অভিনন্দন দত্ত : ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। এক মর্মান্তিক রাত চাক্ষুষ করছে অমৃতসর শহর। জালিয়ানওয়ালাবাগে শয়ে শয়ে মৃতদেহের স্তূপ। তার মাঝে ক্লান্ত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ভিকি কৌশল ওরফে পর্দার উধম সিং চিৎকার করছে,‘কোই জিন্দা হ্যায়?’ রীতিমতো রোমহর্ষক দৃশ্য। উধম সিং জালিয়ানওয়ালাবাগের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ২১ বছর অপেক্ষা করেছিলেন। পাঞ্জাবের তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ারকে লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে জনসমক্ষে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর বায়োপিক ‘সর্দার উধম’ মুক্তি পেয়েছে ওটিটিতে। পরিচালক সুজিত সরকার বরাবরই এই ছবিকে তাঁর ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সত্যি বলতে সুজিত ও তাঁর টিম পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, বলিউড বায়োপিক ঘরানাকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভগৎ সিংয়ের তুলনায় উধম সিং অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত। উধম সম্পর্কে খুব বেশি তথ্যও পাওয়া যায় না। ছবিতে স্বয়ং উধমই তাঁর পদক্ষেপকে ইতিহাসের পাতায় ‘ফুটনোট’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। এহেন পর্দার প্রায় আড়ালে থাকা একটা চরিত্রের দৃঢ়তা, দেশভক্তি ও সর্বোপরি মনস্তাত্ত্বিক স্তরগুলোকে ছবিতে তুলে ধরা ছিল সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে সাহায্য করেছে শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও রীতেশ শাহের চিত্রনাট্য। ‘উরি’র জাতীয় পুরস্কারের কথা মাথায় রেখেই বলছি, নিঃসন্দেহে এই ছবিতে ভিকি কৌশল এখনও পর্যন্ত কেরিয়ারে তাঁর সেরা অভিনয়টা করে ফেললেন। বাকিটা না হয় ছবির জন্য তোলা থাক। ছবিতে সেই অর্থে পরিচিত মুখ নেই। কিন্তু তা বলে পার্শ্বচরিত্রদের কখনওই অযৌক্তিক মনে হয়নি। ডায়ারের চরিত্রে শন স্কট বা ব্রিটিশ গোয়েন্দা সোয়েনের চরিত্রে স্টিফেন হোগান ছবির সঙ্গে মানানসই। ভগত সিংয়ের চরিত্রে অমল পরাশর মন্দ নন। অন্যদিকে ক্যামিও চরিত্রে স্বল্প পরিসরে ভালো লাগে বনিতা সান্ধুকে।
বলিউডে বায়োপিক মানেই, নায়কের দীর্ঘ বক্তৃতা বা গাদা গুচ্ছের গান। এই ছবিতে তার কোনওটাই নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালকে পর্দায় তুলে ধরা সহজ কাজ নয়। সেখানে এই ছবির প্রোডাকশন ও কস্টিউম ডিজাইন প্রশংসনীয়। অভীক মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি ছবিটিকে আন্তর্জাতিক পিরিয়ড ফিল্মের সমতুল্য করে তুলেছে। শান্তনু মৈত্রের আবহ সঙ্গীতের রেশ দীর্ঘক্ষণ মনে জায়গা করে নেয়। তবে, ছবির গতি অত্যন্ত ধীর। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড দেখাতে ছবির শেষের দিকের অনেকটা অংশই ব্যবহার করা হয়েছে যা দর্শকদের একাংশের বিরক্তির কারণ হতে পারে। ব্যস, মন্দের মধ্যে এটুকুই। শেষে একটাই খেদ। গত বছর করোনা আবহে ‘গুলাবো সিতাবো’ ওটিটিতে রিলিজ করেছিলেন সুজিত। কিন্তু এবারেও কেন আবার একই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? সিনেমা হলের দরজা তো আবার খুলেছে। এই ছবির আসল মজা যে বড়পর্দায়।