পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বর্তমানে সরকারি চাকরির বাজারে নাকি মন্দা চলছে। এই মতে আপনিও কি বিশ্বাসী?
না, আমি এই মতে একেবারেই বিশ্বাস করি না। ঠিকভাবে পড়াশোনা করলে বর্তমানে সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ অবশ্যই আছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক কিছু চাকরির ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা সেখানে রিক্রুটমেন্ট আপাতত বন্ধ আছে। তার বাইরে আরও বেশ কিছু পথও কিন্তু খোলা রয়েছে। যেমন আমরা জেলার ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে দেখেছি এসএসসি ছাড়া তারা আর অন্য কিছুতেই আগ্রহী নয়। সেটা করলে হবে না। যদি তুমি সরকারি চাকরি চাও তাহলে আরও নানা দিক এক্সপ্লোর করতে হবে। সরকারি চাকরিতে আরও কী কী সুযোগ আছে সেটা দেখতে হবে। এক জায়গায় থেমে থাকলে চলবে না। নিজেদের বদলাতেও হবে। আর অবশ্যই হতাশ হলে চলবে না। অনেকেই আছে সরকারি চাকরির জন্য পড়তে এসে কিছু মাসের মধ্যেই খুব হতাশ হয়ে পড়ে। তারা তাৎক্ষণিক চাকরি চায়। কিন্তু সেটা এখানে সম্ভব নয়। এটা তো ঠিক তুমি বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করে সারাদিন যে মানসিক চিন্তার মধ্যে দিয়ে কাটাবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তা থাকে না। একবার সেখানে ঢুকে যেতে পারলে বাকি জীবনের জন্য চিন্তা অনেকটাই দূর হয়। তাহলে সেই জায়গায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা তো অনেক কঠিন হবেই। তার জন্য মানসিক ধৈর্য দরকার আর লেগে থাকার দম দরকার।
আচ্ছা আপনি বললেন অনেকেই কয়েকমাসের মধ্যে হতাশ হয়ে পড়ে, তাদের মনোযোগ বাড়ানোর উপায় কী হতে পারে?
মনোযোগ বাড়ানোর জন্যই তো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য দরকার। তাদের জন্য ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং ক্লাস এবং মাঝে মাঝেই মোটিভেশনাল ক্লাসের আয়োজন করা হয়। তারা যাতে নিজেদের লক্ষ্যে স্থির থেকে এগতে পারে সেটাই মূল বিষয়। অনেক সময়ই বাড়ি থেকে চাপ আসে, টাকা রোজগার করার ব্যাপার থাকে। তাছাড়া পকেটমানিও দরকার হয়, কিন্তু সেসব ছাড়িয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যাওয়াটাই জরুরি। চাকরি একবার পেয়ে গেলে বাকি সব এমনিই হাতে এসে যাবে। সেটা মাথায় রেখে এগতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরির ওপর ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ভরশীলতা কতটা? তারা কি আগের মতোই উৎসাহ নিয়ে নিজেদের তৈরি করছে?
হ্যাঁ, এখনও অনেক ছাত্র-ছাত্রী সরকারি চাকরির জন্য পড়তে আসছে। আসলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরি পাচ্ছে একথা ঠিক, কিন্তু সেখানে বেতন খুবই কম। তার সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। সারা ভারতেই এখন ছাঁটাইয়ের পরিমাণ বেড়েছে। তুলনায় সরকারি চাকরি অনেক স্থিতিশীল। আর যারা সঠিকভাবে পড়াশোনা করবে তারা সরকারি চাকরি পাবেও। কারণ পরীক্ষার্থীদের অনেকে নিজেরাই নানা বই কিনে পড়াশোনা করে। তারা হয়তো বিষয়টা বোঝে কিন্তু সঠিক ট্যাকটিস শিখে উঠতে পারে না। আবার কিছু ছাত্র-ছাত্রী কোনও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়াশোনা করলেও মন দিয়ে নিজেরা প্র্যাকটিস করে না। ফলে তারাও সেভাবে এগতে পারে না। বাকি যে অংশ দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে করে, তারা সরকারি চাকরি পাবেই, এটুকু বলতে পারি।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোন কোন দিকগুলি একজন পরীক্ষার্থী অনুসন্ধান করতে পারে?
দেখুন, সরকারি চাকরি কিন্তু বিভিন্ন বয়সের জন্য হয়। কেউ যদি মাধ্যমিক পাশ করার পর মনে করে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুত হবে, সেটা করতে পারে। আবার কেউ যদি উচ্চমাধ্যমিকের পর প্রস্তুতি নিতে চায়, সেও এক্ষেত্রে এলিজিবল। আর গ্র্যাজুয়েশন তো যোগ্যতার উচ্চতম ধাপ। ‘গ্রুপ ডি’ ক্যাটাগরির চাকরিতে কিন্তু মধ্যমিকের পর থেকেই আবেদন করা সম্ভব। আবার ডব্লুবিসিএস-এর জন্য গ্র্যাজুয়েশন দরকার। হাইকোর্টে ক্লার্কশিপের জন্যও পরীক্ষা দেওয়া যায় আবার স্কুল সার্ভিস কিংবা পিএসসি মিসলেনিয়াস এসব কিছুও আছে। আমার কাছে যারাই আসে, তাদের আমি প্রপার কাউন্সেলিং করি। তারপর পরীক্ষার ক্ষেত্র পছন্দ করতে বলি। সরকারি চাকরির অনেকদিক রয়েছে। শুধু ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে সেগুলিকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এগতে হবে।
যারা চাকরির পরীক্ষায় বসবে, তাদের সবার একটা শুরুর সময় থাকে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বিষয়টা ঠিক করে উঠতে পারে না যে, কবে থেকে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। আপনি এক্ষেত্রে কী বলবেন?
এটা ঠিক। শুরুর সময়টা খুব প্রয়োজনীয়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেই অনেকে ঠিক করে নেয় সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসবে। সেই ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশনের প্রথম বছর থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিতে হবে। প্রথম বছর কলেজে পড়ার চাপ কম থাকে। তাই সেই বছরটা লার্নিং ইয়ার, পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্লাসগুলি বেশি মাত্রায় নিতে হবে। পরের বছর একটু চাপ বাড়বে কলেজে। সেই বছর তাই সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্লাস কম হবে। বরং বাড়িতে প্র্যাকটিসের পরিমাণ বাড়বে। আর তৃতীয় বছর কলেজে চাপ সবথেকে বেশি। তাই সেই বছরে পরীক্ষার জন্য শুধু মক টেস্ট দিয়ে যেতে হবে। এইভাবে করলে দেখা যাবে গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা ভাবছে গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতির ক্লাসে ভর্তি হবে তাদের ধারণা ভুল। কারণ গ্র্যাজুয়েশনের পর এমনিতেই বাড়ি থেকে প্রেশার থাকে কিছু করার আর তখন আবার নতুন করে অনেকেই পড়ায় মন বসাতে পারে না। তাই তারা সহজেই ধৈর্য হারায়।
পরীক্ষা প্রস্তুতির সময় ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিদিনের রুটিন কেমন হওয়া উচিত?
আমার মতে, যদি ছাত্র-ছাত্রীরা দিনের পড়া দিনেই করে ফেলতে পারে তার থেকে ভালো আর কিছু হয় না। মানে যেদিন প্রস্তুতির জন্য ক্লাস করছে সেদিন রাতেই সেই পড়াটা করে রাখল। তাহলে মনে থাকার প্রবণতা বাড়বে। কোনও জায়গায় বুঝতে অসুবিধা হলেও সেটা সঙ্গে সঙ্গে ধরে পরের দিন শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবে।
সেলফ স্টাডি এবং এক্সটার্নাল হেল্প কোনটা কতটা জরুরি?
দুটোই সমান জরুরি। বাইরের কোনও সংস্থার সাহায্য ছাড়া বই কিনে পড়লে সেখানে পড়াটা হয় কিন্তু ট্যাকটিস মানে কত কম সময়ে প্রবলেম সলভ করা যায় সেটাই শেখা হয়ে ওঠে না। আর এইসব পরীক্ষায় প্রতি সেকেন্ডের মূল্য অপরিসীম। তাই খুব দরকার কম সময়ে পেপার সলভ করতে শেখা। আবার শুধু কোথাও টিউশন নিলেই হবে না, সেখানে যা শিখছে সেটা যদি বাড়িতে প্র্যাকটিস না করা হয় তাহলে কোনও লাভ নেই।
ছাত্র-ছাত্রীরা তো অনেক আগে থেকেই ভেবে রাখে যে তারা সরকারি চাকরির দিকেই যাবে। এ ক্ষেত্রে কি একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রীর বিষয় নির্বাচন গুরুত্ব পায়?
না, সেরকম কোনও ব্যাপার নেই। সরকারি চাকরি এমন এক বিষয় যেখানে সব সাবজেক্টের মূল্য আছে। হয়তো কেউ কমার্স নিয়ে পড়েছে, আবার কেউ সায়েন্স বা আর্টস। হয়তো সায়েন্সের ছাত্র-ছাত্রী অঙ্কে ভালো কিন্তু ইতিহাসের সাল তারিখ সেভাবে মনে রাখতে পারে না। আবার আর্টসের ছাত্র-ছাত্রীর ইতিহাস নখদর্পনে। ফলে আলাদা করে কোনও সাবজেক্ট নয়, যার যা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে সেটা নিয়েই এগিয়ে যাক। সঙ্গে বাহ্যিক জ্ঞান সঞ্চয় যেন চলতে থাকে।