উচ্চতর বিদ্যায় আগ্রহ বাড়বে। মনোমতো বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। ব্যবসা স্থান শুভ। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
বিষ্ণুপুর উপ সংশোধনাগারের আধিকারিক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, আমি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি, রোজ সকালে সংশোধনাগারের বন্দিরা টগর গাছের ফুল তোলেন। তাঁরা তা সুতো দিয়ে গাঁথেন। মূলত পুরুষ বন্দিরাই ওই মালা গাঁথেন। তাঁদের আবদারে ওই মালা জেলের এক কর্মী মন্দিরে দিয়ে আসেন। শুনেছি বহু বছর ধরে ওই নিয়ম চলে আসছে। তাই এনিয়ে কোনও আপত্তি করা হয় না। তবে এক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা থাকে।
ছিন্নমস্তা মন্দিরের পুরোহিত অরুণাংশু গোস্বামী বলেন, ৪৬বছরের প্রাচীন ছিন্নমস্তা মন্দিরে সারাবছর দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজো হয়। তাই ওইদিন সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রতিদিন বিষ্ণুপুর জেল থেকে বন্দিদের গাঁথা টগর ফুলের টাটকা মালা মন্দিরে আসে। তা মায়ের গলায় চড়ানো হয়।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী কৃষ্ণমোহন গুইন বিষ্ণুপুরে তুড়কি আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি বিষ্ণুপুরে মাঝে মধ্যে আসতেন। ৯৩বছর বয়সে উনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে বিষ্ণুপুর শহরের ৩নম্বর ওয়ার্ডে দলমাদল রোডে ছিন্নমস্তা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজস্থান থেকে মায়ের মূর্তি আনা হয়। নিত্যপুজো শুরু হয়। এছাড়াও প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো ও ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রতিবছর মন্দির প্রতিষ্ঠার দিবসে বিশেষ অন্নভোগের আয়োজন হয়। ওইদিন হাজার হাজার ভক্ত প্রসাদ খেতে আসেন। আগে এলাকাটি নির্জন হলেও পরবর্তীকালে মায়ের মাহাত্ম্যের কারণে ক্রমশ ভক্তের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলা থেকে রোজ প্রচুর ভক্ত পুজো দিতে আসেন। বিষ্ণুপুরে ভিআইপিরা এলে ঐতিহাসিক মন্দির দেখার পাশাপাশি ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দিরে প্রণাম না করে ফিরে যান না।
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর উপসংশোধনাগারে মোট ৬৬জন বন্দি রাখার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। যদিও সংখ্যাটা অধিকাংশ সময়েই বেশি থাকে। সংশোধনাগারে কয়েকটি ছোট রুম সহ একটি বড় হলঘর রয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডের পাশে গোটা চত্বরে টগর সহ গোটা দশেক নানা ফুলের গাছ রয়েছে। পুরুষ বন্দিরা ওই গাছে ফুল তোলার পর তা জেলের ৩নম্বর ওয়ার্ডে সুতো দিয়ে গাঁথা হয়। বছরের অন্যান্য সময় ফুল কম ফুটলেও গ্রীষ্মকালে টগরের প্রচুর ফুল ফোটে। ওই সময় বিশাল বড় মালা গাঁথা হয়। বন্দিরা ভীষণ যত্ন ও ভক্তি ভরে মালা গাঁথে। তাতে বন্দিদের অনেকটা সময়ও কেটে যায়। কালীপুজোর দিন হরেক রকমের ফুল দিয়ে বেশ বড় মাপের মালা গাঁথা হয়। সেই মালা জেলেরই চতুর্থ শ্রেণীর এক মহিলা কর্মী তা মন্দিরে পৌঁছে দেন। তা আসার পর বিশেষ পুজো হয়। ওই কর্মীর হাতে পুজোর পর প্রসাদ দেওয়া হয়। যদিও ওই প্রসাদ নিরাপত্তার কারণে তা জেলের ভিতরে পাঠানো হয় না। জেলের কর্মীদের মধ্যেই তা বিতরণ করা হয়। পুরোহিতরা বলেন, বিষ্ণুপুরে ছিন্নমস্তা মায়ের বৈশিষ্ট্য হল ওই পুজো বৈষ্ণব মতে হয়। মায়ের বিসর্জন হয় না। কালী পুজোর রাতে নরনারায়ণ সেবা হয়।