উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
পাটচাষে অন্যতম সমস্যা আগাছা। পাটের জমিতে আগাছা দমন করতে গিয়ে অনেক টাকা ও সময় খরচ হয়ে যায় কৃষকের। ফলে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে পাটের জমিতে আগাছার দাপট কম হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা জরুরি। কৃষিবিদরা বলছেন, পাটের জমি খুব ভালোভাবে সমতল করতে হবে। এতে আগাছা অনেকটাই কম হয়। সারিতে পাট বুনলে আগাছা নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্তর্বর্তী পরিচর্যায় সুবিধা হয়। পাটের দুই সারির মাঝে লাল নটে শাক বুনে দিলে একদিকে যেমন একমাসের মধ্যে ওই শাক তুলে বাজারজাত করে বাড়তি আয় ঘরে তোলা সম্ভব, তেমনই লাল নটে শাক বোনার ফলে পাটের জমিতে আগাছার উপদ্রব অনেকটাই কম হতে পারে। পাটের দুই সারির মাঝে মুগডালও চাষ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পাট বোনার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে মুগ লাগিয়ে দিতে হবে। মুগ উঠে গেলে তা কেটে নেওয়ার পর পাট নিজের মতো বাড়তে থাকবে। এতে একদিকে যেমন বাড়তি ফসল বিক্রি করে কৃষক লাভ পাবেন, তেমনই আগাছার দাপট অনেকটাই কম হবে। পাটের ভালো তন্তু উৎপাদনে সালফারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেজন্য সিঙ্গল সুপার ফসফেট যাতে ১২ শতাংশ সালফার রয়েছে, তা প্রয়োগ করা যেতে পারে জমিতে। তাছাড়া পাটের ভালো তন্তু পেতে ফসল ১২০ দিনের মাথায় কেটে নিতে হবে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জীবচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, মূলত দু’রকমের পাটের চাষ হয়ে থাকে। মিঠা পাট ও তিতা পাট। মিঠা পাটের চাষ বেশি হয়। এই পাটের ফলনও বেশি। জেআরও ৫২৪ (নবীন) জাতটি ভালো। এছাড়াও বৈশাখী, সূর্য, শক্তি, বাসুদেব প্রভৃতি জাত রয়েছে। সংশিত বীজ ব্যবহার করতে হবে। জেআরও ২০৪, জেআরও ২৬৬ জাতগুলিও ভালো। এস ১৯ জাতটি জনপ্রিয়। এই জাতের কাণ্ড লালচে রঙের এবং একটু চকচকে হয়। এতে রোগপোকার আক্রমণ তুলনামূলক কম হয়। ফলনও ভালো। মিঠা পাটের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি বীজ লাগে ৫ কেজি। তিতা পাটের ক্ষেত্রে এক হেক্টর জমিতে চাষের জন্য বীজ দরকার ৭ কেজি। প্রতি কেজি বীজের জন্য কার্বেন্ডাজিম কিংবা ম্যানকোজেব আড়াই গ্রাম মাত্রায় দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। সারিতে পাট বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২৫ সেমি। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৭ সেমি। প্রতি বর্গমিটারে ৫৫টি গাছ থাকলে ভালো। মার্চ-এপ্রিলে পাট বুনতে হবে। আগাম বুনলে ছোট গাছেই শাখা-প্রশাখা চলে আসবে। এবং ফুল এসে যাবে। তাতে ফলন ভালো হবে না। আবার নাবিতে অর্থাৎ দেরি করে পাট বুনলে গাছ দীর্ঘ হওয়ার আগে শাখা- প্রশাখা ও ফুল এসে যাবে গাছে। তাতেও আশাপ্রদ ফলন পাওয়া যাবে না। ফলে সঠিক সময়েই পাট বুনতে হবে।
পাটের বীজ আকারে ছোট। সেকারণে জমি খুব ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। আড়াআড়িভাবে দুটি চাষ দেওয়া জরুরি। চাষ দেওয়ার পর জমি ভালোভাবে সমতল করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে হওয়া দরকার। পাট চাষের মূল সার হিসেবে হেক্টরে ৮-১০ কুইন্টাল জৈব সার দিতে হবে। এ ছাড়া নাইট্রোজেন ৬০ কেজি, ফসফরাস ৩০ কেজি, পটাশ ৩০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় পুরো নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস ও পটাশ অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। মাটি শুকনো থাকলে একটা সেচ দিয়ে নিয়ে মাটিতে জো আসার পর পাটবীজ বুনতে হবে। তবে বীজ বোনার পরই জমিতে জল দেওয়া যাবে না। এতে আগাছার দাপটের আশঙ্কা বেড়ে যায়। চার বের হতে সাত থেকে দশদিন সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে একবার আগাছা দমন করা যেতে পারে। এই কাজের সময় মাটি একটু খুড়ে দিতে পারলে ভালো। যাতে জমিতে বায়ু চলাচল ভালো হয়। পাট লাগানোর ১৫ দিন পর প্রয়োজনমতো একবার সেচ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার পর বৃষ্টির মরশুম চলে এলে আর সেচের দরকার পড়ে না।
সহকারি কৃষি অধিকর্তা (তন্তু ফসল) রামপ্রসাদ ঘোষ জানিয়েছেন, কৃত্রিম তন্তুর সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা, কাঁচাপাট উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি (যেহেতু পাটচাষ মূলত শ্রমিক নির্ভর এবং চাষের খরচের ৬০-৭০ শতাংশ শ্রমিকের পিছনে চলে যায়), পাটের বাজার দরের অনিশ্চয়তা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে পাট পচানোর সমস্যা (পাট পচানোর সময় বৃষ্টি না হলে সমস্যা বাড়ে), পাটতন্তুর বিকল্প ব্যবহার বৃদ্ধি না পাওয়া প্রভৃতি কারণে পাটচাষে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা কাটাতে পাটচাষে সঠিক প্রযুক্তির প্রয়োগ দরকার। পাটের বীজ মূলত বাইরে থেকে আসে। ফলে সবসময় তার গুণগতমান ঠিক থাকে না। ফলে সমস্যা দেখা দেয় চাষে। তা ছাড়া বহুল প্রচলিত জাতটি অনেক পুরনো। সেকারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। সেকারণে ভালো উৎপাদনের লক্ষ্যে উন্নত জাতের খোঁজ করতে হবে কৃষকদের।