ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
তিনি জানিয়েছেন, তোষা পাটের ক্ষেত্রে হলুদ মাকড় সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে। হাল্কা হলুদ রঙের এই মাকড় গাছের পাতার ডগায় আক্রমণ করে। এবং ডগার কচি রস শুষে খায়। ফলে ডগার পাতা কুঁকড়ে যায়। আক্রান্ত পাতার রং সবুজ তামাটে হলদে হয়ে যায়। পাতা নৌকার মতো বেঁকে যায়। এবং গাছের বৃদ্ধি পায়। তিতা পাটের ক্ষেত্রে আংকা পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। তবে অনুকূল আবহাওয়ায় মিঠা পাটেও ক্ষতি করে। চারা ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এদের আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। স্ত্রী পোকা গাছের ডগার নরম অংশে ডিম পাড়ে। এতে ডগা শুকিয়ে যায়। অবাঞ্ছিত শাখা বের হয় গাছে। এতে তন্তুর মান কমে যায়। বর্ষার শুরুতে পাটে ঘোড়া পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। সবুজ রঙের শুককীট গাছের ডগার পাতা খেয়ে নেয়। এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ঘোড়া পোকার দাপট বেশি হলে বীজের খোসা এমনকী কাণ্ডের উপরের অংশও খেয়ে ফেলে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই পাটে শুঁয়ো পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। ছোট অবস্থায় শুঁয়োপোকা দলবদ্ধভাবে পাতার নীচে থাকে। এরা গাছের কচি পাতা খেয়ে জালি করে দেয়। এবং দ্রুত গোটা জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তোষা পাট ও তিতা পাটে সমানভাবে শুঁয়োপোকার আক্রমণ ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জলদি বীজ বপন করলে পাটের ক্ষেত্রে নীল বা কাথারি পোকার আক্রমণ ঘটে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এই পোকা গাছের উপরের পাতাগুলিকে জড়িয়ে দেয়। এবং খেতে শুরু করে। ইদানীংকালে পাটের চারায় এই পোকার আক্রমণ অনেকটাই বেড়েছে। তোষা পাটের ক্ষেত্রে হাল্কা ধূসর রঙের ডেবরো পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। এদের আক্রমণে পাটগাছের পাতায় নানা আকারের ছিদ্র দেখা যায়। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি যখন খুব গরম থাকে, তখন লাল মাকড়ের আক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। এদের আক্রমণে আক্রান্ত গাছের পাতা চামড়ার মতো হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। গাছ নাড়া দিলে পাতা ঝরে পড়ে। সব ধরনের পাটগাছের ক্ষেত্রে সুতো কৃমির আক্রমণ হয়ে থাকে। বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে পাটচাষ করলে এর আক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। বর্ষা শুরুর পরই পাটগাছের শিকড়ে এদের আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের শিকড় ফুলে ওঠে। আক্রান্ত গাছ মাটি থেকে ঠিকমতো জল ও খাবার গ্রহণ করতে পারে না। সুতো কৃমি ডাঁটা পচা ও ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। পাটে সুতো কৃমি আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে গোড়া পচা রোগ মারাত্মক আকার নেয়। বীজ শেষ পর্যন্ত রোগাক্রান্ত গাছের জন্ম দেয়। পাটের মরচে ধরা রোগে প্রথমে পাতায় ও পরে কাণ্ডে ছোট আকারের দাগ দেখা যায়।
এই দাগের মধ্যের অংশ হাল্কা ছাই রঙের হয়। এবং কাণ্ডের গভীরে ক্ষত সৃষ্টি করে। এর ফলে পাটের গুণগত মান কমে যায়। অনেকগুলি ছোট দাগ মিশে গিয়ে বড় ক্ষত সৃষ্টি করে। আক্রমণ বেশি হলে গাছ মারা যায়। পাটের ঢলে পড়া বা হুগলি উইল্ট রোগটি মূলত জীবাণু ঘটিত। মিঠা পাটের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি মাত্রায় দেখা যায়। একই জমিতে প্রতি বছর পাট, আলু বা ওই গোত্রের ফসল যেমন, বেগুন, টম্যাটো, লঙ্কা প্রভৃতি চাষ করলে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। প্রথমে গাছের নীচের পাতাগুলি ঝরে পড়ে। এবং ক্রমে উপরের পাতাগুলি ঝরতে থাকে। গাছ ঢলে পড়ে। আক্রান্ত গাছের রং কালো হয়ে যায়। এবং তার উপর সাদা ছত্রাক দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের ডাঁটার টুকরো কেটে পরিষ্কার জলে ডোবালে জল ঘোলাটে হয়ে যায়। পাটের রস পচা বা সফট রট রোগে গাছের গোড়ায় হাল্কা বাদামি দাগ দেখা যায়। সকালের দিকে ওই দাগের উপর তুলোর মতো ছত্রাকের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। কয়েকদিন পরে সর্ষে দানার মতো দেখা যায়।
সামান্য হাওয়ায় গাছটি গোড়া থেকে ভেঙে পড়ে এবং মারা যায়। মোজাইক রোগে পাটের পাতায় সবুজ ও হলুদ ছোপ দাগ দেখা যায়। এটি একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। সাদা মাছি এই রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। এটি মূলত তিতা পাটের রোগ। আক্রমণ বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে। পাটের রোগ প্রতিরোধে চাষের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটচাষের জন্য দোঁয়াশ মাটি যুক্ত মাঝারি থেকে উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটি অম্ল হলে বীজ বোনার একমাস আগে হেক্টর প্রতি ২-৪ টন চুন ব্যবহার করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়।