বছর দেড়েক পর আবার সিনেমা হলে আসছেন সলমন খান। ‘অন্তিম— দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ মুক্তির আগে মুম্বইতে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন শামা ভগত।

‘অন্তিম’ তো মারাঠি ছবি ‘মুলশি প্যাটার্ন’-এর অনুসরণে তৈরি। হঠাৎ রিমেকে রাজি হলেন কেন?
দেখুন, আমি একজন চিত্রনাট্যকারের ছেলে বলেই গল্পের প্লট নিয়ে একটা ধারণা থাকে আমার। প্রথমে আয়ুষের চরিত্রটা পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখলাম, পুলিসের চরিত্রটা আরও বেশি ইন্টারেস্টিং। মূল ছবিতে পুলিসের মাত্র কয়েকটা দৃশ্য ছিল। আমরা এখানে সেটাকে আরও বড় করেছি। পাঞ্জাব-হরিয়ানাতে শ্যুট করেছি। চরিত্রটা কৃষকের। তার সঙ্গে গল্পে আন্ডারওয়ার্ল্ডকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই একদম রিমেক বলতে যা বোঝায়, এটা তা নয়। 

ছবিতে আপনি এক সর্দার পুলিসের চরিত্রে। প্রস্তুতি কীরকম ছিল?
পাঞ্জাবি সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখেই কাজটা করতে হয়েছে। সর্দার মানেই  তো রাজাসুলভ একটা ব্যাপার। এই যেমন ‘জঞ্জির’ ছবিতে পাঠান শের খানের চরিত্রে প্রাণ সাহাব অভিনয় করে জমিয়ে দিয়েছিলেন। আমার চরিত্রটা যেহেতু মুম্বইতে থাকে, তাই ওর মধ্যে একই সঙ্গে পাঞ্জাব ও মারাঠি ছোঁয়া রেখেছি। 

আপনার বাবাও (সেলিম খান) কিন্তু এক সময় বিখ্যাত সব পুলিসের চরিত্র লিখেছিলেন।
(হেসে) আমার ঠাকুরদা ছিলেন পুলিসের ডিআইজি। এই ছবিতে আমার চরিত্রটা অনেক বেশি পরিণত এবং শান্ত। বলা যেতে পারে ‘গর্ব’ ছবিতে আমার চরিত্রটার সঙ্গে এই ছবির রাজবীরের (সলমন অভিনীত চরিত্র) অনেকটা মিল রয়েছে। 

আপনার বাবা এই ছবিটা দেখার পর কী বলেছিলেন?
বন্ধুদের সঙ্গে ছবিটার প্রথম কপি বাবা দেখেছিলেন এবং ওঁর পছন্দ হয়েছিল। ওঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এটা ভেবে অবাক হয়েছিলেন যে, আমি হঠাৎ এরকম একটা ছবিতে কেন অভিনয় করলাম। আসলে কী জানেন তো আপনার পরিবারের সমর্থন পাওয়াটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। বাবা ছবিটা দেখে ওঁর মূল্যবান মতামত জানিয়েছিলেন। তারপর আমরা সেইমতো বদলগুলো করেছিলাম। 

শুনেছি, মূল চিত্রনাট্যে তো আপনার একজন প্রেমিকাও ছিল।
হ্যাঁ। নায়িকা স্থির হয়ে গিয়েছিল। একটা গানও শ্যুট করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখা গেল প্রেমের বিষয়টায় চরিত্রটা যেন ঘেঁটে যাচ্ছে। তাই শেষপর্যন্ত এডিটে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এই ছবিতে আমি সিঙ্গল (হাসি)। তবে, পরে অন্য কোনও ছবিতে আমরা ওই গানটা ব্যবহার করার চেষ্টা করব। 

এতদিন সিনেমা হল বন্ধ ছিল। ‘সূর্যবংশী’র ব্যবসা আশার আলো দেখাচ্ছে। এই ছবি থেকে আপনার প্রত্যাশা কীরকম?
আমাদের দেশে পরিবারের সঙ্গে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখাটা একটা বড় বিনোদন। হ্যাঁ, অনেকেই বলছেন যে ওটিটি এখন প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু বড়পর্দার একটা আলাদা মজা রয়েছে। একটা খারাপ ছবি হয়তো দর্শকদের পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু তাঁরা যে আর সিনেমা হলেই যাবেন না এটা হতে পারে না!     

কিন্তু এখন সিনেমার টিকিটের দাম তো সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই নাগালের বাইরে।
সিঙ্গল স্ক্রিনে তো বাড়েনি। দু’বছর ধরে বন্ধ ছিল বলে মাল্টিপ্লেক্সগুলো একটু টিকিটের দাম বাড়িয়েছে। ‘জয় হো’ ছবির জন্য একটা সময় আমরা টিকিটের দাম কমাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আবার অনেকে পছন্দ করেননি। 

এক সময় মহেশ মঞ্জেরেকরের সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয় করেছেন। ওঁর পরিচালনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কীরকম?
খুবই ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে পছন্দ করেন। ফ্লোরে মানুষের অভিজ্ঞতার দাম দিতে জানেন। 

লকডাউনে অবসর বিনোদনের জন্য ছবি আঁকাকে বেছে নিয়েছিলেন। নিজের আঁকা ছবি নিয়ে কোনও প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে?
সিঙ্গাপুর ও পরে আবু ধাবিতে একটা প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে। মহামারীর সময় ৩৫-৩৬টার মতো ছবি এঁকেছিলাম। একটা মজার বিষয় বলি। আমার মা প্রায় পনেরো বছর আগে একটা ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেটা অসমাপ্ত ছিল। সম্প্রতি সেই ছবিটা মা শেষ করেছেন। 

শুনেছি, আপনার বোন আর্পিতা নাকি একইসঙ্গে অনেক কাজ করছেন।
বাচ্চাদের দেখাশোনা করার পাশাপাশি ও পুরো পরিবারের দেখভালের জন্যও সময় বের করে। আমার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন্য আর কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে ও আমাকে অনেক টিপস দেয়। 

আয়ুষও তো আপনার পরিবারের সঙ্গে বেশ মিলেমিশে গিয়েছেন। 
অবশ্যই। ও শিক্ষিত ছেলে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছে। সব বিষয়েই ওর ভালো জ্ঞান রয়েছে।

আপনার কখনও পরিচালনায় আসতে ইচ্ছে করে না?
না। আমি নিজে কখনও পরিচালকের চিন্তাধারার মধ্যে নাক গলাই না। আমার একটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই ছবিটা নিয়ে হয়তো পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করি। মহেশও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন। আমার মতামতকে উনি বেশ গুরুত্বও দিয়েছেন।      

এই যে বলা হয় ‘স্টারডম’ নাকি শেষ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে আপনার কী মত?
দেখুন, গত চার প্রজন্ম ধরেই কথাটা চলে আসছে যে তারকাদের নাকি যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। সুপারস্টার থাকবেই। আমরা চলে যাব, অন্য কেউ আসবে। কিন্তু এই স্টারডম ব্যাপারটা অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করে। ছবি নির্বাচন, সেই অভিনেতা মানুষ হিসেবে ঠিক কেমন—সব মিলিয়ে একটা বড় প্যাকেজ। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, আমরা নতুন প্রজন্মকে খুব সহজেই জায়গাটা ছেড়ে দেব। আমরা যেমন পঞ্চাশ পেরিয়েও কঠোর পরিশ্রম করছি, স্টারডম উপভোগ করতে হলে ওদেরও পরিশ্রম করতে হবে।   

‘রাধে’ পাইরেসির মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষ দেখেছেন। এবারে পাইরেসি ঠেকাতে আপনারা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন নাকি?
এটা খুবই দুঃখের বিষয়। মাত্র আড়াইশো টাকা খরচ করে আরও বেশি সংখ্যক দর্শক ছবিটা দেখতেই পারতেন। এবারেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। দেখা যাক, কতটা আটকাতে পারি।