-এর তুলনায় নববর্ষে মিষ্টির ব্যবসা অনেকটাই কমেছে। নববর্ষের সময় অনলাইনের মাধ্যমে রাজ্যের বাইরে থাকা বাঙালি মিষ্টির অর্ডার করে থাকেন। ‘বলরাম মল্লিক ও রাধারমণ মল্লিক’-এর তরফে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও একবার করোনা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক জায়গাতেই ডেলিভারি বন্ধ। শুধু তাই নয়, মিষ্টির দামও এবার খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। কারণ, কাঁচামালের দাম লকডাউনের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী। তাও বাঙালি রসনাতেই তৃপ্তি খুঁজে পায়। একেবারেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তারা নয়। তাদের মুখের দিকে তাকিয়েই হাল ছাড়ছেন না জনপ্রিয় মিষ্টির ব্যবসায়ীরাও।
নববর্ষ উপলক্ষে বাঙালির পাতে বাহারি মিষ্টি সাজিয়ে দিতে উদ্যোগী বিভিন্ন ঐতিহ্যশালী মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। উত্তর কলকতার শতাব্দী প্রাচীন মিষ্টির দোকান ‘গিরীশ চন্দ্র দে এবং নকুড় চন্দ্র নন্দী’র তরফে প্রীতিদ নন্দী বললেন, ‘আম্রপালি, ম্যাঙ্গো মালাই রোল, ম্যাঙ্গো মৌসুমী এই ধরনের আমের বিভিন্ন সন্দেশ থাকছে। প্রতি রবিবার টক সন্দেশ এবং শনিবার করে আবার খাব সন্দেশ পাওয়া যাবে।’ এইসবের সঙ্গে পারিজাত, দিলখুশ, মালাই শিঙাড়া, জলভরা, বাটারস্কচ, চকোলেট তো থাকছেই। সন্দেশের দাম মোটামুটিভাবে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই থাকছে। ২০- ২৫ টাকা থেকে শুরু হচ্ছে সন্দেশের দাম। ‘গরম কালে সাধারণত মানুষ হালকা সন্দেশ পছন্দ করেন। সেই দিক থেকে আমের সন্দেশগুলোর সঙ্গে দিলখুশ, মালাই শিঙাড়া, পারিজাত— এইসবের চাহিদা থাকে,’ এমনটাই বলছিলেন প্রীতিদ।
শুধু উত্তর নয়, শহরের দক্ষিণ প্রান্তেও রয়েছে একেবারে জিভে জল আনা মিষ্টির মেনুকার্ড। নববর্ষের কথা মাথায় রেখে ‘বলরাম মল্লিক ও রাধারমণ মল্লিক’ বাহারি মিষ্টির ডালি সাজিয়ে বসেছে। ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা সন্দেশ তো পাওয়া যাবেই। তার সঙ্গে থাকছে বেকড রসগোল্লা, চকোলেট সন্দেশ, ছানার রোল, সরের রোল, ম্যাঙ্গো জেলাটো, ম্যাঙ্গো সুফলে ও রামবল প্রভৃতি। এক্ষেত্রেও মিষ্টির দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই থাকছে। মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে এই নববর্ষে আপনি জিভকে মন ভোলানো স্বাদ উপহার দিতে পারবেন। ভোটের বাজারে এই মিষ্টির দোকান থেকে আপনি আপনার প্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রতীক দেওয়া তৈরি সন্দেশও কিনে নিয়ে যেতে পারেন। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি সবদলের প্রতীকচিহ্ন দেওয়া সন্দেশ তৈরি করেছেন এই মিষ্টি বিক্রেতা। রয়েছে ‘খেলা হবে’র মতো জনপ্রিয় স্লোগান লেখা সন্দেশও। তাঁদের কথায়, এই সন্দেশ দেদার বিকোচ্ছে। শুধু যে রাজনৈতিক কর্মীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, এমনটা নয়। সাধারণ মানুষও তাঁদের প্রিয় দলের প্রতীক দেওয়া মিষ্টি কিনছেন।
করোনার থাবায় বাঙালি জর্জরিত হলেও, জিভ তো আর কথা শোনে না। সে তো নিত্যদিন নতুন কিছু স্বাদের আশায় থাকে। তাই পয়লা বৈশাখের মতো এই বিশেষ দিনে না হয় পকেটের উপর একটু চাপ দিয়েই জিভের কথা ভাবলেন, ভাবলেন না হয় একটু মনের কথা। তবে যার কথাই শুনুন না কেন, মুখে মাস্ক, স্যানিটাইজার আর সামাজিক দূরত্বের কথা সবকিছুর আগে ভেবে তবেই মিষ্টির দোকানে যাবেন এবং বাংলা নতুন বছর উদযাপন করবেন।