কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
গোটা ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে প্রাচীন ফলের মধ্যে কুল অন্যতম। এই ফলে ভিটামিন সি, এ ও বি কমপ্লেক্স রয়েছে। ঝাড়খণ্ড, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে কুল গাছে লাক্ষা চাষ করা হয়। তাই কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সব আবহাওয়াতেই কুল গাছ হলেও শুষ্ক ও গরম আবহাওয়ায় তা ভালো হয়। শীতের কুয়াশা ও প্রচণ্ড দাবদাহ সহ্য করার ক্ষমতা থাকায় এ রাজ্যের খরাপ্রবণ এলাকায় চাষ সম্ভব। শিকড় গভীরে যায় বলে খরা ও প্রতিকুল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে কুল গাছ। কিছুটা ক্ষার ও লবনাক্ত মাটিতেও ফল দেওয়ার ক্ষমতা থাকায় কুল গাছ পতিত জমিতে চাষ করেও লাভ পেতে পারেন চাষিরা।
কৃষি আধিকারিক আজমীর মণ্ডল বলেন, গতানুগতিক চাষ ছেড়ে চাষিদের বেরিয়ে এসে এই ধরনের ব্যতিক্রমী চাষ করলে ভালো আয়ের সুযোগ থাকছে। আমরা আতমা প্রকল্পের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যতিক্রমী চাষে চাষিদের উৎসাহ দিচ্ছি।
আমাদের দেশে প্রায় ১০০টির বেশি কুলের প্রজাতি আছে। তবে সেগুলি রাজ্য অনুযায়ী জনপ্রিয়। এর মধ্যে কিছু প্রজাতি আছে, যেগুলির সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রচলন আছে। গোলা, সফেদ সিলেকশন, কৈথালি, উমরান, এলাচি প্রভৃতি জাত উল্লেখযোগ্য। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশি আপেল কুল দেখতে খানিকটা গোলাকার। উপরের দিকে লালচে আভা রয়েছে। ‘বাউ’ কুলের থেকে কিছুটা ফলন কম হয়। এখন থাইল্যান্ডের বেশ কিছু কুলের প্রজাতিও বাংলাদেশ হয়ে আমাদের রাজ্যে ঢুকে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। স্বাদেও নাসপাতির মতো। থ্যাইল্যান্ডের এই আপেল কুলগুলির বেশ কয়েকটি ছোট আপেলের মতো লালচে আভাযুক্ত। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে আপেল কুল। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ কয়েকটি প্রজাতি নির্বাচন করা হয়েছে বলে একে ‘বাউ’ কুলও বলেন অনেকে। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসের মধ্যেই এই ফলের গাছের চারা রোপণ করতে হবে। তার কারণ, প্রথম বর্ষার সঙ্গে বড় হয়ে আশ্বিন মাস থেকেই ফুল এসে শীতকালে ফল দেবে। গাছ ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু ও ডালপালা কিছুটা বেড়ে যায়। তাই ডাল বাঁশের মাচার উপর রাখতে হবে। যাতে ফল ভালো পাওয়া যায়। ভাদ্র মাসে ফুল আসার পর দু’বার অনুখাদ্য মিশ্রণ ও প্ল্যানোফিক্স স্প্রে করতে হবে। তার কারণ, বিদেশি আপেল কুলের রোগপোকা সাধারণ কুলের মতো একই রকম। তবে আমাদের রাজ্যের পরিস্থিতিতে এই কুলে বেশি রোগপোকা হয়। যার ফলে বেশি যত্ন করা দরকার।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমাতেও শুরু হয়েছে বিদেশি আপেল কুলের চাষ। বিশেষ করে আতমা প্রকল্পের মাধ্যমে কাটোয়া-১ ব্লকের বেশ কিছু চাষি এই কুলের চাষ শুরু করেছেন। কোশিগ্রাম অঞ্চলের রাজুয়াতে কিছু চাষিকে এই কুলের চাষের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কাটোয়া-১ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা আজমীর মণ্ডল বলেন, এই বিদেশি আপেল কুল চাষে বিঘা প্রতি জমিতে খরচ হবে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। আর বছরে লাভ প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এক-একটি গাছ থেকে ৫০ থেকে ৮০ কেজি করে ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া একটি বিদেশি আপেল কুলের জমিতে শীতকালীন সব্জি যেমন টম্যাটো, লঙ্কা, বেগুন প্রভৃতি গাছ লাগিয়েও বাড়তি আয় করতে পারেন কৃষকরা।