পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় নাকাশীপাড়ায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হতো। এবছর ১২০৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। কিন্তু ফল আর্মি ওয়ার্ম নামক এক ধরনের পোকা জমি ক্ষতি করে দিচ্ছে। নদীয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় গত দু’বছর গম চাষ বন্ধ থাকার ফলে ভুট্টা চাষ বেশকিছু এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এদিকে, কৃষি দপ্তরের কর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ভুট্টা খেতে গিয়ে সরেজমিনে সবকিছু খতিয়ে দেখছেন। চাষিদেরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতন করছেন।
কৃষি দপ্তরের নাকাশিপাড়া ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার সোমনাথ পতি বলেন, এবছর নাকাশিপাড়ায় ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ হয়েছে। আমরা এনিয়ে বিভিন্ন সেমিনার করছি। বিভিন্ন রকমের রোগ নিয়ে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে। চাষিদের কীটনাশক দেওয়া সহ সবরকম সহযোগিতা করছি।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। মূলত ভুট্টা গাছের পাতার মধ্যভাগে আক্রমণ করে। ফলে দ্রুত গাছটি মারা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই বিঘার পর বিঘা আক্রান্ত হতে পারে। আমরা চাষিদের সবরকম সহযোগিতা করছি। নাকাশিপাড়ার প্রায় সমস্ত এলাকাতেই চাষিরা এই সমস্যায় জর্জরিত। হরনগর পঞ্চায়েতের বান্দাখোলা গ্রামের লিকাতুল্লা শেখ বলেন, আমার প্রায় সাত বিঘা জমিতে এবছর ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু এই পোকার উপদ্রবে অর্ধেক জমিতে ভুট্টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভাবছি এখন কী করব। নতুন করে ভুট্টা তুলে ফেলে অন্য চাষ করলে সমস্যা বাড়ছে। তারজন্য কৃষি দপ্তরে এসেছি। আধিকারিকরা আমাদের একটি ওষুধ দিয়েছেন। সেটি প্রয়োগ করতে হবে। এই পোকা দ্রুত বংশবিস্তার করে। বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের আর এক চাষি অমিত ঘোষ বলেন, আমার প্রায় তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কিন্তু এই পোকার উপদ্রবে গাছ বড় হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি দপ্তরের কর্তারা আমাদের খুব সাহায্য করছেন। আমরা কীটনাশক পেয়েছি। সেটা প্রয়োগ করছি। ওঁদের নির্দেশমতো কাজ করছি। মূলত অন্যান্য চাষের থেকে ভুট্টা চাষে খরচ কম। লাভ বেশি। আবার ঝুঁকিও কম। তাই নাকাশিপাড়ার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন।
নাকাশিপাড়ার ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা কুসুমকমল মজুমদার বলেন, যে পোকা দেখা যাচ্ছে, সেটি ফল আর্মি ওয়ার্ম নামে পরিচিত। বিভিন্ন জায়গার মতো আমাদের এখানেও এই পোকা দেখা গিয়েছে। এবিষয়ে চাষিদের বিভিন্ন শিবিরের মাধ্যমে সাবধান করা হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর থেকে তাঁদেরকে বিভিন্ন ধরনের লিফলেট দেওয়া হয়েছে। চাষিদের যথেষ্ট পরিমাণে কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত হাঁটুর উপরে ভুট্টা গাছ বড় হলে এই পোকার উপদ্রব কমে যায়। আমরা চাষিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি। রামপুরহাটে কৃষিমন্ত্রী একটি সেমিনারে বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরে যতটা ভুট্টা চাষ হবে, উপযুক্ত দাম দিয়ে সব কিনে নিতে পারবে সরকার। আগামী পাঁচ বছরে ভুট্টা চাষ লাভজনক ফসল হিসেবে চাষ করা যাবে। সেখানে বেশ কয়েকজন চাষিকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা যেকোনও ফসল চাষের শুরুতে এবং মাঝখানে দু’দফায় চাষিদের প্রশিক্ষণ দিই। কোন সময় পোকার আক্রমণ বেশি হয়, কোন সময় কীভাবে তার নিরাময় করা যায় তা বলা হয়।
অযথা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করে কীভাবে ভালো ফল পাওয়া যায় সেটা আমরা হাতেনাতে চাষিদের বোঝানো হয়। ভুট্টা চাষিদের কাছে নতুন ফসল। আমরা যতটা পারছি বৈজ্ঞানিক সম্মতভাবে চাষিদের শেখানোর চেষ্টা করছি। পরের বছরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ভুট্টা বীজ চাষিদের দেওয়া হবে। হাতে-কলমে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আমরা কীভাবে এই পোকা থেকে ভুট্টা চাষ রক্ষা করতে পারি, তারজন্য প্রশিক্ষণ দেব।