পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
গ্রাম বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ বরাবরই শহুরে রাজনীতির থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। রাজচন্দ্রপুরের রাজনৈতিক হাওয়া আগামী দিনে কোন দিকে বইবে তা বুঝতে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম এক্কেবারে সেই গ্রামে। তবে, সেই পৌঁছনোটা মোটেও সহজ ছিল না। বোলপুরের কঙ্কালীতলা মন্দির থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার ভিতরে বিরকিচা। সেখানেই গড়ে উঠেছে গল্পের ‘রাজচন্দ্রপুর’। আসলে এই গ্রামটি পরিচালক রাজা চন্দের নতুন ছবি ‘আম্রপালি’র কাল্পনিক গ্রাম। দু’পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধূ ধূ প্রান্তরের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পিচঢালা রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটে চলছিল রাজচন্দ্রপুর অর্থাৎ বিরকিচার উদ্দেশ্যে। দুপুরের চড়া রোদে জনপ্রাণীহীন পথ একসময় অন্তহীন ঠেকছিল। অবশেষে পড়ন্ত বেলায় গাড়ি থামল কাল্পনিক রাজচন্দ্রপুরে। খেতের আলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এল রাক্ষরেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণ। দিনের আলো দ্রুত পড়ছিল। তাই পরিচালক সহ গোটা ইউনিট তখন শট সারতে ব্যস্ত। মন্দিরের পুরোহিতের (বিশ্বনাথ বসু) সঙ্গে অয়নের (বনি সেনগুপ্ত) কথোপকথনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন বনি সেনগুপ্ত, সোমরাজ মাইতি, আয়ুষী তালুকদার, বিশ্বনাথ বসু, সমীর সেনগুপ্ত। খানিক দূরে তখন পায়েল (আয়ুষী) আর কবীরকে (সোমরাজ) নিয়ে আরও একটি দৃশ্য আলাদা করে শ্যুট হল। সিন শেষ হতেই পরিচালক রাজা চন্দ বললেন, ‘পায়েল আর অয়ন হরিহর আত্মা। তাদের মাঝে আসে কবীর। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কবীরের রাজনৈতিক উত্থান, সেই সঙ্গে এই তিনজনের সম্পর্কের সমীকরণই ছবির মূল বিষয়।’
আসলে রাজনীতির মোড়কে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প বলবেন রাজা। শটের ফাঁকে বিশ্বনাথ বসু বললেন, ‘পরিচালক আমাকে বলেছিলেন ছবিটা একটা রাজনৈতিক প্রেমের গল্প। শুনে অবাক হই। কাজটা করতে গিয়ে দেখলাম পরিচালক ঠিকই বলেছেন।’ বনির রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে বেশ টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। অন্যান্য অনেক তারকার মতো বনিও এখন রাজনীতি থেকে সচেতনভাবে দূরত্ব বজায় রাখছেন। শোনা যাচ্ছে, তাঁর রাজনীতিকে বিদায় জানানো এখন সময়ের অপেক্ষা। এ প্রসঙ্গে নিজেই বললেন, ‘এখনও কিছু সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চাই। কেরিয়ারে মন দেব। হাতে অনেক কাজ। সেগুলো ঠিকঠাক শেষ করব।’
তবে রিয়েল লাইফে তিনি যতই রাজনীতি থেকে দূরে থাকুন না কেন রিল লাইফে রাজনীতি যে তাকে ছাড়ছে না, তার প্রমাণ ‘আম্রপালি’। ‘মাঝখানে বেশ কিছু সিরিয়াস ছবিতে অভিনয় করলাম। সেখান থেকে সরে এসে এখানে একটু অন্যভাবে হালকা চালে চরিত্রটা করার চেষ্টা করছি। সঙ্গে রাজনীতি রয়েছে। আগের করা চরিত্রগুলোর সঙ্গে কোনও মিল নেই অয়নের। তাই টাইপ কাস্টের ভয় নেই,’ বলছিলেন বনি।
এই ছবিতে রাজনীতির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে সোমরাজ অভিনীত চরিত্রটি। তিনি বলছিলেন, ‘এই গল্পটা আমি ২০১৯ সালে শুনি। তারপর যখন ছবিটা শুরু করলাম, তখন আমার রেফারেন্স পয়েন্ট ছিল রাজনীতি ছবির রণবীর কাপুর। চরিত্রটা খুবই বাস্তবের কাছাকাছি। আমি নিজের মতো করার চেষ্টা করছি।’ নায়িকা পায়েলকে নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় কবীর ও অয়নের মধ্যে। আয়ুষী বললেন, ‘পায়েলের সঙ্গে আজকের সময়ের যে কোনও মেয়ে রিলেট করতে পারবে। খুবই কনফিডেন্ট একটা চরিত্র। প্রেম, রাজনীতির মতো পায়েলের জীবনের জার্নিটাও ছবির আরেকটি দিক।’ আয়ুষীর সঙ্গে কথা শেষ হতে হতেই দিনের আলো পড়ে গেল। চারিদিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। অগত্যা রাজচন্দ্রপুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে বাবা রাক্ষরেশ্বরের হাতে সমর্পণ করে আমরা রওনা দিলাম কলকাতার পথে।
ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায়