উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জীবাণুসার কেনার সময় কয়েকটি বিষয় কৃষককে দেখে নিতে হবে, সেগুলি হল-কোন ফসলের ক্ষেত্রে সেটি প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। জীবাণুসারটি তৈরির তারিখ, কতদিন তার কার্যকারিতা থাকবে এবং কীভাবে সেটি ব্যবহার করতে হবে। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাইজোবিয়াম জীবাণুসার ব্যবহার করে যদি থাইরাম বা পারদঘটিত কোনও রাসায়নিক দিয়ে বীজ শোধন করা হয়, তা হলে রাইজোবিয়াম জীবাণু মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাইজোবিয়াম প্রয়োগের মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে।
তবে কার্বেন্ডাজিম বা ম্যানকোজেব ব্যবহারে রাইজোবিয়ামের উপর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়ে না। দানা জাতীয় কীটনাশকের মধ্যে ফোরেট ১০জি রাইজোবিয়ামের ক্ষতি করলেও কার্বোফুরান ৩ জি ব্যবহারে রাইজোবিয়ামের কোনও ক্ষতি হয় না। অ্যাজোটোব্যাক্টর জীবাণুসার ব্যবহারে গাছ অনেক বেশি নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে পারে। অ্যাজোটোব্যাক্টর বিভিন্ন উপকারি হরমোন ও উৎসেচক ক্ষরণের মাধ্যমে ফসলের বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে সহায়তা করে। অ্যাজোটোব্যাক্টর বিভিন্ন ছত্রাকনাশক কিংবা ব্যাকটেরিয়া নাশক ক্ষরণ করে গাছকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। অ্যাজোটোব্যাক্টর ব্যবহারে ব্যবহারে গমে ১৫ শতাংশ, ভুট্টায় ১৯ শতাংশ, টম্যাটোতে ১৫ শতাংশ, লঙ্কায় ৬ শতাংশ, ধানে ১৪ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি।
স্যাঁতসেঁতে জমিতে অ্যাজোটোব্যাক্টরের কার্যকারিতা বেশি। কিন্তু বদ্ধ জলায় কার্যকারিতা কম। রাসায়নিক নাইট্রোজেনের খুব বেশি উপস্থিতি থাকলে অ্যাজোটোব্যাক্টরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কার্বেন্ডাজিম, ম্যানকোজেব, বেনোমিল, সালফার প্রয়োগে অ্যাজোটোব্যাক্টরের ক্ষতি হয় না। তবে কীটনাশকের মধ্যে মিথাইল, প্যারাথিয়ন, ম্যালাথিয়ন, ফসফামিডন প্রয়োগ করলে অ্যাজোটোব্যাক্টরের কার্যকারিতা নষ্ট হয়। কার্বোফুরান, মনোক্রোটোফস ব্যবহারে উদ্দীপিত হয় অ্যাজোটোব্যাক্টর। ফোরেট, কার্বারিল প্রয়োগ করলে প্রাথমিকভাবে অ্যাজোটোব্যাক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যাজোটোব্যাক্টর দ্বারা ওই রাসায়নিক নিস্ক্রিয় হয়ে যায়।
অ্যাজোস্পাইরিলাম জীবাণুসার ব্যবহারের ফলে জমিতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ২৫ কেজি নাইট্রোজেন সঞ্চিত হয়। এই জীবাণুসার উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। অ্যাজোস্পাইরিলাম জীবাণুসার প্রয়োগে গমে ৬ শতাংশ, ধানে ১৭ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে দাবি কৃষি বিশেষজ্ঞদের। মাটির পিএইচ ৬-৭.৫ এর মধ্যে থাকলে ওই জীবাণুসার ভালো কাজ করে। তবে জমিতে বেশি সময় ধরে জল জমে থাকলে অ্যাজোস্পাইরিলামের কার্যকারিতা কমে যায়। সালফার, ম্যানকোজেব, ক্যাপটান, কার্বেন্ডাজিম, বেনোমিল প্রভৃতি সঠিকমাত্রায় প্রয়োগ করলে এই জীবাণুসারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কার্বোক্সিন, থাইরাম প্রয়োগ করলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়।
পাশাপাশি কুইনলফস, ফসফামিডন, ফেনাথিয়ন প্রভৃতি কীটনাশক অ্যাজোস্পাইরিলামের ক্ষতি করে। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যাজোটোব্যাক্টর মূলত বেলে বা বেলে-দোঁয়াশ মাটি, যেখানে জলধারণ ক্ষমতা কম, সেখানে ভালো কাজ করে। কাদামাটি, জলধারণ ক্ষমতা বেশি কিন্তু আবার জল নিস্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে, এমন জমিতে অ্যাজোস্পাইরিলাম ভালো কাজ করে। যেখানে মাটির অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না আবার জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে অ্যাজোটোব্যাক্টর ও অ্যাজোস্পাইরিলাম ৫০: ৫০ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বীজ শোধনের জন্য প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ২০ গ্রাম জীবাণুসার ব্যবহার করা যায়। ২০০ গ্রাম জীবাণুসার ৪০০ মিলি জলে গুনতে হবে। তার পর ১০ কেজি বীজে তা মাখাতে হবে। এর পর ওই বীজ ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। চারা শোধনের জন্য ১ কেজি জীবাণুসার ১০ লিটার জলে গুলতে হবে। তার পর ওই দ্রবণে চারার শিকড় আধঘণ্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। একর প্রতি ৬ কেজি অ্যাজোটোব্যাক্টর বা অ্যাজোস্পাইরিলাম জীবাণুসার ১০০ কেজি জৈবসারের সঙ্গে মিশিয়ে সেচ দেওয়ার আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারাগাছের ক্ষেত্রে গাছপ্রতি ২৫ গ্রাম জীবাণুসার ৫০০গ্রাম জৈবসারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। আতমা প্রকল্পের মালদহের কৃষি আধিকারিক ঋষিকৃষ্ণ দে জানিয়েছেন, চাষের জমিতে জৈব বস্তুর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে জমিতে উপকারি জীবাণুর সংখ্যা কমছে। স্বাভাবিকভাবেই কৃষিজমিতে জীবাণুসার প্রয়োগ জরুরি। ভেজা জৈবসারের সঙ্গে জীবাণুসার মিশিয়ে জমিতে দেওয়া যেতে পারে। ভাতের ফ্যানের সঙ্গে জীবাণুসার মিশিয়ে বীজ শোধন করতে পারেন কৃষক। তবে জীবাণুসার প্রয়োগের তাৎক্ষণিক আগে ও পরে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে না।