কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শিরোনাম অর্থাৎ হেডলাইনস। এই হেডলাইনসকে ইচ্ছাকৃত আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা হলেই যত বিপত্তি। কারণ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশনই হল ‘হলুদ সাংবাদিকতা’। এর ফলে সংবাদ আর সংবাদ থাকে না, পৌঁছে যায় বিকৃতির পর্যায়ে। ছবির গল্পটিকে ফাঁদা হয়েছে ২০১১ সালের প্রেক্ষাপটে। টিভির পর্দায় লাদেন নিধনের খবর থেকে সময়কাল স্পষ্ট।
ওই সময় এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা অত্যন্ত সক্রিয়। যদিও গল্পকার দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায় ছবিতে স্পষ্ট করে ‘মাওবাদী’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। এক চ্যানেলের সাংবাদিক সুজিত (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) ‘সন্ত্রাসবাদী নেতা’ রণছোড়জির (এ নামটিও বেশ প্রতীকি। রণছোড় কৃষ্ণের আর এক নাম) গোপন সাক্ষাৎকার নিতে যায় জঙ্গলমহলে। তার সঙ্গে বিশেষ ফোটোগ্রাফার হিসাবে অভিন রায়কে (যিশু সেনগুপ্ত) পাঠায় চ্যানেল কর্তা রজত (অঞ্জন দত্ত)। কিন্তু সেই দিনই ওই নিষিদ্ধ সংগঠন একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। এর জেরে ভেস্তে যায় পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাৎকার। অ্যাসাইনমেন্ট ভেস্তে যাওয়ায় হাতে অঢেল সময় পেয়ে যায় ছবি তোলার নেশায় পাগল অভিন। কাছাকাছি একটি মন্দিরের ছবি তুলতে বেরিয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায় সে। এরপর সেই চ্যানেলের তরফে ব্রেকিং নিউজ দেখানো হয়— ওই নিষিদ্ধ সংগঠনের হাতেই সম্ভবত অপহৃত হয়েছে তাদের ফোটো জার্নালিস্ট। সত্যিই কি অভিন অপহৃত হয়েছে? অভিনের কি হল— এই নিয়েই এগিয়েছে থ্রিলার ঘরানার এই ছবি। এর সমান্তরালে রয়েছে অভিন ও তার লিভ-ইন-পার্টনার আনন্দীর (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) সম্পর্কের গল্প।
পরিচালক ইন্দ্রনীল ঘোষ তাঁর প্রথম ছবিতে সযত্নে রাজনৈতিক ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। তাই গল্পে একটি কাল্পনিক থ্রিলারের মোড়ক দেওয়া হয়েছে। ‘সংবাদ মূলত কাব্য, তাকে যেমন খুশি বদলে দেওয়া যায়’— এই মতটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একপেশে অবস্থান নিয়েছেন পরিচালক। হলুদ সাংবাদিকতা, টিআরপির জন্য ব্রেকিংয়ের ইদুর দৌড় হয়তো কোনও কোনও ক্ষেত্রে রয়েছে, একথা যেমন সত্যিই, তেমনই মিডিয়া মানেই শুধু এরকম, এটাও ঠিক কথা নয়। তাহলে সংবাদমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হতো না।
যিশু ও স্বস্তিকার অভিনয়ের দাপটে অভিন-আনন্দীর সম্পর্কের বুনোট দারুণভাবে ধরা পড়েছে। এই ছবি শাশ্বতর আরও একটা ভালো কাজ। চ্যানেল কর্তার চরিত্রে অঞ্জনকে যেমন মানিয়েছে, তেমনই লরির ড্রাইভারের চরিত্রে মিশে গিয়েছেন শান্তিলাল। অভিনয়ে জোর দেখিয়েছেন অঙ্কিতাও। ছোট চরিত্রে পাওয়া গেল অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদারকে।
শীর্ষ রায়ের ক্যামেরায় জঙ্গলমহলের বেশ কিছু ভালো ল্যান্ডস্কেপ ধরা পড়েছে। রাজানারায়ণ দেবের আবহসঙ্গীত অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। ‘হোক কলরব...’ গানটিও সান্ধ্য আড্ডার মেজাজের সঙ্গে মিশে যায়। সব মিলিয়ে উৎসবের মরশুমে হলে গিয়ে ‘শিরোনাম’ দেখলে খারাপ লাগবে না।