অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়: সঠিক নিয়ম মেনে চাষ করলে গমে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে। কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন ধান কাটা শেষ হলেই ওই জমিতে রস থাকা অবস্থায় গমের বীজ বুনে ফেলতে হবে। ফলে গম চাষের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। গমের ভালো ফলন পেতে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করা দরকার। গমের ভালো জাতগুলি হল, রাজেশ্বরী, পিবিডব্লু ৩৪৩, সোনালী এবং ইউপি-২৬২। বিঘায় ১৫ কেজির মতো বীজ লাগবে বুনতে। আমন ধান কাটতে একটু দেরি হলে অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যেই গম বুনে ফেলতে হবে। গম চাষের সারের প্রয়োগ করতে হবে বিঘা প্রতি ১২-১৩ কুইন্টাল ভালো মানের জৈবসার ও সেই সঙ্গে ১৬ কেজি নাইট্রোজেন অথবা ৩৫ কেজি ইউরিয়া, ৮ কেজি ফসফেট বা ৫০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট এবং ৮ কেজি পটাশ বা ১৩ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ। এছাড়া বীজের সঙ্গে কিংবা জৈবসারের সঙ্গে অ্যাজোস্পাইরিলাম ও ফসফোব্যাকট্রিন জাতীয় জীবাণুসার ব্যবহার করলে উৎপাদন ভালো পাওয়া যায়। সেচ দিতে হবে বীজ বোনার ২১ দিন পর জমির টানের উপর নির্ভর করে। কারণ, গম চাষ করার সময় জমিতে যথেষ্ট রস থাকে, সেকারণে সেচ কম লাগে। এর পর ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার সেচ দিতে পারলে ভালো। আবার ফুল আসার সময় তৃতীয়বার সেচ দিতে হবে। দানা পুষ্ট হওয়ার সময় শেষবারের মতো সেচ দেওয়া দরকার। গম চাষে সঠিক পরিচর্যার উপর ফলন নির্ভর করে। সেকারণে গম চাষে প্রথম সেচ দেওয়ার ঠিক আগে অর্থাৎ বীজ বোনার ২০ দিনের মধ্যে সব আগাছা তুলে ফেলতে হবে। আবার ৩০-৩৫ দিনের মাথায় আগাছা তুলে জমি ভালো করে পরিস্কার রাখতে হবে। রোগপোকার দিকে নজর রাখতে হবে। গমের কালো ভুষো রোগ মারাত্মক। এই রোগে গমের শিষ কালো হয়ে যায়। কোনও দানা থাকে না। এই রোগের হাত থেকে ফসলকে বাঁচাতে হলে ভালো করে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধনের জন্য বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ১৫ লিটার জল এবং তার সঙ্গে ৩০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে ৬-৮ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এর পর গম বীজ ছড়াতে হবে জমিতে। গমের জমিতে কালো ভুষো রোগ দেখা দিলেই রোগাক্রান্ত শিষগুলিকে ভিজে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে গাছ থেকে তুলে নিয়ে জমির বাইরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জমিতে উইপোকার উপদ্রব দেখা দিলে ক্লোরোপাইরিফস জাতীয় দেড় শতাংশ জাতীয় ওষুধ বিঘা প্রতি ৪ কেজি সেচের সময় জমিতে দিতে হবে।