শত্রুরা পরাভূত হবে। কর্মে পরিবর্তনের সম্ভাবনা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের জন্য ব্যয়-বৃদ্ধির যোগ আছে। কোনও ... বিশদ
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সুধা পদ্ধতিতে খরিফ ও বোরো দুই মরশুমেই ধান চাষ করা যায়। প্রাথমিকভাবে সুধা হল পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী উন্নততর ধান চাষ পদ্ধতি। যা রাজ্যের প্রধান ফসল ধানের উৎপাদনকে অনেক বেশি নিশ্চিত ও অধিক ফলনশীল করে তোলে।
সুধা পদ্ধতিতে আমন ধান চাষের মূল মন্ত্র হল, সুস্থ, সবল অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ধানের চারা তৈরি করা। এবং মূল জমিতে তা নির্দিষ্ট দূরত্বে গুছিতে একটি করে রোপণ করা। এর জন্য প্রথমেই যেটি দরকার তা হল, সুধা পদ্ধতিতে বীজতলায় চারার ঘনত্ব রাখতে হবে প্রতি বর্গমিটারে দীর্ঘমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ছ’শো থেকে সাতশোটি। আর মধ্য বা স্বল্প মেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে বীজতলায় চারার সংখ্যা রাখতে হবে প্রতি বর্গমিটারে সাতশো থেকে আটশো। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ ও সবল চারা তৈরি করতে হলে দু’টি বিষয়ের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রথমত, চারা যাতে সঠিক মাত্রায় আলো-বাতাস পায় তার জন্য বীজতলায় চারাকে উপযুক্ত পরিমাণ জায়গা দিতে হবে।দ্বিতীয়ত, চারায় যেন সঞ্চিত শক্তি ও বৃদ্ধির সহায়ক সবরকম হরমোন অধিক পরিমাণে থাকে। এবং চারার বর্ধনশীল অঞ্চলের কোষ যেন অতি সক্রিয় ও দ্রুত বিভাজনক্ষম অবস্থায় থাকে। সর্বোপরি চারায় যাতে তাড়াতাড়ি প্রজনন দশা বা গাঁট না আসে, তার জন্য পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।বীজতলা প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বোনার আগে স্বাস্থ্যবান বীজ দেখে নিয়ে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে।
চারা তৈরি হলে সেই নিরোগ চারা রোপণের জন্য তুলে সেই দিনই মূল জমিতে রোয়া করতে হবে।
আরামবাগের কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ জানান, সুধা বা সার্প পদ্ধতি যে কোনও ধরনের জমিতে (উঁচু, মাঝারি, নিচু) অনুসরণ করা যায়। দেশি, উচ্চফলনশীল, স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি সবরকম ধানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে চাষ সম্ভব। এমনকী সেচ ও অসেচ সব ধরনের জমিতে সুধা পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে পারবেন চাষিরা। এই পদ্ধতির জন্য কোনও বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না।
কৃষি আধিকারিকদের দাবি, আমন চাষে সুধা পদ্ধতিতে প্রথাগত পদ্ধতির চেয়ে দশ শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ জমিতে বীজতলার দরকার হয়। এছাড়া ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ কম লাগে। চাষে তুলনায় কম মজুরের প্রয়োজন হয়। ফসলে আগাছার পরিমাণ কম হয়ে থাকে। রোগপোকার আক্রমণ হয় না বললেই চলে। তাছাড়া স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়তি ফলন পাওয়া যায়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রায় স্বাভাবিক ফলন ঘরে তুলতে পারেন চাষিরা। সর্বোপরি এই পদ্ধতিতে চাষের খরচ প্রায় ১৫ শতাংশ কম হয়।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে আমন চাষ হয় প্রায় ৪২ লক্ষ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় প্রায় ১৭৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান। সুধা পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদন আরও বাড়বে, মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
হুগলির উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসনিক) অশোক তরফদার জানান, রাজ্যে সুধা পদ্ধতিতে আমন চাষে গুরুত্ব বাড়ছে। নদীয়ার রানাঘাট, বর্ধমানের কালনা, হুগলির হরিপাল ও খানাকুলের মতো জায়গায় কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতিতে চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, গত বছর হুগলি জেলায় সুধা পদ্ধতিতে আমন চাষ হয়েছিল ১৮৫০ হেক্টর জমিতে। এবার এলাকা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথাগত পদ্ধতিতে আমন চাষে বিঘা প্রতি রোপণের জন্য বীজ বপন করতে হয় সাত থেকে আট কেজি। সেক্ষেত্রে সুধা পদ্ধতিতে বিঘায় বীজ লাগে তিন থেকে পাঁচ কেজি। অপরদিকে প্রথাগত পদ্ধতিতে চারা খুব বেশিদিন বীজতলায় রাখা যায় না। স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ২১ দিন এবং দীর্ঘমেয়াদির ক্ষেত্রে ৩৫ দিনের মধ্যে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ করতে হয়।অন্যথায় ফলন কমে যায়। সুধা পদ্ধতিতে চাষিদের সামনে একাধিক বিকল্প থাকে। যেমন অতি জলদি রোপণ পনেরো থেকে পঁচিশ দিনের চারা, জলদি রোপণ কুড়ি থেকে পঁয়ত্রিশ দিনের চারা, সময়ে রোপণ পঁচিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ দিনের চারা, দেরিতে রোপণ ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ দিনের চারা এবং অত্যন্ত দেরিতে রোপণ পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ বা পঞ্চান্ন থেকে ষাট দিন সময় থাকে। ছবি: সুমন মুখোপাধ্যায়