সোহম কর: একটি রাজনৈতিক দলের স্লোগান ‘খেলা হবে’ এবারের হাইভোল্টেজ বিধানসভা ভোটে রীতিমতো হিট। সেই স্লোগানকে মান্যতা দিতেই যেন টালিগঞ্জের সিনেমা পাড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে ‘খেলা’। এই দলবদলের মধ্যে আরও একটি ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। পরিবারের একজন বা ঘনিষ্ঠ বৃত্তের কেউ যদি কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন, তো সেই পরিবারেরই অন্য সদস্য যুক্ত হচ্ছেন তাদের বিরোধী শিবিরে। 
বুধবার সকালে অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায় তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর উত্তরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ভোটের বাজারে এবার তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। কে জানত কৌশানীর প্রচার শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই অভিনেত্রীর বয়ফ্রেন্ড বিজেপি’তে যোগ দেবেন। দিনকয়েক আগে শোনা গিয়েছিল বনি সেনগুপ্ত বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তখন অবশ্য এই খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বনি। তার ঠিক ৫ দিন পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে বনি বললেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে থেকেও আমি সেভাবে জায়গা পাচ্ছিলাম না, সম্মান পাচ্ছিলাম না। তাই বিজেপিতে যোগ দিলাম।’ মজার কথা হল, বনির মা পিয়া সেনগুপ্ত হবু বউমা কৌশানীর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন কিছুদিন আগেই। অর্থাত্ প্রেমিকা তৃণমূলের প্রার্থী, মা তৃণমূলের সদস্য আর ছেলে বিজেপির সদস্য। এ প্রসঙ্গে বনির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘আমাদের ভোটার আইডেন্টিটি আলাদা। তাই আলাদা দলের হয়ে কাজ করাটাও কোনও বড় খবর নয়।’ মা বা কৌশানীর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন বনি। অন্যদিকে, পিয়া বলেন, ‘দেখুন, এই মুহূর্তে আমি কলকাতার বাইরে। শুক্রবার শহরে ফিরব। বনির বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। ও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। এটা ওর সিদ্ধান্ত।’ এই প্রসঙ্গে কৌশানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রচারে ব্যস্ত থাকায় উত্তর দিতে পারেননি।
টলিউডের অন্দরে সম্পর্কে ভাঙন প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সম্পর্কের ভাঙন, তাও আবার টলিউডে? নৈব নৈব চ! এবার কি তাও হতে চলেছে। রাজনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন উঠছে, পরিবারের সদস্যরা যখন বিভিন্ন দলে যোগদান করছেন, সেটা কি তাঁদের ‘পার্সোনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’? অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এইসব সেলিব্রিটিরা বিভিন্ন দলে যোগ দিচ্ছেন। বনি-কৌশানীর অবস্থানও সেই মতকেই সমর্থন করছে। নুসরত জাহান ও নিখিল জৈনের সম্পর্কে চিড় ধরার পরেই অভিনেত্রীর সঙ্গে যশ দাশগুপ্তর অন্তরঙ্গতার কথা প্রকাশ্যে আসে। তারপরই দেখা যায় যশ চলে গেলেন বিজেপিতে। অন্যদিকে টলিউডে যাঁদের বন্ধুত্ব বহুল প্রচারিত যেমন, কাঞ্চন মল্লিক ও রুদ্রনীল ঘোষ। সেই দুই বন্ধুও এখন আলাদা দলে। সত্যিই কি মানুষের জন্য কাজ করতে চাইছেন এই সব অভিনেতা? নাকি তৈরি হচ্ছে অন্য সমীকরণ? বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘রাজনীতি বর্তমানের জন্য তবে সমীকরণ চিরকালীন।’ টলিউড কি উত্তর দেয় তা ভবিষ্যৎ বলবে।