বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদেশে আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। আবার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অ্যালোপ্যাথি ওষুধের বড় কারখানা তৈরি হয় আমাদের রাজ্যেই ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ এর হাত ধরে। বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে ওষুধ রপ্তানি থেকে রাজস্ব আদায়ে ভারতের স্থান উল্লেখযোগ্য জায়গায় রয়েছে।
বিজ্ঞান এবং টেকনোলজির বিবর্তন ওষুধ শিল্পে নিয়ে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। ফার্মাসিকে কয়েকটিভাগে ভাগ করে পড়ানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
ফার্মাসিউটিক্স- ওষুধের নতুন কম্পাউন্ড তৈরির জন্য এই বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। শুধু মাত্র নতুন কম্পাউন্ড তৈরি করা নয়, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য সেই ওষুধের ব্যবহার নির্দিষ্ট করাও ফার্মাসিউটিক্সের কাজ। আবার গবেষণার মাধ্যমে পুরানো ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে নতুনভাবে ব্যবহার যোগ্য করে তোলাও এই বিষয়টির কাজ। এর আবার কতকগুলি ভাগ রয়েছে –ফার্মাসিউটিক্যাল ফর্মুলেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং, ডিস্পেন্সিং ফার্মাসি, ফিজিক্যাল ফার্মাসি।
মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি – ফার্মাসির এই শাখাটি উন্নত ওষুধ তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এই মাল্টি ডিসিপ্লিন শাখার মাধ্যে রয়েছে কেমিস্ট্রি, অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি এবং বায়োলজির বিভিন্ন শাখার যোগাযোগ।
হার্মাকোনজি – ওষুধ কেবলমাত্র সিন্থেটিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় না। অনেক সময় নানা ধরনের গাছগাছড়া, জীবের অংশ দিয়েও তৈরি হয়। সেটি দেখার জন্য এই বিষয়টি সাহায্য করে থাকে।
ফার্মাসি প্র্যাক্টিস –সমাজে ফার্মাসি প্র্যাকটিসও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে –ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশন, এটি মূলত হসপিটালে দেখা যায়। রোগীর অসুখের উপর নির্ভর করে দেওয়া ওষুধের স্লিপ থেকে ওষুধ দেওয়া পর্যন্ত সব কিছু বুঝিয়ে দেন ফার্মাসিস্ট । এছাড়াও রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কেয়ার, কমিউনিকেশন স্কিল, পেশেন্ট কেয়ার।
ফার্মাকোলজি –ফার্মাসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। জীবন্ত কলা কোষে ওষুধের প্রভাব কেমন হতে পারে বা কী হচ্ছে সেটা দেখে ফার্মাকোলজি।
নতুন নতুন ওষুধের পাশাপাশি জীবের শরীরে তার প্রভাব কেমন হতে পারে সেটাও দেখে নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়াটির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নতুন ওষুধ তৈরি, ওষুধের কোয়ালিটি কন্ট্রোল, প্যাকেজিং, কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স সহ বিভিন্ন বিষয়।
ওষুধ শিল্পের সামগ্রিক উন্নতিতে এ রাজ্যেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। শিল্পের পাশাপাশি ওষুধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে এই রাজ্যে।
এ রাজ্য থেকে ফার্মাসির উপর চার বছরের ব্যাচেলর অব ফার্মাসি, দু’বছরের মাস্টার অব ফার্মাসি (ফার্মাসিউটিক্স), দু’বছরের মাস্টার অব ফার্মাসি (ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যানালিসিস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স), দু’বছরের মাস্টার অব ফার্মাসি (ফার্মাকোলজি), দু’বছরের মাস্টার অব ফার্মাসি (ফার্মাকোলজি অ্যান্ড টক্সিকোলজি) এবং দু’বছরের ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি পড়া যায়।
ব্যাচেলর অব ফার্মাসি কোর্সটি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি স্বীকৃত এবং এআইসিটিই অনুমোদিত কোর্স। এর জন্য উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথামেটিক্স এবং বায়োলজি নিয়ে পাশ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসতে হয় বা ‘এআই ট্রিপল ই’ উত্তীর্ণ হতে হয়।
এম ফার্ম (মাস্টার অব ফার্মাসি) পড়ার জন্য বি ফার্ম (ব্যাচেলর অব ফার্মাসি) পাশ করতে হবে এবং জিপিএটি (গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসি অ্যাপটিটিউট টেস্ট) স্কোর থাকলে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি প্রবেশ করা যায় । যদি এই স্কোর না থাকে তবে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরীক্ষায় বসতে হয়। এম ফার্ম কোর্সটি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি স্বীকৃত কোর্স।
রাজ্য সরকারের হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় দু’বছরের ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথামেটিক্স এবং বায়োলজি নিয়ে প্র্যাকটিক্যাল এবং থিওরিটিক্যালে পাশ করতে হবে। এই চারটি বিষয়ের মোট নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক যোগ্যতায় হোমিওপ্যাথি ফার্মাসিও পড়ে নেওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ কাউন্সিল অব হোমিওপ্যাথি মেডিসিন স্বীকৃত হোমিওপ্যাথি ফার্মাসি পড়ানো হয় বিভিন্ন কলেজে। এটি এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স।
প্রায় সব কোর্সগুলিতে থাকে হিউম্যানিটিজ, ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যানালিসিস, রিমেডিয়াল ম্যাথামেটিক্স বা বায়োলজি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ফার্মাসিউটিক্স, অ্যাডভান্সড ম্যাথামেটিক্স, ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্স, ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, হেলথ এডুকেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হসপিটাল ফার্মাসি সহ বিভিন্ন বিষয়।
ফার্মাসি নিয়ে পড়ে কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রি, হসপিটাল, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে। এখানে প্রোডাকশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের মতো কাজ করতে হয়। এছাড়া ম্যানুফ্যাকচারিং কেমিস্ট, রিসার্চার, ড্রাগ ইন্সপেক্টর, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, হেলথ কেয়ার কনসালট্যান্ট বা রোগীদের জন্য আইনজ্ঞ হওয়া যায়। কাজের সুযোগ রয়েছে কমিউনিটি ফার্মাসি, হসপিটাল ফার্মাসি, ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি, ডিফেন্স, কাস্টমস, ব্যাঙ্ক বা বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল সংস্থায়। মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, মেডিক্যাল প্রোডাক্ট ডিটেলিং-এই সমস্ত মার্কেটিং বিভাগে এদেশের নামী কোম্পানিতে ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে।