ব্রতীন দাস: প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে নয়া ধান আবিষ্কার করলেন জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সাধারণ ধানে যেখানে ৬ থেকে ৮ শতাংশ প্রোটিন থাকে, সেখানে সিআর-৩১০ নামে নতুন ওই ধানটিতে প্রোটিনের মাত্রা প্রায় ১১ শতাংশ। এত উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান, আমাদের দেশে এই প্রথম বলে দাবি কটকে অবস্থিত ওই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের। গবেষণা সংস্থাটির অধিকর্তা ড. দীপঙ্কর মাইতি জানিয়েছেন, ‘নবীন’ নামে ধানের জাতটির সঙ্গে অসম থেকে সংগৃহীত ‘এআরসি-১০০৭৫’ ধানের জাতটির সংকরায়ণ ঘটিয়ে নতুন ওই প্রজাতি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের খামারে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ধানটির চাষ করা হয়। পরে আরও বিস্তর গবেষণায় দেখা যায়, এর মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ১০.৩ শতাংশ। এত বেশি প্রোটিন থাকার কারণে এই ধানের চাল থেকে তৈরি ভাত স্কুলে মিড ডে মিলেও দেওয়া যেতে পারে বলে তাঁর সুপারিশ। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রোটিনের ঘাটতি অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। ইতিমধ্যে ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে ধানটি চাষের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গেও ধানটি চাষের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা। এনিয়ে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যদি কোথাও কিছু ভাল থাকে তবে তা আমরা নিশ্চয় গ্রহণ করি। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ যে ধানের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমাদের বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন। তারপর সেই ধান যদি আমাদের রাজ্যের জন্য অনুকূল হয়, তবে তা গ্রহণ করতে বাধা নেই। যদিও রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র বলেছেন, শুধু বেশি প্রোটিন রয়েছে বললেই হবে না। দেখা গিয়েছে, ধানে প্রোটিন কিংবা আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে গিয়ে অন্য মিনারেল কমে গিয়েছে। তাছাড়া ওই ধানের চালের ভাত যদি মোটা বা শক্ত হয়, তবে রাজ্যবাসীর বেশিরভাগই তা গ্রহণ করবে না। ফলে আমাদের ওই ধানটি দেওয়া হলে সবদিক খতিয়ে দেখেই তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা অবশ্য নয়া এই ধানটি নিয়ে যথেষ্টই আশাবাদী। তাঁদের বক্তব্য, ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। বহু মানুষ আছেন, যাঁরা কোনওমতে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন। ভালমন্দ খাবার জোটে না তাঁদের। ফলে পুষ্টির অনেকটাই ঘাটতি থেকে যায়। সেক্ষেত্রে ভাত থেকে যদি বেশি মাত্রায় প্রোটিন মেলে, তাহলে ঘাটতি অনেকটাই মেটানো সম্ভব। তাঁদের দাবি, সেচ সেবিত এলাকায় শুকনো ও ভিজে দুই মরশুমেই সিআর-৩১০ জাতের ধানটি চাষ করা যাবে। হেক্টরে ফলন মিলবে সাড়ে চার টন। এরই পাশাপাশি জাতীয় ধান্য গবেষণা কেন্দ্র সিআর-৩১১ (মুকুল) নামে আরও একটি নতুন ধান আবিষ্কার করেছে। যার মধ্যে বেশি মাত্রায় প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে অনেক বেশি জিঙ্ক। ফলে ওই ধানের চাল থেকে তৈরি ভাতও শরীরকে মজবুত করতে দারুণ কার্যকর হতে পারে। দু’টি ধানই ১২০-১২৫ দিনের ফসল।
বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ ওই ধান নিয়ে রাজ্যের কৃষি বিজ্ঞানীদের অনেকের অবশ্য বক্তব্য, ধানের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন থাকলেই হবে না। সেটি রাইস মিলে মেশিনে ভাঙানোর পর চালে কতটা প্রোটিন থাকছে, সেটাই বড় কথা। তাঁদের বক্তব্য, চালের বাইরের অংশেই ফাইবার থাকে। মেশিনে ভাঙানোর পর চাল যখন পালিশ হয়ে বেরিয়ে আসে, তখন সেই ফাইবার বেশিরভাগটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চালের গুণমান কমে। সুতরাং, চালের ফাইবার ধরে রাখার জন্য আগে বিশেষ মেশিন দরকার। না হলে কোনও লাভ নেই। ছবি: মুকুল রহমান