যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
বাস্তবে সফল হওয়ার বীজটা লুকিয়ে থাকে প্রত্যেকেরই বাড়ির পরিবেশ, শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর। কারণ, টলমল পায়ে হাঁটতে শেখার পর শিশুর মুখে বুলি ফোটে। আর, সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে জানার আগ্রহ। বড়দের কাছে তা হাস্যস্পদ হলেও শৈশবের সেই জিজ্ঞাসার উত্তর মেলাটা কিন্তু খুব জরুরি। আকাশ কেন নীল, রাত কেন হয়, বাবা কেন অফিসে যায়, বৃষ্টি কেন পড়ে— এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বড়দের কাছে সহজ হলেও বাচ্চাদের কাছে সহজ করে বর্ণনা করাটা কিন্তু সকলের কাছে অতটা সহজ নয়। বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথা ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আবদুল কালাম তাই বলেছিলেন, সফল হতে গেলে সারা জীবন ছাত্র হয়ে থাকো। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকী কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন কর্তাকে প্রশ্ন করার অভ্যাসটা যেন কোনও দিন চলে না যায়। কিন্তু কতজনই বা পারে জীবনভর ছাত্র হয়ে থাকতে। একটু বড় হতেই হারিয়ে যায় প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা। মনের মধ্যে বাসা বাঁধে ভয়ভীতি, হীনম্মন্যতা। আমি বোধ হয় কোনও ভুল, হাস্যকর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ফেলছি। লক্ষ্যভেদের লক্ষ্যে এগতে চাইলে এই আড়ষ্টতা কাটাতেই হবে। ‘লোকে কী ভাবল’ তা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।
ইংরেজিতে কথা আছে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। কেরিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে এটা একদিক দিয়ে যেমন ঠিক আবার অন্য দিক দিয়ে এ কথাটা সব সময় মেলেও না। ক্লাসের ফার্স্ট বয়। বোর্ডের রেজাল্ট দুর্দান্ত, ইচ্ছে ছিল পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্থাৎ গবেষণা। নিজের প্রচেষ্টা ও বাবা-মায়ের ইন্ধনে সাকার হল সব কিছুই। বিদেশে সেটেলড। আবার অন্য একটা উদাহরণ। এই ছেলেটিও ক্লাসের প্রথম সারির। ইংরেজিতে চোস্ত। দুর্দান্ত রেজাল্টের জোরে দেশের প্রথম সারির মেরিন কলেজে ঠাঁই করে নিল। কিন্তু, বিধি বাম। কর্মক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসফল। ‘জল শুধু জল’ দেখে সত্যিই চিত্ত বিকল হয়ে পড়ল। অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা দেখে চাকরি ছাড়িয়ে অভিভাবকরা শরণাপন্ন হলেন শহরের নামী মনোবিদের। প্রার্থীর খোলনলচে জেনে তিনি বুঝতে পারলেন ছেলেটি প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি সাহিত্যের একনিষ্ঠ ভক্ত। মা-বাবাকে মনঃক্ষুণ্ণ না করার জন্যই মেরিন লাইনে পা বাড়িয়েছিল মুখচোরা মেধাবীটি। আর, তার পরিণতি এটা। এমন ঘটনা আকছারই ঘটে। লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেই অবসাদ, তারপর আত্মহনন। কিন্তু, জানতে হবে লক্ষ্যটা কার? সন্তানের না তার অভিভাবকের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অভিভাবকের ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত না করার খেসারত দিতে হচ্ছে পড়ুয়াকে।
আদতে আধুনিক মনোবিদ্যাতেও কেরিয়ারের ক্ষেত্রে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত এই দুই শব্দের আভিধানিক অর্থ কাছাকাছি হলেও বাস্তবের প্রেক্ষিতে দূরত্ব কয়েক যোজন। বিএসসি, এমএসসি করে তারপর স্কুল-কলেজের শিক্ষকতা পেলেই অনেকে সন্তুষ্ট, সফল বা প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করেন। আবার, আইআইটি বা আইএসআইতে পড়ে বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চপদে থেকেও খুঁতখুঁতে থেকে যান অনেকেই। অঢেল টাকা থুড়ি ডলার কামালেও আরও উপরে ওঠার তাগিদ তাদের সাফল্যের তকমাতে সীমাবদ্ধ থাকতে দেয় না। আর্থিক প্রতিপত্তি, সামাজিক মর্যাদা সব কিছুর চূড়ায় না উঠলে অধরা থেকে যায় সাফল্য, প্রতিষ্ঠিত এসব কথাগুলি। অনেক সময় যে ঘটনা ঘটে তা হল দুর্গাপুরের লালমাটিতে যে হাভেলি বানানো সম্ভব সেটিই বানাতে চায় দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি খাঁজে। তাই সাফল্যের মরীচিকা এই ‘সফল’-দের ধরা দেয় না। আশপাশের স্বজন-বন্ধুদের কাছে সে একসঙ্গে সফল ও প্রতিষ্ঠিত বলে গণ্য হলেও, সে নিজের কাছে কোনওটিই নয়। কারণ উচ্চাশার কোনও সীমা নেই। লক্ষ্যভেদ করেও সে ঠিক করে নেয় আর একটি লক্ষ্য। কিন্তু সে যে লক্ষ্যভেদটি করেছে সেটি আদৌ তার মনঃপূত কি না, সে প্রশ্নের জবাব সে নিজেও খোঁজে না। টাকা রোজগারের যন্ত্রে পরিণত হয়ে কখন সে নিজের জীবনের ইচ্ছে অনিচ্ছেকে এক করে ফেলেছে,তা সে নিজেই জানে না। একসময় হয়তো তার সহজাত দক্ষতা কম্পাসের কাঁটাটি দক্ষিণ দিকে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ে বা বাবা-মা জোর করে সেটিকে পুবমুখী করে দিয়েছে। ভেড়ার দলে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং আর ডাক্তারি ছাড়া কোনও কেরিয়ার-এর কথায় তার কানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতরেও লক্ষ্যভেদ করা যায় এমন মন্ত্র শৈশবে ঢুকিয়ে দিলে হীনম্মন্যতা বা ব্যর্থতার লেভেল লাগার সম্ভাবনাটা অনেকটাই কমে যেতে পারে।