বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সংখ্যালঘু মেধাবী পড়ুয়াদের পড়াশোনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও চালু করেছে একাধিক স্কলারশিপ। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের পক্ষ থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত দেওয়া হয় বিশেষ একটি বৃত্তি। নাম ‘ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ’। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের মতোই এতেও রয়েছে তিনটি স্তর। সেই অনুযায়ী দেওয়া হয় বৃত্তি। এছাড়া রয়েছে কিছু নিয়মকানুন। যেমন-আবেদন করার আগে ওই প্রার্থী শেষ যে পরীক্ষা দিয়েছেন সেটিতে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে এই রাজ্যেরই বাসিন্দা হতে হবে। তাঁদের পারিবারিক বার্ষিক আয় সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু এতসব সুযোগ থাকতেও অনেকেই এই বৃত্তির সুবিধাই জানেন না। কারা আবেদনের যোগ্য এবং কীভাবেই বা করা যাবে দেখে নেওয়া যাক। আগে শুধুমাত্র অফলাইনে করা গেলেও এখন যুগ পাল্টেছে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে আবেদনের পদ্ধতিতেও এসেছে বদল। তাই বর্তমানে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও করা যাচ্ছে বৃত্তির জন্য আবেদন।
প্রথমে রাজ্যসরকারের ঐক্যশ্রী প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা যাক। এই বৃত্তিতে রয়েছে তিনটি ভাগ। প্রথমটি হল-প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ক্ষেত্রে মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স বাবদ প্রতি বছর দেওয়া হয়ে থাকে ১ হাজার ১০০ টাকা। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি বছর দেওয়া হয় ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স বাবদ প্রতি বছর দেওয়া হয় আরও ১ হাজার ১০০ টাকা। হস্টেল পড়ুয়াদের জন্য এই অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ বার্ষিক ৬ হাজার ৬০০ টাকা। দ্বিতীয় ভাগটি হল, পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ। এতে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী পড়ুয়াদের দেওয়া হয়ে থাকে বার্ষিক ৭ হাজার ৭০০ টাকা। টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল শাখায় পাঠরতদের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ বছরে ১১ হাজার টাকা। তবে দুটি ক্ষেত্রেই মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স বাবদ প্রতি বছর দেওয়া হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং হস্টেল পড়ুয়াদের জন্য এই অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ বার্ষিক ৪ হাজার ২০০ টাকা। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে স্কলারশিপ দেওয়া হয় বার্ষিক ৩ হাজার ৩০০ টাকা। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স বাবদ প্রতি বছর দেওয়া হয় আরও ৩ হাজার ৩০০ টাকা। এক্ষেত্রেও হস্টেল পড়ুয়াদের অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ ফি বছরে ৬ হাজার ৩০০ টাকা। পিএইচডি এবং এমফিল স্তরে যাঁরা পড়াশোনা করছেন তাঁদেরও দেওয়া হয় স্কলারশিপ। পরিমাণ বছরে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে দেওয়া হবে ৬ হাজার টাকা। হস্টেল থেকে পাঠরতদের ক্ষেত্রে এই অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ বার্ষিক ১৩ হাজার ২০০ টাকা। উপরিউক্ত সবকটি স্কলারশিপের ক্ষেত্রেই আবেদনকারীর বার্ষিক পারিবারিক আয় হতে হবে ২ লক্ষ টাকার নীচে। এছাড়া ওই পড়ুয়াকে রাজ্যেরই কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হবে। এই প্রকল্পের তৃতীয় ভাগটি হল মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ। এতে পেশাদারি বা কারিগরি বিষয়ে পাঠরতরা আবেদনের যোগ্য। যেমন- মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ল’, সিএ, ম্যানেজমেন্ট বা সমতুল বিষয়ে পাঠরতরা এই স্কলারশিপে আবেদনের যোগ্য। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের বাইরে নির্দিষ্ট কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও মিলবে বৃত্তি। তবে আবেদনকারীকে অবশ্যই এই রাজ্যেরই বাসিন্দা হতে হবে। পাশাপাশি বার্ষিক পারিবারিক আয় হতে হবে আড়াই লক্ষ টাকার নীচে। এই স্কলারশিপের পরিমাণ প্রতি বছর ২২ হাজার টাকা। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে দেওয়া হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। হস্টেল থেকে পাঠরতদের ক্ষেত্রে এই অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ বার্ষিক ১১ হাজার টাকা।
কীভাবে আবেদন করতে হয়? আগ্রহীরা অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর http://wbmdfcscholarship.gov.in/ -এ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর একটি বৈধ ই-মেল আইডি থাকতে হবে। অনলাইনে আবেদনের পর ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাওয়া যাবে। সেটি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে লগ ইন করে নির্দিষ্টি ফর্ম পূরণ করতে হবে। যথাযথ ভাবে ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করার পর আবেদনপত্রের প্রিন্ট আউট নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় নথিপত্র সহ যেখানে আবেদনকারীরা পাঠরত সেখানে ওই ফর্মটি জমা দিতে হবে। এই বিষয়ে বিশদে জানার জন্য ফোন করতে পাবেন হেল্পলাইনে। নম্বরটি হল ১৮০০ ১২০ ২১৩০।
এতক্ষণ তো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রাজ্য সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে আলোচনা হল। এবার জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি সম্পর্কেও। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে এই বৃত্তিও দেওয়া হয় তিনটি স্তরে। প্রথমটি হল প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ। এটি দেওয়া হবে প্রথম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরত প্রায় ৩০ লক্ষ সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের। শেষ দেওয়া পরীক্ষায় পেয়ে থাকতে হবে অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর। প্রার্থীর পারিবারিক বার্ষিক আয় এক লক্ষ টাকার বেশি হওয়া যাবে না। প্রথম-দশম শ্রেণীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স বাবদ প্রতি মাসে দেওয়া হবে ১০০ টাকা। তবে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণীর ক্ষেত্রে হস্টেল থেকে পাঠরতদের জন্য এই টাকার পরিমাণ মাসিক ৬০০ টাকা। এছাড়া ষষ্ঠ-দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের অ্যাডমিশন ফি বাবদ বার্ষিক ৫০০ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ প্রতিবছর ৩৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়টি হল, পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ। এটি দেওয়া হবে একাদশ শ্রেণী-স্নাতকোত্তর/ডিপ্লোমা পাঠরতদের। পাঁচলক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হবে এই বৃত্তি। আইটিআই, বিএড, পিএইচডি এবং এমফিল কোর্স পাঠরতরাও এটিতে আবেদন করতে পারবেন। এটির ক্ষেত্রেও শেষ পাশ করা পরীক্ষায় পেতে হবে অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর। প্রার্থীর পারিবারিক বার্ষিক আয় দু’লক্ষ টাকার বেশি হওয়া যাবে না। এছাড়া আবেদনকারীর নিজস্ব একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এই স্কলারশিপে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ক্ষেত্রে বার্ষিক ৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে দেওয়া হবে প্রতি মাসে ২৩০ টাকা। হস্টেলে থেকে পাঠরতদের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ ৩৮০ টাকা। বৃত্তিমূলক বা টেকনিক্যাল শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাঠরতদের ক্ষেত্রে প্রতি বছর দেওয়া হয়ে থাকে ১০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্সের পরিমাণ উচ্চমাধ্যমিকস্তরের মতোই। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরতদের জন্য প্রতি বছর দেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে প্রতি মাসে পাবেন ৩০০ টাকা। তবে হস্টেলে থেকে পাঠরতদের জন্য এই টাকার পরিমাণ ৫৭০ টাকা। পিএইচডি এবং এমফিল কোর্সের পড়ুয়াদের জন্য মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে দেওয়া হবে মাসিক ৫৫০ টাকা। হস্টেলে থেকে পাঠরতদের ক্ষেত্রে দেওয়া হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। তৃতীয়টি হল, মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ। স্বীকৃত কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশাদারি বা কারিগরি বিষয় নিয়ে পাঠরতরা এই বৃত্তিতে আবেদনের যোগ্য। এছাড়া মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসি, ’ল, সিএ, ম্যানেজমেন্ট বা সমতুল বিষয়ে পাঠরতরাও এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন। তবে মাত্র ৬০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে এই বৃত্তি দেওয়া হবে। প্রার্থীর নিজস্ব একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এছাড়া প্রার্থীর পারিবারিক বার্ষিক আয় দু’লক্ষ টাকার বেশি হওয়া চলবে না। এতে বৃত্তির পরিমাণ বার্ষিক ২০ হাজার টাকা। মেনটেনেন্স অ্যালাওয়েন্স হিসেবে দেওয়া হবে মাসিক ৫০০ টাকা। তবে যারা হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ মাসিক ১০০০ টাকা। আবেদন করার পদ্ধতি— বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর https://scholarships.gov.in/ সাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন পদ্ধতি এবং স্কলারশিপ বিষয়ে বিশদ জানতে ভিজিট করুন http://www.minorityaffairs.gov.in/ ওয়েবসাইট। আগ্রহীরা ওয়েবসাইটে উল্লেখিত ১৮০০ ১১ ২০১ নম্বরেও ফোন করতে পারেন।