বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
‘হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিসম’ অর্থাৎ শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেশি হওয়ার দরুন একই কারণে ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমস থেকে বাদ পড়েন ভারতের বিখ্যাত স্প্রিন্টার দ্যুতি চাঁদ। যদিও ছবিতে কোথাও দ্যুতির উল্লেখ নেই, তবু গোটা ছবি জুড়ে রশ্মিকে যে অবমাননা ও আঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা দেখে দর্শকের সোনাজয়ী ওই ভারতীয় স্প্রিন্টারের কথা মনে পড়তে বাধ্য। দ্যুতি আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন যথেষ্ট প্রমাণ দিতে না পারায় তাঁর ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। নন্দা পেরিয়াস্বামীর লেখা গল্প ও আকর্ষ খুরানা পরিচালিত এই ছবির গল্পও প্রায় একই পথে এগয়। দ্যুতি চাঁদ পরে ‘এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের’ সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, সেইখানে এই ছবির গল্প ‘সিনেম্যাটিক লিবার্টির’ মোড়কে খানিক আলাদা। অনিরুদ্ধ গুহ এবং কণিকা ধীলনের লেখা চিত্রনাট্যে রশ্মি প্রেমে পড়ে ক্যাপ্টেন গগন ঠাকুরের। ভারতের অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রের মতো, খেলাধুলোর জগৎটাও পিতৃতন্ত্রের ভারে ন্যুব্জ। তাই মহিলা খেলোয়াড়দের এই অপমানজনক ‘লিঙ্গ পরীক্ষা’র মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকলে তা খেলাধুলোয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। মানুষের লিঙ্গ নির্ণয় বা পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে বলিউডে এর আগে সেরকম স্পোর্টস ড্রামা তৈরি হয়নি। ‘রশ্মি রকেট’-এর সার্থকতা এখানেই। যদিও সমাজে লিঙ্গ চর্চা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এই ছবি এড়িয়ে গিয়েছে, তবুও এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছে, যা প্রাসঙ্গিক। রশ্মির চরিত্রে তাপসী পান্নুর অভিনয় এই ছবির মূল আকর্ষণ। জাতীয় দৌড়বিদের চরিত্র তিনি তাঁর দৌড়ে ও অভিব্যক্তিতে যথাসাধ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। দল থেকে বাদ পড়ার পর বেশ কিছু সদস্যের মুখে রশ্মি আসলে ছেলে সেই কথা শোনার পর তাঁর মুখে যে যন্ত্রণার রেশ ফুটে ওঠে, তা আন্তরিক। রশ্মি হয়ে ওঠার সফরে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন গগন ঠাকুরের চরিত্রে প্রিয়াংশু পেনিউলি ও ভানুবেনের চরিত্রে সুপ্রিয়া পাঠক। স্পোর্টস ড্রামার সঙ্গে এই ছবি খানিক কোর্টরুম ড্রামাও বটে। যে উকিল মামলা লড়ে রশ্মিকে ফের রানিং ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনে সেই ঈশিত মেহতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিনয় বেশ কিছু জায়গায় কিছুটা চড়া দাগের। এমনকী ছবির এক জায়গায় আদালতের বিচারকও (সুপ্রিয়া পিলগাওকর) তাকে বলে ওঠে, ‘আপ হিন্দি ফিল্ম বহত দেখতে হ্যায় কেয়া? আসলিয়ত মে কোর্টরুম মে ইতনা হাই ড্রামা নেহি হোতা।’ অমিত ত্রিবেদীর সুর ও কৌসর মুনীরের লেখা ‘রণ মা কছ’ ছাড়া আর কোনও গানের বিশেষ প্রয়োজন এই ছবিতে ছিল না। ছবির চিত্রনাট্য বেশ কিছু জায়গায় দুর্বল হলেও নির্দেশনা দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম। এই গল্প এমন কিছু বিষয়ের দিকে দর্শকের নজর নিয়ে যায় যা নিয়ে মূলধারার মাধ্যমে আরও বেশি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।