উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: বাঁকুড়ায় এই প্রথমবার ‘ময়না’ মডেলে মাছচাষের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য দপ্তর। জেলায় চারটি পৃথক ইউনিটে মোট ৮ হেক্টর আয়তনের পুকুরে সমবায় ভিত্তিতে ময়না মডেলে মাছচাষ করা হবে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতে প্রায় এক লক্ষ দেশি মাছের চারা ছাড়া হবে। খরচ হবে প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা। তার সিংহভাগই দেবে রাজ্য সরকার। দেশি মাছ চাষের নানা পদ্ধতির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ‘ময়না’ মডেল দারুণ জনপ্রিয়। বাঁকুড়ায় এই প্রথম তা অনুসরণ করে মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, দুই হেক্টর আয়তনের জলাশয়ে প্রতি ইউনিটে ময়না মডেলে মাছচাষ করে বছরে গড়ে ৪০ লক্ষ টাকা আয় হবে। সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে প্রায় সাড়ে ১৯ লক্ষ টাকা। জেলায় আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পৃথক ইউনিটে মোট আট হেক্টর আয়তন জলাশয়ে এই মডেলে মাছচাষ হবে। তাতে সাফল্য পাওয়া গেলে গোটা জেলায় তা ব্যাপক হারে চাষ করা যাবে। চাষিরাও আগামীদিনে নিজেদের উদ্যোগে ওই মডেলে মাছচাষ করতে এগিয়ে আসবেন। বাঁকুড়া জেলা মৎস্য আধিকারিক কিরণলাল দাস বলেন, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় বর্ষার জল অনেকটা অংশে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকে। ওই জমা জলকে কাজে লাগিয়ে সেখানকার চাষিরা খুব কম সময়ে মাছের ভালো ফলন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি একই মডেলে রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় বৃষ্টির জমা জলে মাছচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বর্ষার জল দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকে সেখানেই ওই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। বাঁকুড়াতেও পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এরকম চারটি ইউনিটে মাছচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমবায় ভিত্তিতে মাছচাষ করা হবে। তার সিংহভাগ খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে। ময়না মডেলে পাঁচ হেক্টর আয়তনের জলাশয়ে মাছচাষের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু, বাঁকুড়ার মতো খরাপ্রবণ জায়গায় এতো বড় জলাশয় খুব কম রয়েছে। তাই এখানে সর্বনিম্ন দুই হেক্টর আয়তনের জলাশয় নিয়ে একটি ইউনিট গড়া হবে। সব মিলিয়ে জেলায় মোট চারটি ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে মাছচাষ করা হবে।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, খরাপ্রবণ বাঁকুড়ায় অধিকাংশ জলাশয়ে গ্রীষ্মকালে জল শুকিয়ে যায়। সারাবছর পর্যাপ্ত জল না থাকায় দীর্ঘমেয়াদি মাছচাষের পক্ষে তা উপযোগী নয়। তাই বাঁকুড়ায় এর আগেও ময়না মডেলে মাছচাষের পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া ময়না মডেলের জন্য নির্দিষ্ট পাঁচ হেক্টর আয়তনের জলাশয় এলাকায় খুব কম রয়েছে। তাই আয়তনে ছোট হলেও ওই মডেলের মূল ছক অনুসরণ করে জেলায় ছোট ছোট জলাশয়েও মাছচাষ করা যায় কিনা তা নিয়ে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। তাঁদের পরামর্শে সম্প্রতি দুই হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট জলাশয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ময়না মডেলে মাছচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেইমতো প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তাতে মাছের চারার সংখ্যা কমানো হয়েছে। প্রতি দু’হেক্টর আয়তনের জলাশয়ের জন্য ২৪ হাজার মাছের চারা ছাড়া হবে। মূলত রুই, কাতলা ও মৃগেল, এই তিন ধরনের মাছের চারা ছাড়া হবে। প্রতিটি চারার ওজন দেড়শো থেকে দুশো গ্রাম থাকবে। খাবার দেওয়া হবে চার টন। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ছাড়াও কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এক ইউনিটে খরচ হবে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। যার সিংহভাগই দেবে রাজ্য সরকার। এক বছর পরে প্রতি ইউনিটে মাছ বিক্রি হবে প্রায় ২৫ হাজার কেজি। কেজি প্রতি দর ১৬০ টাকা হলে মোট আয় হবে ৪০ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা। প্রকল্প সফল হলে বাঁকুড়ায় মাছের জোগান বাড়বে। তাতে দামও কিছুটা কমবে।