পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বাঁকুড়ার মাটিতে ফলচাষের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে চাষিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের উদ্যানপালন দপ্তরও। ওই দপ্তরের তরফে ফলচাষে আগ্রহী কৃষকদের যেমন সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে, তেমনই কীভাবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলচাষে আরও লাভ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন উদ্যানপালন আধিকারিকরা। হর্টিকালচার দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষিদের বিনামূল্যে ফলের চারা থেকে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জৈবসার এমনকী অনেক সময় আগাছানাশকও দেওয়া হচ্ছে।
জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক মলয় মাজি জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরে বাঁকুড়ায় ফলচাষের এলাকা বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ৪৫০ হেক্টর জমিতে ফলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। তাতে যুক্ত হয়েছেন ১১৭০ জন কৃষক। ২০১৮-১৯ সালে ৪০৫ হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ফলবাগান। তাতে যুক্ত হয়েছেন ৯১৫ জন কৃষক। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বাঁকুড়ায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ফলের বাগান করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ জমিতে ফলের বাগান করা হয়েছে, তার প্রায় ৭০ শতাংশে চাষ হচ্ছে নানা প্রজাতির আম। এর মধ্যে আম্রপালি খুব ভালো হচ্ছে। রয়েছে ল্যাড়া, মল্লিকার মতো আমও। এছাড়া আঙুর, কাজু, মোসম্বি, পেয়ারা, বেদানা, ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরি বাগানও গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে আপেল। মলয়বাবু বলেন, বাঁকুড়াকে প্রাধান্য দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটি জেলাকে নিয়ে ফল চাষের প্রসারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ায় চাষ হওয়া আম্রপালি আম তার স্বাদের গুণে কলকাতার মেলায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। দিল্লিতেও যে মেলা হয়ে থাকে, তাতেও সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছে বাঁকুড়ার আম্রপালি। বাঁকুড়া শহরের কাছেই দামোদরপুর এলাকায় পতিত জমিতে ফলের বাগান গড়ে নজর কেড়েছেন সিদ্ধার্থ সেন। কৃষকরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাগানে ফলছে ভাগুয়া প্রজাতির বেদানা। নাগপুরের মোসম্বি। একাধিক প্রজাতির পেয়ারা। আম্রপালি, মল্লিকা, ল্যাংড়া প্রজাতির আম। কিছুটা জমিতে আপেল চাষ করেছেন তিনি। ফল আসতে শুরু করেছে। সিদ্ধার্থবাবুর বাগান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি দিল্লিতে আম রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর তিনি দুবাইয়ে ১৬ টন আম্রপালি আম রপ্তানি করেছেন বলে জানিয়েছেন। এবছর ৪০ টন আম দুবাইতে রপ্তানি করা হবে বলে চুক্তি হয়েছে। যেহেতু তিনি বিদেশে আম রপ্তানি করে থাকেন, তাই ফলের মধ্যে যাতে কোনওরকম বিষক্রিয়া কিংবা ফ্রুট ফ্লাই না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় বলে জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ। তাঁর দাবি, চাষে পুরোপুরি জৈবসার প্রয়োগ করে থাকেন তিনি। জমিতেই তৈরি করেন ভার্মিকম্পোস্ট। জৈবসার প্রয়োগ করায় ফলের আকার ও স্বাদ দারুণ হচ্ছে। ফল উৎপাদনের পাশাপাশি চারাও তৈরি করছেন। এলাকার কৃষকরা তাঁর বাগানে এসে চাষ পদ্ধতি দেখে যাচ্ছেন। ফলচাষে তিনি বাঁকুড়ায় মডেল বাগান তৈরি করতে চান। উদ্যানপালন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাঁকুড়ায় একটু লেট ভ্যারাইটির আম চাষ করে থাকেন অনেক ফলচাষি। তাতে জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে আম পাকতে শুরু করে। গোটা জুলাই মাস ধরে আম পাওয়া যায়। এইসময় অন্যান্য জেলার আম অনেকটা ফুরিয়ে আসে। ফলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া বাঁকুড়ায় যেহেতু আম্রপালি আমের চাষ বেশি হয়ে থাকে, এই আমের সুবিধা হল গাছ থেকে পাড়ার পর বেশিদিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায়। সহজে পচে না। গাছ থেকে একটু কাঁচা অবস্থায় পেড়ে নিলেও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কয়েকদিন রেখে দিলে পেকে যায়। এ জন্য কার্বাইড বা ইথিলিন দেওয়ার দরকার পড়ে না।