পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
গড়বেতা-৩ ব্লকের সাতবাঁকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মেটেডহর পশ্চিম গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেল, গোটা মাঠজুড়ে আলুচাষ হয়েছে। একাধিক জমিতে চাষিরা ছত্রাকনাশক স্প্রে করে চলেছেন। মনসুর গায়েন নামে এক চাষি জমিতে ওষুধ স্প্রে করছিলেন। তিনি বললেন, পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। দিন পনেরো আগে পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। ভেবেছিলাম, এবার ভালো লাভের মুখ দেখব। নাবিধসার জেরে তিন বিঘা জমির আলু প্রায় শেষ। দু’বিঘা জমির আলু ঠিক আছে। এখন সেটাকে টিকিয়ে রাখতে সাতসকালেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে মাঠে চলে এসেছি। কত টাকার যে ওষুধ দিলাম, তার হিসেব নেই। পাশেই আমিরুল্লা মণ্ডল নামে এক চাষি হাত ধরে নিজের জমির কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন, এটা আমার জমি। আলু জমি মনে হচ্ছে? এক বিঘা জমির আলু নাবিধসায় পুরো ঝলসে গিয়েছে। গোটা জমিতে আলু গাছের সবুজ পাতা নেই বললেই চলে। আমিরুল্লাসাহেব বলেন, এক লক্ষ টাকা মহাজনের কাছে থেকে নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।
ফাইজুল গায়েন নামে এক চাষি বলেন, আমার জমি নেই। বাজারে আলুর চড়া দাম দেখে এবার লিজে দু’বিঘা জমি নিয়ে আলু লাগিয়েছি। মহাজনের কাছ থেকে ধারে আলু বীজ, সার কিনে চাষ করছি। ৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে। নাবিধসা পুরো জমি শেষ করে দিয়েছে। কী করে জমির লিজের টাকা, মহাজনের টাকা মেটাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। সাতবাঁকুড়া পঞ্চায়েতের নেপুড়া গ্রামের দেবব্রত ঘোষ ছ’বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। নাবিধসায় ৫০ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুকি গ্রামের জয়দেব পাত্র ১৫ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছেন। তাঁর জমিতেও নাবিধসার প্রকোপ শুরু হয়েছে। জয়দেববাবু বলেন, ২৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছি। কতটা রক্ষা করতে পারব জানি না।
রসুকুণ্ড-১ নম্বর পঞ্চায়েতের বড়ডিহা গ্রামের তাপস চক্রবর্তী নামে এক চাষি বলেন, সাত বিঘা জমিতে আমি আলু লাগিয়েছি। ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি। বাকি জমানো টাকা থেকে খরচ করেছি। ওষুধের জন্য খরচ আরও বাড়ছে। ৫ বিঘা জমিতে নাবিধসায় ৬০ শতাংশ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই পর্যন্ত ছ’বার করে ওষুধ দিয়েছি। কোনও কাজ হচ্ছে না। ধসা না হলে বিঘাপ্রতি ১০০-১২০ বস্তা আলু পাওয়া যেত। এখন বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ বস্তা আলু হবে কি না সন্দেহ।
রসকুণ্ড-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুমন্ত পাল বলেন, চার বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। সব জমিতে ধসার প্রকোপ শুরু হয়েছে। শঙ্করকাঁটা পঞ্চায়েতের ভূতডাঙা গ্রামের চাষি শেখ কুতুবউদ্দিন বলেন, ১৮ বিঘার মধ্যে নাবিধসার জন্য ১৫ বিঘা জমির আলু ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন বিঘা আলু কিছুটা ভালো রয়েছে। নিজের গচ্ছিত টাকা খরচ করেই চাষ করেছি। ফলন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। রসকুণ্ড, সাতবাঁকুড়া কিংবা শঙ্করকাঁটা, এই ব্লকের যে কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, চাষিরা দিনের অধিকাংশ সময় মাঠে আলু জমিতেই পড়ে রয়েছেন। কখনও ওষুধ স্প্রে করছেন, কখনও আবার ধসায় জমি কতটা ক্ষতি হল, তা দেখছেন।