গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
হরিণখুড়ি ধানের বিশেষত্ব হল, লবণাক্ত জমিতেও এই ধানটি চাষ করা যায়। বিঘায় ১২-১৩ মণ ফলন পাওয়া যায়। জমিতে জল জমা সহ্য করতে পারে। এই ধানের চিড়ে দারুণ সুস্বাদু। খই ভালো হয়। ধানের দুই মাথা কালচে। দেখতে অনেকটা হরিণের চোখের মতো। চাল মাঝারি সরু। ছোট দানা। সাগরের প্রবীণ কৃষকরা জানিয়েছেন, অনেক বছর আগে ওই এলাকায় এই ধানটি চাষ হতো। নদীর জল ঢুকে অনেক জমি নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও কিছু জমিতে এই ধানটি টিকে ছিল। পরে তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। স্বামী বিবেকানন্দ ইউথ কালচারাল সোসাইটির সম্পাদক শুকদেব নাথ জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় কমলপুর গ্রামের এক কৃষকের কাছে প্রথম ধানটি পাওয়া যায়। তখন ধানটির পরিচয় জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মন্দিরতলা এলাকার কৃষক দেবাশিস বেরার কাছ থেকে ওই ধান সংগ্রহ করেছেন। দেবাশিসবাবুর কাছে জানা যায়, পূর্ব মেদিনীপুরেও এই ধান চাষ হয়। এর পর ধানটির নমুনা নিয়ে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন তাঁরা। সেখানে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, ধানটির নাম হরিণখুড়ি। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাষ করে এই দেশি সুগন্ধী ধানটির বীজের পরিমাণ বাড়ায়। তার পর তা সাগরের কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাষের জন্য। ২০১২ সাল থেকে সাগরে নতুন করে হরিণখুড়ি ধানটির চাষ শুরু হয়েছে। প্রতি বছর এলাকা বাড়ছে। হরিণখুড়ি জাতটি ছাড়াও বিবেকানন্দ ইউথ কালচারাল সোসাইটির কাছে অনেক প্রজাতির ধানের বীজ রয়েছে। যেগুলির অধিকাংশই একসময় বিভিন্ন এলাকায় চাষ হলেও এখন হারিয়ে গিয়েছে কিংবা অবলুপ্তপ্রায়। শুকদেববাবু জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে ২১২ ভ্যারাইটির ধানের বীজ রয়েছে। দেশি ধানের বীজ সংরক্ষণের জন্য ২০১৬ সালে ভারত সরকারের বীজ সংরক্ষণ বিভাগ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও পেয়েছে তাঁদের সোসাইটি। ওই টাকায় ধান ভাঙানোর আধুনিক মেশিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ জানিয়েছেন, সাগরে চাষের জন্য আমরা হরিণখুড়ি ধানের বীজ দিয়েছি। খরিফে ওই ধানটি চাষের জন্য প্রযুক্তি দেওয়া হবে চাষিদের। চাষের বিভিন্ন খুঁটিনাটি নিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, হারিয়ে যেতে বসা দেশি সুগন্ধী ধানগুলি এভাবেই বাঁচিয়ে রাখুন কৃষকরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, হরিণখুড়ি ধানটি মাঝারি জমিতে ভালো হয়। গাছের উচ্চতা ৫ ফুটের মতো হয়। রোগপোকা সহনশীল। ১৩৫-১৪০ দিনে ফলন পাওয়া যায়। ধৈঞ্চা ও জৈবসার দিয়ে চাষের কথা বলছেন কৃষি আধিকারিকরা। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হরিণখুড়ি ধানের ৪০ কেজি বীজ দেওয়া হয়েছে। বাকিটা দিয়েছে বিবেকানন্দ ইউথ কালচারাল সোসাইটি। একেবারে বিনামূল্যে না দিয়ে তারা কেজি প্রতি বীজের জন্য ৫ টাকা করে নিচ্ছে।
ড. মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ জানিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ হেক্টর জমিতে দেশি সুগন্ধী ধানের চাষ হয়। মোট ৩ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। যার বেশিরভাগটাই এ রাজ্যে বিক্রি হয়ে যায়। কিছুটা দক্ষিণ ভারতে যায়।