সংবাদদাতা: এমনিতেই পাটচাষে সমস্যা লেগে রয়েছে। প্রতি বছর পাট চাষের খরচ বাড়ছে। এছাড়াও চাষের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেসিআই অফিসে গেলে সেসব সমস্যার অনেকটাই সুরাহা পেতেন চাষিরা। কিন্তু অফিসটি উঠে যাওয়ায় পাটচাষিদের হয়রানি বেড়েছে। বারাসত ২ নম্বর ব্লকের শাসন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি সিরাজুল শেখ বলেন, গত বছর অফিসটি উঠে যাওয়ার আগে বহু কৃষক পাটের সহায়ক মূল্য ৬ হাজার টাকা করার দাবিতে ডেপুটেশন দিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়। গত বছর তোষা পাটের এবং সাদা পাটের সহায়ক মূল্য ছিল ৪,১০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। ভালো পাটের আরও দাম বেশি। হাবড়া ১ নম্বর ব্লকের মছলন্দপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাটচাষি শিবেন বিশ্বাস বলেন, গত বছর তিনি তাঁর তোষা পাট নিয়ে জেসিআই-এর চারঘাট বিপণন কেন্দ্রে গিয়ে বিপদে পড়েন। তাঁর পাট ভিজে বলে কুইন্টাল প্রতি ৫ থেকে ৭ কেজি ওজন কেটে নেওয়া হয়। তিনি পাট বিক্রি না করে বাড়ি চলে আসেন। এর পর বহু চেষ্টা করে তিনি কলকাতায় গিয়ে জেলা প্রবন্ধককে তাঁর বক্তব্য জানান। প্রবন্ধক ব্যবস্থা নিলে তিনি ১ কুইন্টাল পাটেরই দাম পেয়ে যান। তবে এরজন্য তাঁকে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়। বারাসতে অফিস থাকলে রোজই তিনি কোনও না কোনও কাজে বারাসতে আসেন। সমস্যা বারাসত অফিসে গিয়ে মিটিয়ে নিতে পারতেন। এদিকে বনগাঁ ব্লকের গোপালনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাটচাষি শম্পা চৌধুরী, মিনতি মান্না বলেন, গত বছর তাঁরা তাঁদের উন্নতমানের সাদা পাট নিয়ে জেসিআই-এর বনগাঁ বিপণনকেন্দ্রে গিয়ে বিপদে পড়েন। ওই বিপণন কেন্দ্র থেকে তাঁদের জানানো হয়, তাঁদের এই পাটের গুণগত মান ডব্লু এন ৫। তাঁরা সহায়ক মূল্য পাবেন কুইন্টাল প্রতি ২,৯০০ টাকা। তাঁরা কথা না বাড়িয়ে কলকাতা অফিসে যোগাযোগ করেন। অনেক চেষ্টার পর জেলা প্রবন্ধকের দেখা পান। তাঁদের সঙ্গে থাকা তাঁদের পাটের নমুনা তাঁরা প্রবন্ধককে দেখান। প্রবন্ধক গুণগত মান বিচার করে ডব্লু এন ২-এর দাম দিতে বলেন বনগাঁর বিপণন কেন্দ্রকে। এতে তাঁরা পাটের মূল্য পান কুইন্টাল প্রতি ৪,১০০ টাকা। তাঁরা নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে যান। গাইঘাটার জলেশ্বর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি সোমেন বাগ, মিনতি বলেন, জেসিআই-এর বারাসত অঞ্চল অফিস উঠে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা তাঁদের ৫ বিঘা লিজের জমিতে আর পাট বড় করছেন না। পাটের চারা ১০ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট হওয়া মাত্র তা কেটে পাট শাক হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেজি প্রতি ১০ টাকা দাম পাচ্ছেন। তাঁরা আর হ্যাপা বাড়াতে চান না। জেসিআই-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, চাষিরা হলেন অন্নদাতা। চাষিরা যেন কোনওভাবেই বিপদে না পড়েন, এটাই চান তাঁরা। গত বছর উন্নত মানের তোষা পাট টিডিএন ১ এর সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টাল প্রতি ৪,২৫০ টাকা। আর সাদা ডব্লু এন ১ -এর মূল্য ছিল কুইন্টাল প্রতি ৪,২৫০ টাকা। এবছর দাম আরও বাড়বে।