নবজ্যোতি সরকার: শ্রাবণেও সেভাবে বৃষ্টির দেখা না মেলায় মার খাচ্ছে আমনের বীজতলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার, মগরাহাট, ফলতা, কুলপি ও বিষ্ণুপুর এলাকার আমন চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে। ধান রোয়া করা তো দূরের কথা, মাঠেই বীজতলা কার্যত পুড়ে যেতে বসেছে। ওইসব এলাকার চাষিদের বক্তব্য, ডায়মন্ডহারবার খালের জল প্রশাসন ছাড়ার ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি এমন হতো না। এই অঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির চাষিরা অনেক আশা নিয়ে স্বর্ণ মাসুরি, সন্তোষি, রাজলক্ষ্মী, দুধেশ্বর, বর্ষালক্ষ্মী, পান্নাই প্রভৃতি উচ্চফলনশীল ধানের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু জলের অভাবে বেশিরভাগ বীজতলাই নষ্ট হতে বসেছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ওই এলাকার প্রায় ১২০ হেক্টর জমির বীজতলার ৯৫ শতাংশ জলের অভাবে ধুঁকছে। কিন্তু সেচ দপ্তর কিংবা কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের দেখা নেই। এখনও ডায়মন্ডহারবার খালের জল পেলে তাঁরা চাষে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু আর কিছুদিন এমন অবস্থা চললে আর কোনও উপায় থাকবে না। ডায়মন্ডহারবার এক নম্বর ব্লকের নেতড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষি জামশের আলি, রিয়াজ আলি জানিয়েছেন, তাঁদের নেতড়া অঞ্চলে খালের উপর তৈরি হচ্ছে বাড়ি-দোকান। তার আগে ডায়মন্ডহারবার খালের জল পেতেন তাঁরা। কিন্তু এখন খুবই সামান্য জল মেলে। মগরাহাট এক নম্বর ব্লকের উস্থি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি সাব্বি আলি মণ্ডল বলেন, তাঁদের অঞ্চলে যাঁদের পুকুরে জল আছে, তাঁরা আজ ভাগ্যবান। এক ঘণ্টা পাম্পের জলে মাঠে সেচ দিলে তাঁদের দিতে হয় এক হাজার টাকা। খাল থেকে জল পাওয়া গেলে এমনটা হতো না। মগরাহাট ২ নম্বর ব্লকের রাধানগর, ধানিরামের চক, শ্যামপুর, বরোদ, ধামুয়া দক্ষিণ, গোকর্ণ, দিঘির কলস অঞ্চল থেকে বহু চাষি জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামগুলিতে খাওয়ার জল পর্যন্ত নেই। সরকারি মিনি ডিপ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। তাঁরা নিজেরাই কী করে বাঁচবেন তার ঠিক নেই।
ফলে বীজতলা বাঁচাবেন কীভাবে? সরকারিভাবে কাটা পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে। এখনই ডায়মন্ডহারবার খালের জল দরকার। নতুবা সব শেষ হয়ে যাবে। মগরাহাট ২ নম্বর ব্লকের মুলটি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষি সুব্রত কুমার মণ্ডল ও গৌরি মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকাটি নিচু। রবি মরশুমে ডায়মন্ডহারবার খালে আসা জল এখনও কিছুটা অবশিষ্ট রয়েছে তাঁদের অঞ্চলে। তা দিয়েই তাঁরা বীজতলা রক্ষা করে চলেছেন কোনওমতে। কিন্তু এর পর খালের জল না পেলে সব শেষ হয়ে যাবে।