ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
সম্প্রতি বোস ইনস্টিটিউট তথা বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ১০৩তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাক। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘কম্পিউটেশন, ইন্ডিয়ান সায়েন্টিফিক ট্র্যাডিশন অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এআই নিয়ে অস্থিরতার কথা স্বীকার করেন তিনি। আমেরিকায় ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বলেন, ‘বর্তমানে আমরা মানব ইতিহাসের সবথেকে অস্থির যুগে বাস করছি। মানুষের মুখে মুখে বিপুল চাকরি ছাঁটাইয়ের কথা ঘুরছে। না চাইতেই মানুষকে অনেক কিছু দিয়ে দিচ্ছে এআই। যদি শিল্পবিপ্লব বুদ্ধির (ব্রেন পাওয়ার) জন্ম দিয়ে থাকে, তাহলে এআই সেই বুদ্ধির জায়গা দখল করছে।’ কাক ছাড়াও বক্তৃতা দেন বোস ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা উদয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর অধিকর্তা সমিতকুমার রায়।
তবে, কম্পিউটার বা যন্ত্র কখনই সৃজনশীল বা চেতনা নির্ভর হবে না বলে মনে করেন ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে কাক বলেন, কম্পিউটার চেতনা সম্পন্ন হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার একদল বিজ্ঞানীর সঙ্গে কেমব্রিজে হাজির হয়েছিলাম। উপস্থিত বিজ্ঞানীদের অর্ধেক সেখানে বলেছিলেন কম্পিউটার চেতনা নির্ভর হয়ে উঠবে এবং কার্যত মানুষের প্রায় সমস্ত কাজ করে মানবসমাজের কাছে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হবে। কিন্তু, ‘কোয়ান্টাম নিউরাল কম্পিউটিং’ শব্দের প্রবক্তা মনে করেন, ‘আমি অবশ্য তা মনে করি না। যন্ত্র কখনই চেতনা সম্পন্ন হবে না। অনেক বিজ্ঞানী চেতনাকে ভৌত-রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার কোয়ান্টাম মেকানিক্সকেও টেনে এনেছেন। কিন্তু, আমি মনে করি, ওঁরা সম্পূর্ণ ভুল পথে চলছেন।’
যন্ত্র যে কখনই চেতনা সম্পন্ন হবে না, সেই দাবির সমর্থনে বেদ-বেদান্তে মনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা তুলে ধরেন কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত কাক। বেদান্ত মতে, চেতনা একক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাকে আর কোনও কিছু দিয়ে ব্যাখা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার নিকোলাস টেসলার এনার্জি বা শক্তি থেকে ভরে পরিবর্তনে (এনার্জি-মাস ট্রান্সফরমেশন) পদার্থবিদ্যার ভারতীয় ধারণা কীভাবে ভূমিকা পালন করেছিল, সেকথাও উল্লেখ করেন পুরজ্যোতির্বিদ্যা বা আর্কিওঅ্যাস্ট্রোনমির গবেষক কাক। বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা কাক আরও বলেন, ‘১৮৯৬ সালে নিউ ইয়র্কের এক পার্টিতে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দেখা হয়েছিল টেসলার। ভারতীয় পদার্থবিদ্যা নিয়ে বিবেকানন্দের সম্যক ধারণা ছিল। সেখানে টেসলাকে বেদান্ত-চিন্তার কথা বলেছিলেন বিবেকানন্দ। শুনিয়েছিলেন আকাশ, বায়ু ও কল্পবিজ্ঞানের কথা। বিবেকানন্দের থেকে একথা শুনে অভিভূত হয়েছিলেন টেসলা।’
আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে ভারতীয় দর্শন বা ধারণার যোগ নিয়ে এখানেই থেমে থাকেননি কাক। বসু বিজ্ঞান মন্দিরে ৮১তম আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু স্মারক বক্তৃতায় তাঁর পুরজ্যোতির্বিদ্যা গবেষণায় আবিষ্কারের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বিশিষ্ট তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রাচীন ভারতীয়রা জানতেন পৃথিবী থেকে সূর্য ও চাঁদের দূরত্ব তাদের ব্যাসের মোটামুটি ১০৮ গুণ। এই ধারণাকেই মন্দির নির্মাণে কাজে লাগানো হয়েছে। এই তথ্য থেকেই এসেছে ভারতীয় নৃত্যের ১০৮ মুদ্রা, যপমালায় ১০৮টি পুঁতি এবং ভারতীয় দেবদেবীদের অষ্টোত্তর শতনাম।’ প্রসঙ্গত, তাঁর গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে ইতিমধ্যেই সুভাষ কাককে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে ভারত সরকার। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য এই কাশ্মীরি পণ্ডিত।