উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বাঁশিটাঁড় ছেড়ে বাঘমুণ্ডি বরাবর দশ মিনিট এগলে পাতলা জঙ্গলের ফোল্ডারে দিগারডি গ্রাম। এখানে যে আবাসে থাকা, তার আবহ কুসুম করম শাল মহুলের সবুজ ফ্রেমে বাঁধা। গাছে ডাকে কাজললতা পাখি। কাছে দূরে ঘুঘুর সুরে বন বিষণ্ণ। সামনে মুররা পাহাড়ের শীর্ষে শীত-সকালে কুয়াশার পাগড়ি ওড়ে। বনের ক্যাটওয়াকে ঘোরে ময়ূর বাহিনী।
ভুচুণ্ডি পাহাড় গোড়ায় অবিনাশের চা ও তেলেভাজার দোকান। মাইলখানেক দূরে শ্রীরামপুর গ্রামের পথে শাল পলাশের বনে হাতির ভীতি, হেড়ল শেয়াল। এইসব আতান্তর পায়ে ঠেলে সন্ধ্যায় গরম ভাবরা (নোনতা জিলিপি), চা বালুসাইসহ মজদুর মণ্ডলীর আসরে মৌজার নীতি-দুর্নীতির সালিশি বসে অবিনাশের এজলাসে। ভ্রমণ অর্থে শুধু প্রকৃতিকে বোঝাপড়া নয়। প্রাকৃতজনকে বোঝা এবং পড়া। তাঁদের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বন্ধুতার কড়া নাড়া।
এখানে বন আবাসে বসে দেখুন বসন্তের কুটুম্ব কুহু ডেকে বনকে মাতায়। বর্ষায় মল্লারে বাজে বন সারাক্ষণ। শরতে ড্যামের ধারে কাশবুড়োদের শীতে ঝরা পাতার বন যেন কাঙাল হরিজন।
মহাসম্মেলন।
অদূরে খাপরা চালা, মাটির দেওয়াল জুড়ে দিগারডি গ্রাম। এখানে মানুষের মাঠে খাটা আর পশুপালন—দুই জীবিকা।
সেবারে ভরা শ্রাবণে বন ধরে এগিয়ে ধসকা গাঁয়ের প্রান্তে পাহাড়ের বেষ্টনিতে এসে থেমেছি। মাথার ওপরে ঘন ঘন বজ্রনাদ। কালশিটে মেঘ ফেড়ে বৃষ্টির ফোয়ারা। অদূরে সন্ন্যাসী বটের নীচে গিয়ে দেখি, এক উদাসী বাবা আগাম মজুত সেখানে। দৃষ্টি তার বৃষ্টি ছাড়িয়ে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ছাড়িয়ে দিক্শূন্যপুরে। সামনে চলেছে নটরাজের তাণ্ডব স্নান। মুখে কোনও কথা নাই, তবু কত কথা হয় দু’জনায়। হঠাৎ চিহড় পাতার বর্ষাতি মাথায় চাপিয়ে তিনি বলেন—
—আসি গো।
—সে কী! নামটা জানলাম না।
—আমি জীবন। বলেই তিনি পা চালিয়ে তেপান্তর পার।
পথ নির্দেশ-
অতিমারীর ফেরে গণপরিবহণ কার্যত বন্ধ। ভরসা ব্যক্তিগত বাহন অথবা ভাড়া করা যান। পুরুলিয়ার দিগারডি গ্রামের বন আবাসটি কলকাতা থেকে মানবাজার হয়ে দূরত্ব প্রায় তিনশো কিলোমিটার।