অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় : চাষিরা বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে কিছুটা জমিতে তিলের চাষ করলে ভালো লাভ পেতে পারেন। তিল চাষে খরচ কম হয় এবং লাভ বেশি পাওয়া যায়। তিল চাষ করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিল বোনার ভালো সময় মাঘের শেষ সপ্তাহ থেকে ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ভালো ফলন পেতে হলে উন্নত প্রজাতির তিল চাষ করতে হবে। উন্নত প্রজাতির মধ্যে রমা ও তিলোত্তমা বি-৬৭। এক বিঘায় বীজ লাগবে এক কেজি। জমিতে বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা ৩ গ্রাম থাইরাম মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে। আলুর পর জমিতে তিল লাগালে কোনও সার প্রয়োগের দরকার হয় না। অন্য জমিতে তিল চাষ করলে বিঘা প্রতি ৮ কেজি নাইট্রোজেন বা ১৮ কেজি ইউরিয়া, ৩ কেজি ফসফেট বা ২০ কেজি একক সুপার ফসফেট এবং ৪ কেজি পটাশ বা ৪ কেজির মতো মিউরিয়েট অব পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও ৭-৮ কুইন্টাল জৈবসার অবশ্যই দিতে হবে। তিল চাষে ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক নিয়ম মেনে পরিচর্যা করতে হবে। তিল বোনার প্রথম অবস্থায় তিল গাছের বাড় খুব কম থাকে। সেকারণে বীজ বোনার ১৫ দিন পর নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। প্রথম নিড়ানির ১০ থেকে ১৫ দিন পরে দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হবে। এই সময়ে কিছু গাছ এমনভাবে তুলে ফেলতে হবে যাতে প্রতি ৮ ইঞ্চি অন্তর একটি করে গাছ থাকে। সেচের প্রয়োগ হবে জমির টানের উপর নির্ভর করে। দুই থেকে তিনটি সেচ দরকার হতে পারে। প্রথম সেচটি বোনার ২০-২৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে। দ্বিতীয় সেচটি ফুল আসার সময় দিতে হবে। তৃতীয় সেচটি দিতে হবে ফল ধরার সময়। তিল চাষে সঠিক নিয়ম মেনে রোগপোকার প্রতিরোধ করতে হবে। তিলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে গোড়াপচা বা শিকড় পচা রোগ।
পোকার মধ্যে বিছে পোকার আক্রমণ তিল চাষে বেশি ক্ষতি করে। গোড়াপচা বা শিকড় পচা রোগ দেখা দিলে এই রোগের হাত থেকে ফসল বাঁচানোর এন্ডোসালফান প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে বিঘা প্রতি ৭০-৮০ লিটার ওষুধ মেশানো জল স্প্রে করতে হবে। তবে বীজ শোধন করে লাগালে এই রোগ কম হবে। বিছেপোকার আক্রমণ দেখা দিলে এই পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে এন্ডোসালফান দেড় মিলি বা ক্লোরোপাইরিফস ২ মিলি গুলে বিঘা প্রতি ৭০-৮০ লিটার ওষুধ মেশানো জল জমিতে স্প্রে করতে হবে।