ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শস্যশ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য বিভাগের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ ড. স্বাগত ঘোষ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকেই এই ভাইরাসের আমদানি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনে পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গোটা পুকুরের তেলাপিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় কয়েকদিন আগে সোনারপুরের এক মাছ চাষি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁর এখনও খাবারের দোকানে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ধার রয়েছে। এই অবস্থায় পুকুরের সব তেলাপিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। লেক ভাইরাসের আক্রমণ হলে তেলাপিয়ার চোখ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। সারা গায়ে ফোস্কার মতো দেখা দিচ্ছে। মাছ খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এবং খুব বেশি হলে এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যাচ্ছে। আগে এই ভাইরাসের আক্রমণে তেলাপিয়ার পেটের দিকে হলদে ভাব দেখা যেত। এখন তা আর দেখা যাচ্ছে না।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, একবার এই ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিলে তখন আর কিছুই করার থাকে না। এর কোনও ওষুধ বা সেই অর্থে চিকিৎসা নেই। ফলে কোনওভাবেই যাতে এই ভাইরাসের আক্রমণ ঘটতে না পারে, প্রথম থেকেই মৎস্য চাষিদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখান থেকে খুশি তেলাপিয়ার চারা কেনা যাবে না। শুধুমাত্র সরকার স্বীকৃত যেসব মৎস্য খামার রয়েছে, সেখান থেকেই সার্টিফায়েড চারা কিনতে হবে। পুকুর ভালো করে নেট দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে। কোনও সংক্রমিত পুকুরে জাল টেনে তা ভালোভাবে না ধুয়ে যদি অন্য পুকুরে ওই জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়, সেখানেও নতুন পুকুরটি সংক্রমিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, তিলাপিনে ভাইরাস বা তিলাপিয়া লেক ভাইরাস শুধুমাত্র তেলাপিয়ার শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই ভাইরাসের আক্রমণে অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি তেলাপিয়ার খাদ্যনালীতে ঘা হয়। মাছের মস্তিস্ক, চোখ ও লিভাবে মূলত আক্রমণ করে ভাইরাসটি। ২০১৪ সালে এই ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম রিপোর্ট করা হয় ইজরায়েল-এ। এরই মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেক ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার প্রধান উপায়, তেলাপিয়ার চোখ ফ্যাকাশে অর্থাৎ ছানি পড়ার মতো হয়ে যায়। সঙ্গে গায়ে ফোস্কা ও পেট ফুলে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় কিট-এর মাধ্যমে রোগটি শণাক্ত করতে হয়। এবং রোগাক্রান্ত পুকুরের জল বা মাছ যাতে কোনওভাবে অন্যত্র না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে হবে। রোগ প্রতিরোধে পুকুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মাছ চাষ করা উচিত।
মাছ চাষে ব্যবহৃত জাল ও অন্যান্য সামগ্রী সঠিক পদ্ধতিতে শোধন বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। তেলাপিয়া মাছের ব্রুডার এবং সেই পুকুরের জল পরীক্ষিত কি না তা দেখে তবেই সেখান থেকে তেলাপিয়ার ধানিপোকা কিনতে হবে। যে পুকুরে একবার লেক ভাইরাসের আক্রমণ ঘটেছে, সেখানে ২-৩ বছর তেলাপিয়া চাষ না করাই ভালো। পুকুরে পলিথিন বিছিয়ে চাষ করা যেতে পারে। সতর্কতা হিসেবে পুকুরে বায়ো সিকিউরিটি গড়ে তুলতে হবে।