উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-গবেষক ড. সঞ্জীব দাস জানিয়েছেন, সাধারণভাবে কুফরি জ্যোতি জাতের আলু চাষ করলে হেক্টরে ৩০ টন ফলন পাওয়া যায়। সেখানে হিমালিনী জাতের আলু চাষ করলে অনায়াসেই হেক্টরে ফলন পাওয়া যেতে পারে ৩৫-৪০ টন। বর্ধমানের কৃষকরা এই আলু চাষ করে হেক্টরে ৪৪ টন পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন, যা রেকর্ড। তাঁর দাবি, এই আলুর স্বাদ জ্যোতির তুলনায় অনেক ভালো। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে দামও বেশি পাওয়া যায়। এই আলু একটু লম্বাটে হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে হিমালিনী আলু নিয়ে গবেষণা শুরু হয় এ রাজ্যে। নয়া জাতের এই আলু মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষের জন্য বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু সমতলেও জাতটি ভালো ফলন দেওয়ায় চাষের প্রসার বাড়তে থাকে। ২০১৬-১৭ সাল থেকে চাষিরা মাঠে জাতটি চাষ শুরু করেন। গত বছর হুগলি, বর্ধমান সহ বেশ কয়েকটি জেলায় চাষিরা হিমালিনী আলু ফলিয়েছিলেন। কৃষকদের উৎসাহ দেখে রাজ্য সরকার হিমালিনী জাতের আলুর বীজ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এবারও তা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে প্রায় ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। ফলন পাওয়া যায় ১০ লক্ষ টন। কৃষি আধিকারিকরা বলছেন, ভালো ফলন পেতে ১৫-২৫ নভেম্বরের মধ্যে আলুর বীজ বুনে দেওয়া উচিত। জমিতে জো আসার পরই আলু চাষ শুরু করতে হবে। খুব দেরি হলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আলু বোনার কাজ শেষ করতে হবে। এর পর বুনলে ফলনে প্রভাব পড়বে। এক হেক্টর জমিতে আলু চাষ করতে ১৮-২০ কুইন্টাল বীজ প্রয়োজন। আলুর বেশিরভাগ রোগ বীজ বাহিত। ফলে আলু বীজ লাগানোর আগে সঠিক পদ্ধতিতে শোধন করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ম্যানকোজেব বা মিথোক্সি ইথাইল মারকিউরিক ক্লোরাইড বা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি কিংবা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স-এর যেকোনও একটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে শেষের দু’টি ছত্রাকনাশক। এছাড়াও কার্বক্সিন ও থাইরাম জাতীয় ওষুধের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম মাত্রায় মিশিয়ে আলুবীজ শোধন করা যেতে পারে। প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজেব দিয়ে দশ মিনিট আলু বীজ ডুবিয়ে রাখতে হবে। ইথোক্সি মিথাইল দিতে হবে এক লিটার জলে ২ গ্রাম। আলু বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে তিন-চার মিনিট। ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি প্রতি লিটার জলে দিতে হবে ৪-৫ গ্রাম। দ্রবণে বীজ আলু ডুবিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স প্রতি লিটার জলে দিতে হবে ২ গ্রাম। বীজ আলু শোধনের পর ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। তবে, সবার আগে ভালো বীজ সংগ্রহ করতে হবে। কারণ, দেখা যায় খারাপ আলুবীজের কারণেই কৃষকরা চাষে মার খান। কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সরকার অনুমোদিত সংস্থার কাছ থেকে সার্টিফায়েড বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আলুর বীজ কেনার সময় কৃষকদের অবশ্যই দেখে নিতে হবে, বীজের বস্তার গায়ে উৎপাদনকারী সংস্থার কার্ড ও শংসিতকরণ কার্ড রয়েছে কিনা। ২-৩টি চোখযুক্ত ও ২০ গ্রাম ওজনের গোটা আলু কিংবা একই ওজনের কাটা আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাটা আলুতে কোনও দাগ থাকলে তা বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বীজ আলু কেটে বসানোর ক্ষেত্রে যে ছুরি বা বটি দিয়ে কাটা হবে, সেটি ভালো করে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বীজ আলু কাটার সময় মরা চোখযুক্ত আলু বাতিল করতে হবে। জমিতে বসানোর আগে কাটা আলু বীজ ছায়ায় রাখতে হবে। কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আলুর জমি তৈরি করার জন্য শেষ চাষের সময় ভালোভাবে পচা গোবরসার বা অন্য কোনও জৈবসার কমপক্ষে হেক্টরে ৩০-৪০ টন দিতে হবে। নিজস্ব চিত্র