গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
বিরজু মহারাজের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। শোকবার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হল। ভারতীয় সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক জগতে সৃষ্টি হল এক গভীর শূন্যতা। সারা বিশ্বের কাছে কত্থককে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। তাঁর পরিবারের প্রতি রইল আমার সমবেদনা।’ শোকপ্রকাশ করেছেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
বিরজু মহারাজের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। বিরজু মহারাজের মৃত্যুতে নৃত্যজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।’
ছোটবেলা থেকেই শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে গভীর যোগ ছিল বিরজু মহারাজের। বাবা অচ্চন মহারাজের কাছ থেকে কত্থকের তালিম নেওয়া শুরু করেন তিনি। তবে, অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। তাঁর দুই কাকা শম্ভু মহারাজ ও লচ্চু মহারাজ ছিলেন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী। বহু ছবিতে কোরিগ্রাফারের কাজ করেছেন বিরজু মহারাজ। সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে দু’টি নাচের দৃশ্য কোরিওগ্রাফ করেন তিনি। দীর্ঘ শিল্পী জীবনে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— পদ্মবিভূষণ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, কালিদাস সম্মান। সেরা কোরিগ্রাফার হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার ও ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। দিল্লিতে রয়েছে তাঁর নিজের তৈরি কত্থক শিক্ষাকেন্দ্র— ‘কলাশ্রম’।
বিরজু মহারাজ ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। পরে তাঁর কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। গত মাস থেকে ডায়ালিসিসও শুরু হয়। রবিবার রাতে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এই বর্ষীয়ান শিল্পীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন, এমনটাই জানিয়েছেন প্রয়াত শিল্পীর নাতনি রাগিণী।
এই প্রথিতযশা শিল্পীর প্রয়াণে সাংস্কৃতিক জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকপ্রকাশ করে বর্ষীয়ান অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘গত মাসের ১৪ তারিখ আমার জন্মদিন উপলক্ষে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে বিরজু মহারাজ এসেছিলেন। দিল্লির ওই ঠান্ডা উপেক্ষা করে যে, উনি আসতে পারবেন, আমি ভাবতেই পারিনি। সেদিন ওঁর সঙ্গে অনেক গল্প হয়েছিল। উনি আমাকে ক্লাসিক্যাল গানও শুনিয়েছিলেন। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’ শোকপ্রকাশ করেছেন মাধুরী দীক্ষিত, কমল হাসান, হেমা মালিনী, অনুষ্কা শর্মা, আলিয়া ভাট, স্বরা ভাস্কর, জাহ্নবী কাপুর, অনন্যা পাণ্ডে প্রমুখ। ‘দেবদাস’ ছবিতে মাধুরী ও ‘কলঙ্ক’ ছবিতে আলিয়া এই প্রথিতযশা শিল্পীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন নাচের তালিম। বর্ষীয়ান কত্থক শিল্পী সুস্মিতা মিশ্র তাঁর স্মৃতিচারণায় বললেন, ‘মহারাজজি নেই! নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার সঙ্গে ওঁর দীর্ঘদিনের পরিচয়। অত বড় একজন শিল্পী, কিন্তু আতিথ্যে কখনও ত্রুটি রাখতেন না। উনি ছিলেন লখনউ ঘরানার শিল্পী। আর আমার ছিল জয়পুর ঘরানা। তা সত্ত্বেও ওঁর সঙ্গে একটা আলাদা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।’