সংবাদদাতা: এ বছর বর্ষা কম। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ব্লকের চাষিদের ভরসা বাড়ছে হাইব্রিড চাষের উপর। সম্প্রতি ব্লকের শঙ্করপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে হয়ে গেল চাষিদের নিয়ে কৃষি-প্রশাসনের মিটিং। সেই মিটিংয়ে প্রসাদ রায়, অজিত সরকার, বাবলু মণ্ডল জানান, তাঁরা খরিফ মরশুমের প্রথম দিকে তাঁদের মোট ১২ বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য বীজতলা বাবদ সুপার শ্যামলী, সবিতা পাটনাই প্রজাতির বীজ জমিতে ফেলেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে তা নষ্ট হয়ে যায়। এর পর বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা হাইব্রিড বীজ জমিতে ফেলেছেন। বীজতলা তৈরি হয়েছে এবং রোপনও শেষ হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, হেক্টরে ৫.৫ থেকে ৬ টন উৎপাদন পাবেন। এ বছর বৃষ্টি কম, তাই হাইব্রিড প্রজাতির উপরেই ভরসা রাখছেন তাঁরা। প্রতি কেজি তিনশো টাকা দরে কিনেছেন বীজ। বারুইপুর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা অথৈ গুপ্ত জানালেন, কৃষকরা যদি প্রথম বীজতলা তৈরির সময় বিমা করাতেন, তা হলে তাঁরা এখন বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ পেতেন। এখনকার হাইব্রিড চাষের জন্য তাঁরা বিমা করাতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ধানের বীজে সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা। যাঁরা আধার কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাসবই দিয়ে বীজ কিনেছেন, তাঁরা ভর্তুকি পেয়েছেন। কালীপদ সর্দার, অপর্ণা সর্দার, আবুল হোসেন জানান, এ বছর বৃষ্টি কম। গরম আবহাওয়া। তাই একে কাজে লাগিয়ে তাঁরা জলদি জাতের সিন্থেটিক প্রজাতির ফুলকপির চাষ করতে চান। ভালোই দাম পেয়ে থাকেন। কৃষি আধিকারিক মহঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, কৃষকরা ছায়াঘর বানিয়ে সেখানে ফুলকপির চাষ করতে পারেন। এতে ভালোই ফলন পাবেন। ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না। আবার ছায়াঘর তৈরির জন্য সরকারি ভর্তুকি পাবেন কৃষকরা। দীপক নস্কর ও গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, তাঁরা এই বর্ষায় প্রিয়া প্রজাতির হাইব্রিড শশার চাষ করেছেন। লম্বা হয়েছে ১৭-২০ সেমি। গড় ওজন হয়েছে ২৫০-৩০০ গ্রাম। ৫০ দিনেই ফলন পেয়েছেন। রং হয়েছে হাল্কা সবুজ। শশা খেতে দারুণ সুস্বাদু হয়েছে। তেতোভাব নেই। দাম পেয়েছেন ১০০ টাকা পাল্লা অর্থাৎ ৫ কেজি ১০০ টাকা। লাভ হয়েছে ভালোই। এই জাতের রোগ প্রতিরোধের ভালো ক্ষমতা রয়েছে।
আমিরুদ্দিন মণ্ডল ও জাকির হোসেন বলেন, তাঁরা এম বিটি এইচ ১০১ হাইব্রিড উচ্ছের চাষ করেছেন তাঁদের ৬ বিঘা জমিতে। লম্বা হয়েছে ১৫-১৭ সেমি। রং সবুজ। দু’দিকে সরু ও মাঝে মোটা। গড় ওজন হয়েছে ৬০-৭০ গ্রাম। ৭০-৮০ দিনেই ফলন পেয়েছেন। বর্ষার ফসল। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসেও উৎপাদন ভালোই। দাম ৫ কেজি ৫০ টাকা। কৃষি আধিকারিক শাশ্বত সর্দার বলেন, হাইব্রিড চাষে খরচ আছে। লাগবে ৪০ এইচপি ট্রাক্টর। বৃষ্টি না হলে মেশিনে সেচ দিতে হবে। রাসায়নিক সার লাগবে ১৪-৩৫-১৪ অথবা ১৯-১৯-১৯ অথবা ১২-৩২-১৬ অনুপাতে। কৃষিযন্ত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি পেতে কৃষকরা আবেদন করতে পারবেন।