নতুন কোনও কর্ম পরিকল্পনায় সাফল্যের ইঙ্গিত। লটারি বা ফাটকায় প্রাপ্তি যোগ। খেলাধূলায় কৃতিত্ব। বাক্যে ও ... বিশদ
এ ব্যাপারে রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা ইতিমধ্যে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েও দিয়েছেন, যেসব জেলায় গম চাষ গত দু’বছর বন্ধ ছিল, সেখানে এবার কৃষকরা চাইলে গম বুনতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে গমের চারটি জাত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিবিডব্লু ১৮৭, ডিবিডব্লু ১৭৩, এইচডি ২৯৬৭ ও এইচডি ৩০৪৩ প্রজাতির গমের বীজ কৃষকরা বুনতে পারেন। সেইমতোই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। এগুলি ঝলসা রোগ প্রতিরোধকারী এবং সহনশীল জাত। অবশ্যই বীজ হতে হবে সার্টিফায়েড। জমিতে বোনার আগে ভালো করে ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। জমিতে জারি রাখতে হবে বিশেষ পরিচর্যা। ঝলসার কোনওরকম উপসর্গ দেখা দিলেই রাজ্য কৃষি দপ্তরের সদর অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকেই গমের মারাত্মক ঝলসা রোগটি ঢুকে পড়েছিল বলে অনুমান কৃষি আধিকারিকদের। বিপন্ন চাষিদের মাঠেই ফসল পুড়িয়ে দিতে হয়েছিল। এবার যাতে কোনওভাবেই ওপার বাংলা থেকে চোরাপথে গমের বীজ এ রাজ্যে না ঢোকে, সেদিকে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। এনিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও সজাগ করা হয়েছে। সরকারি তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া জাতের বাইরে কোনও দোকানে যাতে গমের বীজ বিক্রি না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে কৃষি আধিকারিকদের। রাজ্যের এক কৃষিকর্তা জানিয়েছেন, গম চাষে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও এ বছর চাষের এলাকা বাড়াতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে না। তবে কোনও কৃষক যদি গম চাষ করতে চান, তাঁকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি না। নির্দিষ্ট ভ্যারাইটির বীজ বুনতে বলা হচ্ছে। চাষের প্রথম থেকে কৃষি আধিকারিকদের পরামর্শ মেনে চলতে বলা হচ্ছে। তবে, খুব বেশি জমিতে গম চাষ না করে বিকল্প চাষ হিসেবে তৈলবীজ, ডালশস্য, হাইব্রিড ভুট্টা, পেঁয়াজ চাষ করতে বলা হচ্ছে।
কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গমের বীজ বোনার সময়। মুর্শিদাবাদে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গমচাষ হতো। কিন্তু গত দু’বছর চাষ বন্ধ থাকায় এবার কৃষকদের মধ্যে গম বোনার ক্ষেত্রে তেমন উৎসাহ নেই। চাষিরা জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে এখন গমের বীজ নেই। ফলে চাষ করতে গেলে বীজ কিনতে হবে। তা ছাড়া রাজ্যে শীতের স্থায়ীত্ব কমছে। গরম পড়ে গেলে গম গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না। ফলন মার খায়। এমনকী গম চাষে অন্তত ৫-৬টি সেচ দেওয়ার দরকার পড়ে। ভূগর্ভস্থ জলের সমস্যাও বাড়ছে। এতসব সত্ত্বেও যদি তাঁরা গম চাষ করেন, তা হলে কী সরকারি সহায়তা মিলবে, তা আগে জানানো হোক। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা তাপসকুমার কুণ্ডু জানিয়েছেন, যাঁরা গমচাষ করতে চাইছেন, তাঁদের বলা হয়েছে অবশ্যই যেন সার্টিফায়েড বীজে চাষ করেন। সেইসঙ্গে সরকারের সুপারিশকৃত ভ্যারাইটি ছাড়া গম চাষ করা যাবে না। একই বক্তব্য নদীয়া জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরীর। তিনি বলেন, চাষিরা গমচাষ করতে চাইলে সুপারিশকৃত ভ্যারাইটির সার্টিফায়েড বীজ কিনে করতে বলা হচ্ছে। কৃষি আধিকারিকরা যা-ই বলুন না কেন, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা উঠলেও সাবধানতার কারণে এ বছর নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গম চাষ না করাই ভালো। সেক্ষেত্রে কৃষকরা বিকল্প হিসেবে তৈলবীজ ও ডালশস্য চাষ করতে পারেন। জলের সুবিধা থাকলে সব্জিও চাষ করতে পারেন। তাঁদের তরফে নদীয়ার কল্যাণী, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গমের ৮৬টি ভ্যারাইটি নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ চলছে বলে জানিয়েছেন ধীমানবাবু। এর মধ্যে ৫টির মতো ভ্যারাইটিকে প্রাধান্য দিয়ে চাষ করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য, গমের বীজ বোনার সময় ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকলেও চলে। কিন্তু গাছের যখন মূল বৃদ্ধির সময়, তখন তাপমাত্রা ১৩-১৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি হয়ে গেলে ক্ষতি হয়। ফলনে প্রভাব পড়ে। জলের সমস্যার কারণে অনেক চাষিই গমচাষে তিনটির বেশি সেচ দিতে পারেন না। অথচ পাঁচ-ছ’টি সেচ দেওয়া দরকার।
মুর্শিদাবাদের রানিনগর ২ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা ড. মিঠুন সাহা জানিয়েছেন, এ বছর পারতপক্ষে গম চাষ না করাই ভালো।