কর্মপ্রার্থীদের নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ আছে। সরকারি বা আধাসরকারি ক্ষেত্রে কর্ম পাওয়ার সুযোগ আছে। ব্যর্থ ... বিশদ
কুয়ালালামপুর বেশ ছড়ানো ছিটোনো শহর। পুরো দুটো দিন দিলে ভালো, তাহলে অনেক কিছু দেখার সুযোগ মেলে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার্স, যার সঙ্গে বাংলা ও হিন্দি ছবির দৌলতে আমরা অনেকেই পরিচিত। প্রায় ৪৫২ মিটার উঁচু এই টাওয়ারে মোট ৮৮ তলা আছে। টিকিট কেটে লিফটে চেপে পৌঁছে যান ৪১ ও ৪২তলা জুড়ে থাকা স্কাইব্রিজে। সেখান থেকে পাখির চোখে দেখে নিন কুয়ালালামপুর শহর। মনে রাখবেন সোমবার বন্ধ থাকে স্কাইব্রিজ। আর অন্যান্য দিনে বেশ লাইন পড়ে, তাই আগাম টিকিট কেটে যাওয়া ভালো। ঠিক এরকমভাবেই শহরের দৃশ্য দেখে নিতে পারেন কে এল টাওয়ার থেকে। অবশ্যই দেখবেন এই টাওয়ারের নীচে গড়ে ওঠা বুকিত নানাস রিজার্ভ ফরেস্ট। অবশ্যই দেখবেন ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম, জামেক মসজিদ, চিড়িয়াখানা, বার্ড পার্ক আর কুয়ালালামপুরের নতুন আকর্ষণ দাতারান মারডেকার কাউন্টডাউন ক্লক। এই মারডেকা স্কোয়ারেই ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট স্বাধীন মালয়েশিয়ার পতাকা উত্তোলন হয়। মালয় এবং চীনাদের সঙ্গে এখানে বসতি গড়েছিলেন ভারতীয়রাও। অবশ্য জালান মসজিদ এলাকা জুড়ে থাকা লিটল ইন্ডিয়া এখন চলে গিয়েছে ব্রিকফিল্ড অঞ্চলে। জমজমাট পেটালিং স্ট্রিট জুড়ে রয়েছে চীনে বাজার। কুয়ালালামপুর এসে শপিং করবেন না তাও কী হয়! শহর বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে দেখুন চোখ ধাঁধানো সব শপিং মল। কুয়ালালামপুরের উত্তরে, শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে বাটু কেভ। লাইমস্টোন পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে একাধিক গুহা। বড় গুহার মধ্যে শতাধিক বছরের পুরনো মুরুগান মন্দির। ২৭২টি সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছতে হয় সেখানে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে থাইপুসম উৎসব পালিত হয় মহাসমারোহে। যাতায়াতের পথে মালয়েশিয়ার বিখ্যাত পিউটার ফ্যাক্টরি রয়্যাল সেলাঙ্গর এবং বাটিক ফ্যাক্টরি দেখে নিতে পারেন। সময় পেলে ঘুরে নেবেন কুয়ালালামপুর সংলগ্ন পুত্রাজায়া। দেশের রাজধানী কুয়ালালামপুর হলেও, প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক কাজকর্ম চলে এই নতুন শহর থেকে।
কুয়ালালামপুর থেকে গাড়িতে পৌনে এক ঘণ্টা মতো লাগে পাহাং প্রদেশের গেন্টিং হাইল্যান্ডস পৌঁছতে। পাহাড় জুড়ে এক বিশাল বিনোদন মহাযজ্ঞ - পোশাকি নাম রিসর্টস ওয়ার্ল্ড গেন্টিং। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, শপিং মল, একাধিক গেম পার্ক, রকমারি শো, কী নেই সেখানে! এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও মনোরম। মেঘ রোদ্দুরের খেলা চলতেই থাকে। দিনে দিনে ঘুরে নিতে পারেন বা এক রাত কাটাতেও পারেন এখানে। সরাসরি গাড়িতে পৌঁছতে পারেন। তবে ভালো লাগবে যদি মাঝপথে আওয়ানা স্টেশন থেকে কেবলকার চেপে পাহাড়চূড়োর স্কাই অ্যাভেনিউ স্টেশনে এসে নামেন। এক টিকিটেই দেখে নিতে পারবেন চীন সিউই কেভ টেম্পল।
পাহাং প্রদেশের আর এক পাহাড়ি শহর ক্যামেরন হাইল্যান্ডস। কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার উইলিয়াম ক্যামেরন এই জায়গার সন্ধান পান, যদিও বলা হয় তাঁর তৈরি ম্যাপগুলি হারিয়ে যাওয়ার ফলে আরও চার দশক পর আর এক ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার জর্জ ম্যাক্সওয়েলের হাত ধরে এই পাহাড়ি প্রদেশ বিখ্যাত হয়। আমাদের দার্জিলিংয়ের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে।
কুয়ালালামপুর থেকে যাওয়ার পথে পড়বে লতা ইস্কান্দার। পাহাড়ের গা বেয়ে বহু ধারায় ভাগ হয়ে নেমে আসছে ঝরনা। নীচে পাথরের খাঁজে তৈরি করেছে ছোট জলাশয়। লোকজন ঝরনার জলে গা ভিজিয়ে মজা পায়। তার একটু পরেই গাড়ির পথ উঠতে থাকে ওপরে। দু’ধারে চা বাগান। পাহাড় জুড়ে ছোট ছোট শহর, গ্রাম—টানাহ রাতা, ব্রিনচাং, বোহ ইত্যাদি। সঙ্গে গাড়ি না থাকলে, টানাহ রাতাতেই থাকা সুবিধাজনক। ক্যামেরন হাইল্যান্ডস-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও দেখার অনেক কিছু আছে। যেমন- চা বাগান, ব্রিটিশ আমলের বাড়ি ঘর (এখন অবশ্য অনেকগুলি হোটেল বা রেস্তরাঁয় পরিণত হয়েছে), স্ট্রবেরি বাগান, অর্কিড নার্সারি ইত্যাদি।
মালয়েশিয়ার এক বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত লংকাভি। কিন্তু কুয়ালালামপুর ছুঁয়ে অল্প দিনের বেড়ানোর প্ল্যান থাকলে যাওয়া মুশকিল। অথচ সমুদ্র একেবারেই অধরা থেকে যাবে? সে ক্ষেত্রে ঘুরে আসুন পুলাও প্যাংকর। কুয়ালালামপুর থেকে সড়কপথে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে লুমুট, সেখান থেকে বোটে চেপে প্যাংকর। স্থানীয় ভাষায় পুলাও মানে দ্বীপ। নীল জলের ঢেউ এসে লুটোপুটি খাচ্ছে সোনালি বালুভূমির কোলে। ট্যাক্সি ভাড়া করে বা সাইকেল চেপে ঘুরে নিন দ্বীপটি। বোটে করে সমুদ্র ভ্রমণও চলতে পারে। সমুদ্রের মাঝখানে এই দ্বীপে রয়েছে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা।
তথ্য:
সাধারণত থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ঘুরে নিতে পারেন মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর। কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়ার সরাসরি উড়ান আছে কুয়ালালামপুর। ভারতীয়দের ভিসা লাগে।