কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
অনেক সময় দেখা গিয়েছে, একই সংস্থায় রোবট ও মানুষের একসঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। কাজ করাতে গিয়ে রোবটের আক্রমণে জখম হয়েছেন অনেক কর্মী। প্রোগ্রামিংয়ের সামান্য ভুল কাজের ক্ষতি করেছে। রোবট তৈরির পরে তার উপর নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। মানুষের সংস্পর্শে সে কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত পেলে তবেই সেই রোবটকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেদিক থেকে কৃত্রিম ত্বকের এই রোবট অনেক আলাদা। কারণ এটাই জানান দেবে মানুষ তার জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। ফলে মানুষ কর্মীর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে তার কোনও সমস্যাই হবে না। স্বল্প সময়ে বেশি উৎপাদন এবং নির্ভুল কাজের জন্য বিশ্বের নামীদামি শিল্প প্রতিষ্ঠান রোবট কর্মী নিয়োগ শুরু করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১০ হাজার কর্মীর কাজ করতে পারে মাত্র ৮৫টি উন্নত প্রযুক্তির রোবট। বিজ্ঞানীদের দাবি, ২০২১ সালের মধ্যে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের উৎপাদন ১৪ শতাংশ বাড়বে। এখন এই কৃত্রিম চামড়া আবিষ্কার হওয়ায় সেই সংখ্যা আরও বাড়বে।
সম্প্রতি এমন কৃত্রিম ত্বক তৈরির কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবোটিক্স। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ছোট ছোট কৃত্রিম কোষ দিয়ে এই বিশেষ কৃত্রিম চামড়া (Artificial Skin) তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে থাকবে মানুষের ত্বকের মতোই সেন্সর। তাতে কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র থাকবে অনুভূতি আদানপ্রদানের জন্য। কোষের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছবে যন্ত্রমগজে। হাসি-কান্না-ভালোবাসাও বুঝতে পারেব যন্ত্র। একজন মানুষের শরীরে প্রায় ৫০ লক্ষ ‘স্কিন রিসেপটর’ থাকে যা বার্তা পৌঁছে দেয় মস্তিষ্কে। যার ফলে চারপাশে ঘটে চলা সব কিছু আমরা অনুভব করতে পারি। সেখানে রোবটের কৃত্রিম ত্বকে ১৩ হাজার সেন্সর থাকবে।
কৃত্রিম ত্বক নিযে বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের গবেষক গর্ডন চেং। তাঁর মতে, মানুষের মতো অনুভূতি পেতে সেন্সর-যুক্ত কোষ দরকার। অধ্যাপক গর্ডন আরও বলেছেন, প্রথম এমন মানবিক রোবট তৈরি হয়েছে যার নাম এইচ-১। কাঁধ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত তার ত্বকে রয়েছে ১৩ হাজার সেন্সর। এই রোবট বুঝবে সে মানুষের শরীর স্পর্শ করছে না কোনও জড়বস্তুর। সেভাবে তার আচরণেও বদল হবে। আরও ছোট ছোট সেন্সর তৈরির কাজ চলছে যা পুরোপুরি মানুষের অনুভূতি দেবে রোবটকে। জড়িয়ে ধরলে সে লজ্জা পাবে, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ বুঝবে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক এটিয়েনে বারডেটের মতে অবশ্য, এমন মানবিক রোবট ভবিষ্যতে কতটা নিরাপদ হবে সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে তার অনুভূতি একটা সীমিত পর্যায় অবধি বেঁধে রাখারই চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
একই দাবি করেছেন কলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য সৈকত মৈত্র। তিনি বলেন, এগুলি সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর প্রয়োগ। এক্ষেত্রে রোবট নিজেকে নিজেই উন্নত করবে। রোবট আবিষ্কার করা হযেছে মানুষের কাজে সুবিধার জন্য। যদি সত্যিই তার মধ্যে মানবিক অনুভূতি তার মধ্যে চলে আসে সেক্ষেত্রে ভালো, খারাপ দুটোই হতে পারে। মানুষের সঙ্গী রোবট হয়ে উঠলে তা আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বয়স্ক লোকজনকে সঙ্গ দিতে পারবে এরা। এটা ভালো দিকও। তাই নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই এতে লাভদায়ক হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ওয়্যারলেস এবং ব্যাটারি ছাড়াই কৃত্রিম ত্বক বানিয়েছিলেন। তবে গর্ডনের বানানো চামড়া আরও বেশি উন্নত। এটিকে কম্পিউটার চালায় না। আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকে সেন্সরে। বিশেষ মুহূর্তেই জেগে ওঠে সেই সেন্সর। বার্তা পাঠায় কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রকে।