আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
বছরের প্রথম দিনটিতে কেউ ব্যবসার নতুন খাতা, কেউ বা গণেশ-লক্ষ্মী নিয়ে পুজো দিতে হাজির হন পোড়ামা মন্দিরে। শুধু নবদ্বীপ নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজনও পুজো দিতে আসেন।
ব্যবসায়ীদের দৃঢ় বিশ্বাস, মা পোড়ামা মন্দিরে পুজো দিলে সারা বছর ব্যবসা ভালো হবে। তাই এইদিন পুজো দেওয়ার লাইন চলে যায় পিচ রাস্তা পর্যন্ত। শুধু ব্যবসায়ীরাই নন বছরের প্রথম এই দিনটিতে মন্দিরে দর্শনে আসেন বহু বহিরাগত পুণ্যার্থীও। ভোর থেকে ভিড় সামাল দিতে পুলিস প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়।
বছরের এই দিনটিতে শুধু পোড়ামা মন্দিরেই নয়। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরেও ব্যবসায়ীরা পুজো দিতে যান। অনেকেই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর চরণে তাদের ব্যবসার খাতা ছুঁইয়ে নিয়ে যান।
গত বছর এই সময় করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে পোড়ামা মন্দির, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির সহ সমস্ত মন্দিরই বন্ধ ছিল। সে কারণে কেউই পুজো দিতে পারেননি। কিন্ত অনেকেই মন্দিরের সদর দরজায় তাঁদের নতুন খাতা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। কেউ কেউ মন্দিরের গেটে বা ঝংকারে নিজে হাতে তাঁদের ব্যবসার খাতা ছুঁইয়ে নিয়ে যান।
নবদ্বীপের পোড়ামা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মানিকলাল ভট্টাচার্য বলেন, নবদ্বীপের মানুষের বিশ্বাস, বছরের এই দিনে মা পোড়ামা কাছে পুজো দিয়ে ব্যবসা চালু করলে আয়-উন্নতি ভালো হবে। তিনি বলেন, ভোর চারটে থেকে নিত্যপুজো করে মন্দিরের কাজ শুরু হয়ে যায়। বেলা দুটো থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে এই পুজো।
পোড়ামাতলার এক ফুল বিক্রেতা আলোককুমার মালাকার বলেন, ভোর থেকে পুজো দিতে আসেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই ব্যবসার নতুন খাতা পুজো করিয়ে নিয়ে যান। আবার কিছু ব্যবসায়ী গণেশ-লক্ষ্মী সঙ্গে নিয়ে পোড়ামার মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। গ্রাম্যদেবী মা পোড়ামাকে ঘিরে নবদ্বীপের মানুষের ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে। নবদ্বীপবাসী যে কোন শুভ কাজের আগে এখানেই প্রথম পুজো দিয়ে যান।
পোড়ামা মন্দির প্রাঙ্গণের এক ভোগ বিক্রেতা স্বপন দাস বলেন, ভোর থেকেই পুজো দেওয়ার দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় মন্দিরে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই লাইন চলে যায় মন্দির ছাড়িয়ে পিচ রাস্তায়। শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, অনেকেই বছরের এই দিনে মা পোড়ামা, ভবতারিণী এবং ভবতারণ মন্দিরে সপরিবারে পুজো দিতে আসেন। এমনকি দূর-দূরান্তের থেকে বহু মানুষ গঙ্গা স্নান সেরে মন্দির দর্শনে আসেন।
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত প্রদীপকুমার গোস্বামী বলেন, বছরের প্রথম দিন নবদ্বীপের অধিকাংশ মানুষই পোড়ামা মন্দির দর্শন করে ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে দর্শন করতে মন্দিরে আসেন। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক খাতা পূজো করিয়ে নেন। কেউ কেউ মন্দিরের পুরোহিতকে দিয়ে মহাপ্রভুর সামনে গণেশ পুজোও করান।
পোড়ামাতলা রোডের এক ব্যবসায়ী শান্তনু সাহা বলেন, ২৫ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রথম দিকে দু’ এক বছর দোকানেই গণেশ পুজো করেছিলাম। তারপর থেকে মা পোড়ামা মন্দিরে পুজো দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, যে কোনও শুভ কাজেই আমরা মা পোড়ামার কাছে পুজো দিই। এমনকি সরস্বতী পুজোর দিনও পড়ুয়ারা অনেকেই মা পোড়ামার কাছে অঞ্জলি দেয়।